প্রথম দিনটা আরো সুখকর হতে পারতো বাংলাদেশের

৯ উইকেটে ৩১০ রান সংগ্রহ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বুধবার , ২৯ নভেম্বর, ২০২৩ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ টেস্ট দলে এই মুহূর্তে সবচাইতে অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম এবং মোমিনুল হক। দু জনই ছিলেন টেস্ট দলের অধিনায়ক। তাই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তারুণ্য নির্ভর দলটির সবচাইতে বড় ভরসার নাম ছিল এ দুজন। কিন্তু হতাশ করল দুজনেই। ফলে দিনের শুরুটা দারুণ হওয়ার পরও দিন শেষে হতাশা বাংলাদেশ শিবিরে। যদিও সিলেট টেস্টের প্রথম দিন শেষে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩১০ রান। তবে দিনটা আরো সুখকর হতে পারতো যদি মুশফিকমোমিনুল দায়িত্বটা ঠিকমত পালন করতে পারতেন।

শুরুতে একাধিক এলোমেলো শট খেলা মোমিনুল ফিরেছেন ৩৭ রান করে। আর মুশফিকের ব্যাট থেকে আসে মাত্র ১২ রান। যেটুকু লড়াই করেছে বাংলাদেশ তা কেবল তরুণদের ব্যাটে ভর করে। সাউদি, জেমিসন, শোধিদের মতো অভিজ্ঞ বোলারদের দারুণ দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করেছে বাংলাদেশের তরুণ ব্যাটাররা। কিন্তু ফিলিপসের মতো অনিয়মিত বোলারের কাছে উইকেট দিয়ে এসেছেন শান্ত, মোমিনুল, দিপু, সোহানরা। বলতে গেলে মাহমুদুল হাসান জয় ছাড়া কেউই টেস্টের ব্যাটিংটা করতে পারেনি। বেশিরভাগ ব্যাটারই যেন খেলার চেষ্টা করেছেন ওয়ানডে স্টাইলে। ফলে দিনের প্রথম সেশনটা ভালো করার পরও পুঁজিটাও তেমন বড় করতে পারেনি স্বাগতিকরা। সিলেট টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৫ ওভারে ৯ উইকেটে ৩১০ রানে প্রথম দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে মাহমুদুল হাসান জয় এবং জাকির হাসান মিলে ভালো সূচনা এনে দিয়েছিলেন দলকে। যদিও ৩৯ রানে বিচ্ছিন্ন হন দুজন। এজাজ প্যাটেলের একটি কুইক ডেলিভারিতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই বোল্ড হয়ে যান জাকির হাসান। ১২ রান করে ফিরেন জাকির। এরপর অধিনাক নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে বেশ দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন জয়। ৫৩ রান যোগ করেন দুজন। শুরু থেকেই নিউজিল্যান্ড বোলারদের উপর চড়াও হয়ে খেলা চেষ্টা করা শান্ত বেশ সফল হচ্ছিলেন। কিন্তু যে শটে আউট হলেন, সেটা ছিল একেবারেই দৃষ্টিকটু। ফিলিপসের ফুলটস বলটাকে উড়িয়ে মারতে চেষ্টা করেছিলেন শান্ত। কিন্তু বল ব্যাটের উপরের অংশে লেগে ক্যাচ উঠে যায়। দারুণ দক্ষতায় সে ক্যাচ লুপে নেন উইলিয়ামসন। ৩৫ বলে ৩৭ রান করে থামেন শান্ত। এরপর জয়ের সাথে জুটি বাধেন অভিজ্ঞ মোমিনুল। দুজন বেশ ভালোই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। ম্যধাহ্ন বিরতি থেকে চা বিরতি পর্যন্ত কাটিয়ে দেওয়ার দারুণ সুযোগ ছিল দুজনের সামনে। কিন্তু চা বিরতির একেবারে কাছে গিয়ে ফিরলেন দুজনই। আর সেটাই ছিল বাংলাদেশ দলের জন্য বড় ধাক্কা। ৮৮ রানের জুটি গড়ে চা বিরতির ঠিক দুই ওভার আগে ফিরেন মোমিনুল। ফিলিপসের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেওয়ার আগে মোমিনুল করেন ৭৮ বলে ৩৭ রান। তার আগে অবশ্য নিজের ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন জয়। মোমিনুল ফেরার পরের ওভারেই ফিরেন জয়। ইশ শোধির একমাত্র শিকারে পরিণত হয়ে ফেরার আগে ১৬৬ বলে ৮৬ রান করে আসেন এই ওপেনার। মেরেছেন ১১টি চার। পারলেন না এই তরুণ দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরিটা তুলে নিতে। চা বিরতির পর নতুন করেই যেন শুরু করছিলেন মুশফিক এবং মেহেদী হাসান মিরাজ। মাত্র ৪ রানের ব্যবধানে দুই সেট ব্যাটারকে হারালেও স্বাগতিক শিবিরের ভরসা হয়ে ছিলেন মুশফিক এবং মিরাজ। কিন্তু দুজনই দিলেন ব্যর্থতার পরিচয়। মুশফিকের মতো একজন অভিজ্ঞ ব্যাটার যেভাবে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এলেন তা ছিল বেশ দৃষ্টিকটু। ২২ বলে ১২ করে অ্যাজাজ প্যাটেলের ওপর চড়াও হতে গিয়ে মিডঅফে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন মুশফিক। মিরাজ শুরুটা করেছিলেন ভালো। তবে তাকে ফিরতে হয়েছে দুর্ভাগ্যজনকভাবে। কাইল জেমিসনের বাউন্সারে বিভ্রান্ত হয়ে ব্যাট পেতে দিয়েছিলেন মিরাজ। কিন্তু বল চলে যায় স্লিপে। মিরাজ থামেন ২০ রান করে। এরপর অভিষিক্ত শাহাদাত হোসেন ব্যাটিংয়ে ছিল ধৈর্যের ছাপ। তার ধৈর্যর বাঁধও বেশিক্ষণ টিকল না। তিনিও ফিরলেন একেবারে বাজে একটি শট খেলে। ৫৪ বলে ২৪ রান করে গ্লেন ফিলিপসের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন এই তরুণ।

উইকেট রক্ষক নুরুল হাসান সোহান উইকেটে এসেই যেন টিটোয়েন্টি খেলা শুরু করেন। কিন্তু এটা যে টেস্ট ক্রিকেট সেটা যেন তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন। অতি মারমুখী হতে গিয়ে ২৮ বলে ২৯ রান করে ফিলিপসের চতুর্থ শিকার হয়ে ফিরেন সোহান। ১৬ রান করে নাঈম হাসান যখন ফিরেন তখন বাংলাদেশের স্কোর ৯ উইকেটে ২৯০ রান। দিনের বাকি সময়টা পার করে দেন শরীফুল এবং তাইজুল। দুজন মিলে যোগ করেছেন ২০ রান। আর তাতেই দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় ৯ উইকেটে ৩১০। তাইজুল আর ২ রান করতে পারলেই বাংলাদেশের সব ব্যাটারের নামের পাশে যোগ হবে দুই অংকের স্কোর। আজ এদুজন আর কতটা টানতে পারেন দলকে সেটাই দেখার। নিউজিল্যান্ডের পার্ট টাইম অফস্পিনার গ্লেন ফিলিপস একাই নিয়েছেন ৪টি উইকেট। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন কাইল জেমিসন আর অ্যাজাজ প্যাটেল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরলেন গৃহবধূ
পরবর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় টমটম চালককে পিটিয়ে হত্যা