প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিএনপি-জামায়াতসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বৈঠক

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ১৩ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ

নিজের হাতে থাকা ২৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল সোমবার সকাল সোয়া ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় এই বৈঠক হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারউজজামান যমুনায় প্রবেশ করেন। তিনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে সোয়া ১১টায় বের হয়ে যান। সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সেখানে উপস্থিত একজন। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বৈঠকের বিষয়ে বলেন, স্বচ্ছ জবাবদিহিতামূলক পরিবেশ যাতে থাকে, দেশের তরুণ সমাজ যে বিষয়গুলো সামনে নিয়ে এসেছেবিশেষ করে স্বচ্ছতা এবং সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করা। আর কাজগুলো যেন যত্ন সহকারে করা হয় এ বিষয়গুলোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপিজামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। গতকাল সোমবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত এসব বৈঠক হয়। বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন দলগুলোর নেতারা। তারা সরকারকে বিভিন্ন পরামর্শও দেন। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে সরকার পরিচালনা ও শৃঙ্খলা ফেরাতে দলগুলোর সার্বিক সহায়তা চান। বৈঠকে ১৫ আগস্ট শোক দিবস নিয়ে কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন বাহিনীকে সচল করার তাগিদ দেয়া হয়। কোনো হত্যাকারীর পুনর্বাসনের দায়িত্ব যাতে এই সরকার না নেয় সে বিষয়ে তাগিদ দেয়া হয়। পরবর্তী নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কারের তাগিদ দিয়ে দলগুলো বলেছেএজন্য যৌক্তিক সময় দিতে তারা রাজি। এ ছাড়া উপদেষ্টাদের অতিকথন থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান খান, মো. নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং ফরিদা আখতার। গতকাল বিকাল ৪টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। বিএনপির প্রতিনিধিদলটি বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে বের হয়। বিএনপির প্রতিনিধিদল যমুনায় থাকতেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল যমুনায় প্রবেশ করে। বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি। তবে নির্বাচনের যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তারা সরকারকে সময় দিয়েছেন। ঠিক একই কথা জানিয়েছে জামায়াতও। তারাও নির্বাচনের বিষয়ে এই সরকারকে সময় দিতে চান। দলটির আমীর শফিকুর রহমান বলেন, নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি। উনারা কেবল দায়িত্ব নিলেন। মাত্র চারদিন হলো। আমরা দেখতে চাই, কীভাবে উনারা জাতিকে নিয়ে এগোতে চাচ্ছেন। সমস্যাগুলো সমাধান কীভাবে করেন। জামায়াতের সঙ্গে বৈঠকের পর এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদের দুই অংশের সঙ্গেও যৌথ বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। এরপরে গণতন্ত্র মঞ্চ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ এবং ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম)-এর সঙ্গে বৈঠক করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৈঠকে শেষে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমরা কোনো কথা বলিনি। আমরা আগেও বলেছি, নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে নির্দিষ্ট একটা সময় লাগবে। আমরা তাদেরকে সেই সময়টা অবশ্যই দিয়েছি। আর আমরা তাদের সব বিষয়ে সমর্থন দিয়েছি।

বৈঠকে শেষে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সারাদেশে সংঘটিত সহিংসতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিগত সরকারের শাসনামলে দায়েরকৃত সকল রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে যারা গণহত্যা চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসন ও বিচারবিভাগসহ বিগত সরকারের অপকর্মের মদদদাতা কর্মকর্তাদের অপসারণ করে তদস্থলে সৎ, দক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে। বিগত সরকারের শাসনামলের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং মন্ত্রীএমপি ও সরকারি কর্মকর্তাসহ সকল দুর্নীতিবাজদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। জামায়াতের আমীর বলেন, দেশের এই কঠিন মুহূর্তে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ও সহায়সম্পদে হামলা চালিয়ে কোনো কুচক্রী মহল যাতে পানি ঘোলাটে করতে না পারে, সেজন্য জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির পাহারাদারের ভূমিকা পালন করে আসছে। যেহেতু বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করেছে, সেজন্য ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। তাই জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির তাদের পাহারা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে।

 

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিবর্তনমূলক বিশেষ আইনগুলো অবিলম্বে বাতিল করতে হবে : সম্পাদক পরিষদ
পরবর্তী নিবন্ধপরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়ে ষড়যন্ত্রে মেতেছেন ডা. রবিউল