প্রথম দিন মেট্রোতে চড়লেন ৩৮৫৭ জন, আয় পৌনে তিন লাখ টাকা

দুই যাত্রী গুনলেন জরিমানা উচ্ছ্বাসে ঢেকে গেল অপেক্ষার কষ্ট

আজাদী ডেস্ক | শুক্রবার , ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৪:২৪ পূর্বাহ্ণ

সাধারণ যাত্রীদের জন্য মেট্রোরেল উন্মুক্ত হওয়ার প্রথম দিন এই বৈদ্যুতিক রেলযাত্রার অভিজ্ঞতা নিয়েছেন প্রায় চার হাজার যাত্রী। স্টেশন থেকে এখন স্থায়ী টিকেটও কেনা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পটির রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তিনি বলেন, আজকে ৩ হাজার ৮৫৭ জন যাত্রী মেট্রোরেলে ভ্রমণ করেছেন। যাত্রীরা স্টেশন থেকে তাৎক্ষণিকভাবে টিকেট কেটে ট্রেনে উঠতে পেরেছেন। এদিন মেট্রোরেল আগারগাঁও থেকে ২৫টি এবং উত্তরা থেকে ২৫টি করে মোট ৫০টি ট্রিপ দিয়েছে। যাত্রী চলাচল বাবদ মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের আয় হয়েছে দুই লাখ ৭৪ হাজার ৮৭২ টাকা।

এম এ এন ছিদ্দিক জানান, আপাতত বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দীর্ঘ মেয়াদের টিকেট বা এমআরটি পাস কেনার সুযোগ থাকবে। প্রয়োজন অনুসারে পরে সময় পরিবর্তন করা হবে। এমআরটি পাস কিনতে বৃহস্পতিবার বিকালে অনেককে অপেক্ষা করতে দেখা যায় আগারগাঁও স্টেশনে।

এদিকে যাত্রী পরিবহনের প্রথম দিন বেশ কিছু বিভ্রাটে পড়েছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল; তবে উৎসবমুখর যাত্রীরা ভোগান্তিকে আমলে নেননি খুব একটা। মাত্র ১০ মিনিটের যাত্রার জন্য একেকজন যাত্রীকে দুই থেকে তিন ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা করতে হয়েছে; টিকেট পেয়ে ট্রেনে চড়ার পর অপেক্ষার কষ্ট মনে রাখেননি তারা। তবে সবারই প্রত্যাশা, প্রথম দিনের ছোটখাটো সমস্যা যেন দীর্ঘস্থায়ী না হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় উত্তরার দিয়াবাড়ি স্টেশন থেকে আগারগাঁওয়ে সরাসরি যাত্রীপরিবহন শুরু করে মেট্রোরেল। তবে আগারগাঁও প্রান্তে স্টেশনের টিকেট প্লাজার স্বয়ংক্রিয় ফটক খুলতে গিয়ে দেখা দেয় বিভ্রাট। প্রায় আধঘণ্টা চেষ্টার পরও ফটক খুলতে না পেরে টেনেহিঁচড়ে তা উন্মুক্ত করেন স্টেশনকর্মীরা। ততক্ষণে উত্তরা প্রান্ত থেকে আসা অনেক যাত্রী আগারগাঁও থেকে আবার টিকেট কেটে ফিরেও যান।

শুরুতেই বিলম্বের মুখে পড়া আগারগাঁওয়ের যাত্রীরা কাউন্টারে গিয়ে টিকেট সংগ্রহের সময় দ্বিতীয় দফা বিপত্তিতে পড়েন। ভেন্ডিং মেশিনগুলোতে টাকা জমা দেওয়ার পর টিকেট বের হচ্ছিল না কারও কারও, আবার কাউন্টার কর্মীরাও ডেটা ইনপুট দিয়ে টিকেট বিক্রির সময় সার্ভারে ধীরগতির কারণে বিপত্তিতে পড়ছিলেন। মেট্রোরেলে চড়তে ভোর ৫টা থেকে আগারগাঁও প্রান্তে অপেক্ষমাণ কামরুল ইসলাম বলেন, লাইনে সবার আগে দাঁড়িয়ে টিকেট পেতে একটু দেরি হল। মেট্রোরেল সবার জন্যই সম্পূর্ণ নতুন। শুরুর দিকে কাউকে দোষারোপ না করাই ভালো।

আগারগাঁও থেকে প্রতি ১০ মিনিট বা তার সামান্য বেশি সময় পর পর দিয়াবাড়ির উদ্দেশে বৈদ্যুতিক ট্রেনগুলো ছেড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু টিকেট সরবরাহে ধীরগতিতে কোচের অধিকাংশ বগিই ছিল ফাঁকা। সকাল ৯টার দিকে আগারগাঁও থেকে মেট্রোরেলে চেপে দিয়াবাড়ি যাওয়া সময় দেখা গেল, প্রতিটি কোচে যাত্রী ১০/১২ জন। তারা কেউ ফেসবুকে লাইভ করছেন; কেউ এদিকসেদিক তাকিয়ে নানা ভঙ্গিতে সেলফি তুলতে ব্যস্ত।

