প্রথম মামলায় পি কে হালদারের ২২ বছর কারাদণ্ড

১৩ আসামির প্রত্যেককে ৭ বছর করে দণ্ড

| সোমবার , ৯ অক্টোবর, ২০২৩ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের মামলায় গ্লোবাল ইসলামী (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে ২২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। এছাড়া মামলার ১৩ আসামির প্রত্যেককে ৭ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ঢাকার দশম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম গতকাল রোববার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। দুর্নীতির কোনো মামলায় এবারই প্রথম পি কে হালদারের সাজার রায় এল। আসামিদের মধ্যে সুকুমার মৃধা, অনিন্দিতা মৃধা, অবন্তিকা বড়াল ও শংখ বেপারীর উপস্থিতিতে রায় দেন বিচারক। পলাতক রয়েছেন ১০ জন। এরা হলেন পি কে হালদার, তার মা লিলাবতী হালদার, পূর্ণিমা রানী হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অমিতাভ অধিকারী, প্রিতিশ কুমার হালদার, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অনঙ্গ মোহন রায় ও স্বপন কুমার মিস্ত্রি। মামলায় মোট ১১৪ জন সাক্ষ্য দেন। খবর বিডিনিউজের।

এর আগে গত বুধবার দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে বিচারক রায়ের জন্য ৮ অক্টোবর তারিখ ঠিক করে দেন। ওইদিন যুক্তি উপস্থাপন করে দুদকের আইনজীবী আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, দুদক অভিযোগ ‘প্রমাণ করতে পারেনি’, আসামিরা খালাস পাবেন বলে তাদের বিশ্বাস।

দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি এ মামলা দায়ের করেন। এজাহারে বলা হয়, পি কে হালদার বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদ নিজ দখলে রেখেছেন। এছাড়া ওই অর্থ আড়াল করতে বিদেশে পাচার করে মানি লন্ডারিং আইনেও অপরাধ করেছেন। তদন্ত শেষে পিকে হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক সালাহউদ্দিন। সেখানে পাচার করা অর্থের পরিমাণ ৪২৫ কোটি টাকা দেখানো হয়। ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আদালত অভিযোগ গঠন করে এ মামলায় আসামিদের বিচার শুরুর আদেশ দেয়।

বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচারের মামলার আসামি পি কে হালদার বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবাংলায় কারাগারে আটক আছেন। সেখানেও তার বিচার চলছে।

করোনাভাইরাস মহামারীর সময় তিনি দেশে ফিরে টাকা ফিরিয়ে দেবেন জানিয়ে আদালতে কাগজ জমা দিয়েছিলেন তার আইনজীবীরা। দেশে ফিরলে তাকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয়, এমন আবেদন ফিরিয়ে বিমানবন্দর থেকে ধরে তাকে আদালতে নিয়ে আসার আদেশ আসে হাই কোর্ট থেকে। এরপর পি কে আর দেশে ফেরেননি। তিনি কানাডায় আছেন, এমন একটি প্রচারের মধ্যে গত বছরের মে মাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তাকে গ্রেপ্তারের খবর আসে।

পি কে হালদারের কারণে দেশের বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার দশায় পড়েছে। শত শত কোটি টাকা তুলে নেওয়ার কারণে আমানতকারীদের টাকা ফিরিয়ে দিতে পারছে না সেগুলো। এসব ঘটনায় ডজন তিনেক মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।

পি কে হালদার নামেবেনামে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬ হাজার ৭৯০ শতাংশ জমি কিনেছেন। এ সম্পদের বাজারমূল্য দেখানো হয়েছে ৩৯১ কোটি ৭৫ লাখ ৮১ হাজার ১২ টাকা। বর্তমানে এর বাজারমূল্য ৯৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে নিজের নামে জমি কিনেছেন ৪ হাজার ১৭৪ শতাংশ। এর দাম দলিলে দেখানো হয়েছে ৬৭ কোটি ৯৪ লাখ ২০ হাজার ৯৩০ টাকা। অথচ এ সম্পদের বর্তমান মূল্য ২২৮ কোটি টাকা।

এছাড়া রাজধানীর ধানমন্ডিতে পি কে হালদারের নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। পি কে হালদার তার নিকটাত্মীয় পূর্ণিমা রানী হালদারের নামে উত্তরায় একটি ভবন করেছেন। যার দাম ১২ কোটি টাকা। পূর্ণিমার ভাই উত্তম কুমার মিস্ত্রির নামে তেজগাঁও, তেজতুরী বাজার ও গ্রিন রোডে ১০৯ শতাংশ জমি কেনেন। যার বাজারমূল্য ২০০ কোটি টাকা। নিজের কাগুজে কোম্পানি ক্লিউইস্টোন ফুডসের নামে কঙবাজারে ২ একর জমির ওপর নির্মাণ করেন ৮তলা হোটেল, যার আর্থিক মূল্য এখন ২৪০ কোটি টাকা। এছাড়া পি কে হালদারের খালাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী ও অনঙ্গ মোহন রায়ের নামে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৪০৪ শতাংশ জমি কিনেছেন তিনি, এর বর্তমান দাম ১৬৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং কানাডিয়ান ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্যের বরাত দিয়ে দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, পি কে হালদার ২০১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ভাই প্রীতিশ হালদারের কাছে ১ কোটি ১৭ লাখ ১১ হাজার ১৬৪ কানাডীয় ডলার পাচার করেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৮০ কোটি টাকার বেশি।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষে দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হওয়ার মাত্র ১৩ মাসের মধ্যে এ মামলার রায় দেওয়া হলো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসংঘাত ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা
পরবর্তী নিবন্ধমেধাবীরা অপরাধে জড়ালে কী হয়, পি কে হালদার তার উদাহরণ : আদালত