শত ফানুসের আলোয় আলোকিত আকাশ

প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপিত

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১১ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসাহ-উদ্দীপনায় চট্টগ্রামে উদযাপিত হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা। বৌদ্ধ ধর্ম মতে, মহামতি গৌতম বুদ্ধ নির্বাণ লাভের পর আষাঢ়ে পূর্ণিমা থেকে অশ্বিনী পূর্ণিমা তিথি পর্যন্ত তিন মাস বর্ষাবাস শেষে প্রবারণা পালন করেন। সেই থেকে বৌদ্ধধর্মীয় গুরুরা বর্ষাবাস শেষে দিনটি পালন করে আসছেন। এ উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হলো সন্ধ্যায় আকাশে রঙিন ফানুস উড়ানো।
প্রবারণা উপলক্ষে ভোরবেলা থেকে বিহারে পবিত্র ত্রিপিটক থেকে পবিত্র শ্লোক উচ্চারণের মাধ্যমে কর্মসূচির সূচনা হয়। ভিক্ষুদের উপবাস ভঙ্গ, গণপ্রার্থনা, সংঘদান, আলোচনা, পঞ্চশীলা, আস্থাশীলা ও প্রদীপ পূজার কর্মসূচি পালন করা হয়।
প্রবারণা উৎসবকে ঘিরে রোববার সন্ধ্যা হতেই শত শত ফানুসের আলোয় আলোকিত হয় চট্টগ্রামের আকাশ। নারী-পুরুষ, শিশুসহ সকল বয়সী মানুষ মেতে ওঠে প্রবারণার আনন্দে। এ সময় সাধারণ মানুষ আকাশপানে তাকিয়ে বর্ণিল সৌন্দর্য উপভোগ করে। সম্মিলিত প্রবারণা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে চট্টগ্রামে নন্দনকানন বৌদ্ধমন্দির প্রাঙ্গনে ফানুস উড়ানোর পাশাপাশি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। নন্দনকানন এবং কাতালগঞ্জের নবপন্ডিত বিহারসহ বিভিন্ন বৌদ্ধমন্দিরে নানা আয়োজনে শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উদ্‌যাপিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান কেন্দ্রস্থল ছিল নন্দনকানন বৌদ্ধ মন্দির প্রাঙ্গন। বিকালে বিশ্বশান্তি কামনায় ফানুস উত্তোলন, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়াও পাথরঘাটা জেতবন শান্তিকুঞ্জ বিহার, ইপিজেড সর্বজনীন বৌদ্ধবিহার ও মৈত্রী বনবিহার, চান্দগাঁও সর্বজনীন বৌদ্ধবিহার, মোগলটুলী শাক্যমুনি বৌদ্ধবিহার, বন্দর বৌদ্ধবিহারসহ প্রায় প্রতিটি বৌদ্ধবিহারে প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে সকাল থেকেই নানা আয়োজন করা হয়।
নগরের মোগলটুলী শ্মশানভূমি শাক্যমুনি বৌদ্ধবিহার আয়োজিত ফানুস উত্তোলন ও সদ্ধর্ম আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। এ সময় তিনি উপস্থিত ভক্তদের সঙ্গে প্রবারণা পূর্ণিমার শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
চট্টগ্রামের প্রায় সকল উপজেলায় প্রবারণার উৎসব হয়ে থাকলেও মহানগরীর নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারই মূল আকর্ষণ। সেখানে সবচেয়ে বেশি মানুষ সমবেত হন। এবারও প্রবারনা উৎসবে বিকাল পর থেকে নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহার চত্বর লোকে লোকারণ্যে হয়ে উঠে। সন্ধ্যার পর থেকে নগরীর চেরাগী মোড় থেকে শুরু করে নন্দনকানন বৌদ্ধ মন্দির এলাকা হয়ে ডিসিহিল, ঐদিকে এনায়েত বাজার মোড় ও লাভ লেইন মোড় পর্যন্ত শুধু মানুষ আর মানুষ। সন্ধ্যার পর থেকে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তরুণ-তরুনীসহ নানান বয়সী নারী-পুরুষ একে একে রঙ-বেঙগের ফানুস উড়ানো শুরু করেন। তখন সন্ধ্যার আকাশ ফানুসের রঙে রঙিন হয়ে উঠে। অনেক দূর চলে যাওয়ার পর এগুলোকে দেখায় তারার মতো। আকাশে অসংখ্য ফানুস দেখে উল্লাসে মেতে ওঠে শিশু-কিশোরসহ সকল বয়সী মানুষ। বিকালের পর থেকে উৎসবকে ঘিরে চারদিকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রেখেছে পুলিশ।
আমাদের হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, প্রবারণা উপলক্ষে উপজেলার আওতাধীন ১৫টি বৌদ্ধ বিহার/ মন্দিরে দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করা হয়।
রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি জানান, উপজেলার ১০৩টি বৌদ্ধ বিহারে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন করা হয়েছে। দিনব্যাপী নানা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যা থেকে ফানুস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবোয়ালখালীতে দুই অটোরিকশার সংঘর্ষে শিক্ষকের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধঅর্থনীতি ও ব্যাংকের সম্পর্ক ব্যাখ্যায় ৩ মার্কিনির নোবেল