প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন রোজায় বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি মজুদদারি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি নতুন সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ ও স্মার্ট প্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। গত ৪ মার্চ দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গত রোববার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরকার প্রধানের এসব নির্দেশনা আসে। বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠ প্রশাসনকে উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সব থেকে লক্ষ্য রাখতে হবে আমাদের বাজার পরিস্থিতি কেমন। আর তাছাড়া সামনে রোজা আসছে, এই রমজান মাসে কিছু কিছু ব্যবসায়ী থাকে যারা মজুদদারি করে দাম বাড়িয়ে কিছু মুনাফা লুটতে চায়। সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। কারণ এটা আশু করণীয় একটা কাজ আমাদের। কোথাও যেন ভোক্তাদের কোনো হয়রানি হতে না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। পরনিভর্রশীলতা আমাদের কমাতে হবে এবং এটা যে আমরা পারি, এটা আমরা অনেক ক্ষেত্রে প্রমাণ করেছি। কাজেই সেদিকে নজর রাখা দরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, সরবরাহের ক্ষেত্রেও কখনো শোনা যায়, কখনও সেটা নিয়ে নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়, একটা কৃত্রিম সমস্যার সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়। মজুদদারি করে পচিয়ে ফেলবে, কিন্তু বাজারে দেবে না। এ রকম একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি এবং কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। রমজান মাস সামনে রেখেই আমি বললাম, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেন সাধারণ মানুষের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছাতে পারে। সেই ব্যবস্থার দিকে সকলকে নজর দিতে হবে। খাদ্যে ভেজাল বন্ধে নজর রাখার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোজা এলে এই সমস্যাগুলো বেশি দেখা যায়। খাদ্যে নানারকম সমস্যা করে, এগুলোর ওপর নজর দিতে হবে।
আসলে রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়– সেগুলোর পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণভাবে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি বা হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে বাজারে পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকলে পণ্যের দাম বাড়তেই পারে। কিন্তু আমাদের দেশে এ নিয়ম খাটছে না। দেখা যায়, পণ্যের পর্যাপ্ত আমদানি ও সরবরাহ থাকলেও তা বেশি দামে বিক্রি হয়। দ্রব্যমূল্যের এই অযৌক্তিক বৃদ্ধির পেছনে কাজ করে বাজার সিন্ডিকেট বা চক্র। তারা যোগসাজশের মাধ্যমে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। কখনো কখনো তারা পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। নানা অজুহাত তুলেও বাড়ানো হয় পণ্যের দাম। এ অবস্থায় বেশি দামে পণ্য ক্রয় করা ছাড়া ভোক্তাদের কোনো উপায় থাকে না।
এভাবে দ্রব্যমূল্য, বিশেষত নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করা অপরাধ বটে। এজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের শাস্তি হওয়া উচিত; কিন্তু আমাদের দেশে এ ধরনের ঘটনা বিরল। ফলে কারসাজি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের এ প্রবণতা প্রতিরোধ করার দায়িত্ব সরকারের।
শুধু দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা নয়, আরো সংশ্লিষ্ট অনেক কিছুর মূল্যবৃদ্ধি তাদেরকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। যেমন কয়েকদিন আগে ভর্তুকি সমন্বয়ের অংশ হিসেবে নতুন বছরে বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা মূল্য বাড়ানো শুরু করেছে সরকার। পাইকারিতে গড়ে ৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমে বলেছেন, খুচরায় বাড়ানো হয়েছে সাড়ে ৮ শতাংশ। এরমধ্যে যারা বেশি ব্যবহার করেন তাদের বেশি বেড়েছে এবং যারা ‘লাইফ লাইন’ বা একেবারে কম ব্যবহার করেন তাদের সামান্যই বেড়েছে।
অন্যদিকে, সৌদি আরামকোর দাম অপরিবর্তিত থাকলেও বাংলাদেশের বাজারে এলপিজির দাম কেজিতে ৬৬ পয়সা বেড়েছে। গত রোববার মার্চ মাসের জন্য এলপিজির নতুন দর ঘোষণা করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন, বিইআরসি। এ মাসে প্রতি কেজি এলপিজির দাম ঠিক করা হয়েছে ১২৩ টাকা ৫২ পয়সা, যা ফেব্রুয়ারি মাসে ১২২ টাকা ৮৬ পয়সা ছিল। সেই হিসাবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ১২ কেজি ওজনের একটি সিলিন্ডারে দাম বেড়েছে ৮ টাকা। ফেব্রুয়ারিতে ১৪৭৪ টাকা করে বিক্রি হওয়া ১২ কেজি ওজনের এলপিজি সিলিন্ডার মার্চে বিক্রি হবে ১৪৮২ টাকায়।
তাই সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষ অস্থির। এজন্য প্রধানমন্ত্রী যেভাবে অসাধু ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দিয়েছেন এবং প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, আপনারা সেভাবে অগ্রসর হোন। আমরাও চাই, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার সফল হোক।