মেট্রোরেলে চড়তে কেমন লাগছে? মোহাম্মদপুর থেকে আসা আল আমিন বললেন, এটা সত্যিই অন্যরকম অনুভূতি। অল্প সময়ের মধ্যে অনেক গতি ওঠে যাচ্ছে। মনে হয় আমরা কোনো বিমানে বসে আছি, এক্ষুণি উড়াল দেবে। অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিন্নাত আলী মোল্লাকে পাওয়া গেল উত্তরার দিয়াবাড়ি স্টেশনে। সকালে কাওলা থেকে এসে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই মেয়েকে নিয়ে আগারগাঁও গিয়েছিলেন তিনি। নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, এক কথায় চমৎকার। মেট্রোরেল আধুনিক পরিবহন। এটা নগরবাসীকে যানজট থেকে স্বস্তি দেবে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর এখন সেই মেট্রোরেল বাস্তব রূপ নিয়েছে। মেয়েদের নিয়ে নিজেই ঘুরে আসতে পেরে স্বপ্নের মতো লাগছে।

জরিমানা গুনলেন দুই যাত্রী : ঢাকার মেট্রোরেলে যাত্রী বহন শুরুর দিনে দুই যাত্রীকে নিয়ম ভাঙার কারণে জরিমানা গুনতে হয়েছে। এদের একজনকে জরিমানা করা হয়েছে টিকেট হারিয়ে ফেলার জন্য। অন্যজনকে করা হয়েছে প্ল্যাটফর্মে অতিরিক্ত সময় অবস্থান করায়। ঢাকার মেট্রোরেলে চড়তে হলে চিপ সম্বলিত একটি কার্ড কিনতে হয়। ওই কার্ড দিয়ে দরজা খুলেই ভেতরে ঢুকতে হয়। ভ্রমণ শেষে স্টেশন থেকে বের হওয়ার সময় দরজা খুলতে ওই কার্ড প্রয়োজন হয়। ওই কার্ড রেখেই বেরিয়ে আসতে হয়। আর টিকেট কাটার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভ্রমণ করতে হয়, নইলে ওই টিকেট অকার্যকর হয়ে পড়ে।

বুধবার উদ্বোধনের পর বৃহস্পতিবার যাত্রী বহন শুরু করার পর স্টেশনে ছিল বেশ ভিড়। এদিন ৩ হাজার ৮৫৭ জন দেশে বৈদ্যুতিক ট্রেনে প্রথম স্বাদ নেয়। তাদের মধ্যে দুজনকে নিয়ম ভাঙার কারণে জরিমানা করা হয় বলে ঢাকার মেট্রোরেল পরিচালনার কোম্পানি ডিএমটিসিএলের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) মো. আব্দুর রউফ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রথম দিন (বৃহস্পতিবার) দুজনকে জরিমানা করা হয়েছে। একজনকে জরিমানা করা হয়েছে টিকেট হারিয়ে ফেলার কারণে। আরেক জনকে জরিমানা করা হয়েছে টিকেট সংগ্রহ করে এক ঘণ্টার বেশি প্ল্যাটফর্মে সময় কাটানোর কারণে। তবে এই দুই যাত্রীকে কত টাকা জরিমানা করা হয়েছে, তা জানাতে রাজি হননি তিনি।

ডিএমটিসিএলের একজন ব্যবস্থাপক বলেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও আসা একজন যাত্রীকে টিকেট হারিয়ে ফেলার কারণে ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, একজন যাত্রী উত্তরা থেকে টিকেট কেটে আগারগাঁও আসেন। ওই যাত্রী ৬০ টাকা দিয়ে কেনা ডিজিটাল টিকেটটি হারিয়ে ফেলেন। ওই যাত্রী স্টেশন থেকে বের হওয়ার সময় তার ডিজিটাল টিকেট নির্ধারিত মেশিনে জমা দিতে না পারায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি তাকে বের হতে দিচ্ছিল না। এরপর বিষয়টি দায়িত্বরত কর্মীদের নজরে আসলে তারা ওই যাত্রীকে নির্ধারিত মেশিনের কাছে নিয়ে যান। এরপর মেশিনে নির্ধারিত বাটনে ক্লিক করার পর তার কাছে ১০০ টাকা দাবি করে। এরপর ১০০ টাকা ওই মেশিনে প্রবেশ করালে তার জন্য আরেকটি কার্ড বের হয়ে আসে। পরে এঙিট গেটে ওই কার্ড প্রবেশ করালে ওই যাত্রীর জন্য গেট খুলে যায় এবং তিনি বের হতে পেরেছেন। এই কর্মকর্তা বলেন, যাত্রী যে কার্ডটি হারিয়ে ফেলেছিলেন, তার দামই ৬০ টাকা।

ডিএমটিসিএল আইন অনুযায়ী, একজন যাত্রী টিকেট সংগ্রহ করার পর প্ল্যাটফর্মে সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা অবস্থান করতে পারবেন। এর বেশি অবস্থান করলে তিনি জরিমানার মুখে পড়বেন। প্ল্যাটফর্মে অতিরিক্ত জনসমাগম ঠেকানোর জন্য এই আইন করা হয়েছে বলে জানান ডিএমটিসিএলের যুগ্ম সচিব রউফ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলায়ন নাসির উদ্দিন চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনরায় সিএলএফ চেয়ারম্যান নির্বাচিত
পরবর্তী নিবন্ধ‘মদ খেয়ে বিতণ্ডার পর’ যুবককে হত্যা, বান্দরবানে গ্রেপ্তার ১