প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি সেবা সংস্থাগুলোকে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা প্রদান করেছেন। গত বুধবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিয়ে আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে এই নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
এর আগে চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সকল সেবা সংস্থার সমন্বয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) টাইগারপাসস্থ অস্থায়ী কার্যালয়ের কনফারেন্স হলে। সোমবার অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। সভায় বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সেবা সংস্থার কর্মকর্তারা বলেছেন, মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলমান জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে। এর মধ্যে প্রকল্পের কাজ ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এখনও খালে অস্থায়ী বাঁধ আছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তা সরাচ্ছে। তবে এবারের বর্ষায় নাগরিক দুর্ভোগ না বাড়ে তা নিয়ে সকল সংস্থার সুচিন্তিত মতামত ও সমন্বিত কার্যক্রম প্রয়োজন। তা না হলে প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দ দেয়া মেগা প্রকল্পের অর্থের অপচয় হবে, যা কাম্য নয়।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রকল্প তিনটি যথাসময়ে বাস্তবায়িত না হওয়ায় মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি প্রকল্পগুলোর দীর্ঘসূত্রতার কারণ জানতে চান। এই সময় প্রকল্প তিনটির পরিচালকদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সমস্যা ও প্রতিকূলতা তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে ভূমি অধিগ্রহণসহ বেশ কিছু জটিলতায় প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে বলে তারা উল্লেখ করেন। প্রকল্পগুলোতে আর্থিক সংকটের কথাবার্তা নিয়েও আলোচনা হয়।
আলোচনার পর বিভিন্ন সংকট নিরসন এবং সমন্বয়ের জন্য চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসানকে প্রধান করে একটি কোঅর্ডিনেশন সেল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই কমিটি চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত প্রকল্পগুলো মনিটরিং করবে। একই সাথে চট্টগ্রামের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর আলাদা একটি প্রকল্প গ্রহণ করতেও বলা হয়েছে। যাতে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় উত্তোলন করা ময়লা আবর্জনাসহ বিভিন্ন বর্জ্য রিসাইক্লিং করার ব্যবস্থা থাকে। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত তিনটি প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়িত না হওয়া এবং মাত্র ঘণ্টা খানেকের বৃষ্টিতে নগরী ডুবে যাওয়ার ঘটনায় সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে অসন্তোষ দেখা দেয়।
আসলে চট্টগ্রাম শহরের প্রধানতম সমস্যা জলাবদ্ধতা। এ জলাবদ্ধতা বর্ষাকালে জীবনমরণ সমস্যা হিসাবে দেখা দেয়। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে শহরের অনেক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। মানুষের চলাচল থমকে যায়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বছরের পর বছর জলাবদ্ধতার এ সমস্যা থাকলেও এ থেকে মুক্তি মিলছে না। জনপ্রতিনিধিরা আসে যায়। আশ্বাসও মেলে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা মেলা ভার! প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। বরাদ্দ হয় কোটি কোটি টাকা। কিন্তু বৃষ্টি কিংবা বর্ষায় মানুষকে ঠিকই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গত ঈদুল ফিতরের দিনেও আধঘণ্টার বর্ষণে দুই নম্বর গেট, মুরাদপুরসহ শহরের নানা স্থান হাঁটু পরিমাণ পানিতে তলিয়ে যায়। কষ্টে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। জলাবদ্ধতায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে কিংবা অফিসগামী মানুষের কষ্ট আরও বৃদ্ধি পায়। কিছু কিছু যানবাহন চললেও মাঝপথে স্টার্ট বন্ধ হলে জলজটের সঙ্গে যানজট লেগে যায়। তাছাড়া, অনেকসময় পানিতে চলতে গিয়ে উল্টে যায় গাড়ি। আহত হয় যাত্রীসাধারণ। জলাবদ্ধতার এ সমস্যা থেকে নগরবাসী কবে মুক্তি পাবে বলা মুশকিল। জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউসের অসন্তোষ প্রকাশের বিষয়টাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। নগরীর খালগুলো উদ্ধার করে পানি চলাচলের উপযোগী করতে পারলে জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমবে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। তাছাড়া নালা-নর্দমা দখল করে যারা স্থাপনা নির্মাণ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সেবা সংস্থাগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করলে অচিরেই এর সুফল পাওয়া যাবে বলে আমরা মনে করি।