প্রবাসী ভাইয়ের লাশ আনার পথে লাশ হলেন আরো দুই ভাই

চৌদ্দগ্রামে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স ও লরির মধ্যে সংঘর্ষ ফটিকছড়ির ভূজপুরে শোকের ছায়া

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি | রবিবার , ৬ জুলাই, ২০২৫ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স ও লরির মধ্যে সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। নিহত দুইজন হলেন ফটিকছড়ি ভূজপুরের মো. বাবুল (৩৭) ও তার ফুফাতো ভাই ওসমান গণি (৩৫)। সৌদি আরবে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ হারানো মোহাম্মদ রুবেলের (২৭) মরদেহ ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রহণ করে নিজ গ্রাম ফটিকছড়িতে ফেরার পথে তাদের এ মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। গতকাল শনিবার বিকেল ৪টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাতিসা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুরো ফটিকছড়ি জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

স্থানীয় থানা পুলিশের বরাত দিয়ে বিডিনিউজ জানায়, এক স্বজনের লাশ নিয়ে ওসমান ও বাবুল ঢাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে চট্টগ্রামের গ্রামের বাড়ি ফটিকছড়ি যাচ্ছিলেন। বাতিসা এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সটি একটি লরির পেছনে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ওসমান গণি মারা যান। বাবুলকে প্রথমে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পথে বাবুল মিয়া মারা যান। এর মধ্যে অ্যাম্বুলেন্সের চালক আহত হলেও তিনি পালিয়ে যান বলে জানান মিয়াবাজার হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট সাকলাইন।

ভূজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান চৌধুরী শিপন দৈনিক আজাদীকে বলেন, এক ভাই সৌদি আরবে নির্যাতনে মারা গেল, সে ভাইয়ের লাশ আনতে গিয়ে অন্য ২ ভাইয়ের প্রাণ যাওয়ার ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এমন মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভূজপুর ইউনিয়নের তালুকদার পাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ রুবেল পরিবারের অভাব ঘোচাতে এবং স্বপ্ন পূরণের আশায় ২০২৪ সালে সৌদি আরব পাড়ি জমান। কিন্তু তার প্রবাস জীবন ছিল নিদারুণ কষ্টের। মালিকের অনুমতি ছাড়া একটি বার্গার খাওয়াকে কেন্দ্র করে তিনি নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। গুরুতর আহত রুবেল মদিনার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৭ জুলাই ২০২৪ তারিখে মারা যান। এরপর শুরু হয় দীর্ঘ এক বছরের আইনি লড়াই, এরপর তার নিথর দেহ দেশে ফিরছিল। পরিবারের একটি শোকের মধ্যেই আরও একটি দুঃসংবাদ নেমে আসে। নিহত ওসমান ভূজপুর ইউপির তালুকদার পাড়ার জয়নাল আবেদীনের ছেলে এবং বাবুল একই এলাকার ফুল মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন তাদের সাথে থাকা বশির সওদাগর। নিহত ওসমান গণির ফুফাতো ভাই মাসুদ তালুকদার বলেন, সকালে রুবেলের লাশ রিসিভ করার পর তাদের সাথে ফোনে কথা হয়েছে। বিকেলে হঠাৎ শুনি তাদের অ্যাম্বুলেন্সটি এক্সিডেন্ট করেছে এবং সাথে থাকা ফুফাতো ভাই ওসমান গণি ও তার ফুফাতো ভাই বাবুল মারা গেছে। লাশ এখনো কুমিল্লার মিয়া বাজার থানায় আছে। স্থানীয় কয়েকজন সেখানে গিয়েছে লাশ বুঝে নেয়ার জন্য। আমার আর কিছু বলার ভাষা নাই বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

জানতে চাইলে কুমিল্লা মিয়াবাজার হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট মো. সাকলাইন বলেন, অ্যাম্বুলেন্স ও লাশ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। আইন প্রক্রিয়া শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপবিত্র আশুরা আজ
পরবর্তী নিবন্ধ৬ জুলাই : বিক্ষোভে উত্তাল দেশ, বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি ঘোষণা