প্রথম দিনই চালকের আসনে প্রোটিয়ারা

দুই সেঞ্চুরি, রান পাহাড়ে চাপা বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বুধবার , ৩০ অক্টোবর, ২০২৪ at ৮:০৯ পূর্বাহ্ণ

মীরপুরে তিন স্পিনার নিয়ে খেলার পরিকল্পনা সফল হয়নি। তাই টিম ম্যানেজমেন্ট হয়তো চেয়েছিল চট্টগ্রামে ব্যাটিং উইকেট করতে। কিন্তু সে পরিকল্পনাও যেন ভেস্তে যেতে বসেছে। যদিও এ ধরনের ব্যাটিং উইকেটে টস বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আর সে গুরুত্বপূর্ণ টসটা দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক জেতায় ভাগ্যও যেন মুখ তুলে তাকালো না বাংলাদেশের দিকে। বোলারদের জন্য বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত সাগরিকার উইকেটে কোনো ধরনের সহযোগিতাই পেল না স্বাগতিক বোলাররা। তার উপর দুই দুটি ক্যাচ বেরিয়ে গেছে হাত ফসকে। ফলে পরিণতি যা হওয়ার তাই হয়েছে। প্রথম দিনেই রানের পাহাড়ে চড়ার সব আয়োজন সম্পন্ন করে ফেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা সংগ্রহ করেছে ২ উইকেটে ৩০৭ রান। আলোক স্বল্পতার কারণে দিনের খেলা ৯ ওভার বাকি থাকতেই শেষ করা হয়। না হয় প্রোটিয়াদের সংগ্রহটা আরো বড় হতে পারতো।

একরকম ভিন্ন এবং অচেনা পরিবেশেই চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার টেস্ট ম্যাচটি। নিরাপত্তার ঘেরটোপে ঘেরা স্টেডিয়ামে দর্শক বলতে ছিল হাতেগোনা মাত্র কয়জন। তবে সারাদিনে তারা আনন্দ করার মত কোনো উপলক্ষই পায়নি। বরং দেখল দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের দাপট। সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন দুই প্রোটিয়া ব্যাটার। যাদের মধ্যে ১০৬ রান করে স্টাভস ফিরে গেলেও ১৪১ রান করে অপরাজিত রয়ে গেছেন ওপেনার টনি ডি জর্জি। যদিও এই দুই সেঞ্চুরিয়ানকে অল্প রানে ফেরানোর সুযোগ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো কাজে লাগাতে পারেননি মাহিদুল ইসলাম। সপ্তম ওভারে ৬ রানে ডি জর্জির ক্যাচ নিতে পারেননি অভিষিক্ত উইকেটরক্ষক মাহিদুল। পরে ২৫ রানে স্টাবসকে স্টাম্পিং করতে পারেননি তিনি। লিটন কুমার দাসের অসুস্থতায় টেস্ট অভিষেক হয়েছে মাহিদুলের। মাহিদুলের দুটি ছাড়াও টুকটাক সুযোগ এসেছে। কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। জর্জির একটি ক্যাচ ছেড়েছেন সাদমান ইসলাম। আর সে জর্জিই কিনা দিন শেষে অপরাজিত ১৪১ রানে।

টসে জিতে ব্যাট করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার মার্করাম ও ডি জর্জি অনায়াসেই প্রথম ঘণ্টা পার করে দেন। এর মাঝেই সপ্তম ওভারে ডি জর্জির ব্যাটের বাইরের কানা ছুঁয়ে যাওয়া বল বাম দিকে ঝাঁপিয়ে গ্লাভসে জমাতে পারেননি মাহিদুল। দুই ওপেনারের সাবলিল ব্যাটিংয়ে ১১তম ওভারে পঞ্চাশ রান পূরণ করে। শেষ পর্যন্ত ৬৯ রানে গিয়ে ভাঙে এ জুটি। তাইজুলের বলে ক্রিজ ছেড়ে তুলে মারতে গিয়ে মিড অনে মুমিনুল হকের হাতে সহজ ক্যাচ দেন প্রোটিয়া অধিনায়ক মার্করাম। ৩৩ রান করে ফিরেন তিনি। এরপর শুরু দ্বিতীয় উইকেটের বিশাল জুটি। ডি জর্জি ও স্টাবস মিলে ৩৪২ বলে যোগ করেন ২০১ রান। মীরপুর টেস্টের মতো এই ইনিংসেও বাংলাদেশের স্পিনের বিপক্ষে বেশ সফলভাবে সুইপ, রিভার্স সুইপ খেলেন সফরকারী ব্যাটসম্যানরা। প্রথম সেশনের ২৮ ওভারে ১০৯ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। মধ্যাহ্ন বিরতির পর রানের গতি কিছুটা কমাতে পারেন তাইজুল, হাসান মাহমুদ, নাহিদরা। লাঞ্চ বিরতির পরপরই আসে দ্বিতীয় সুযোগ। ৩২তম ওভারে তাইজুলের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্রিজ থেকে বেরিয়ে আসে স্টাবসের পা। কিন্তু বল ঠিকঠাক গ্লাভসেই নিতে পারেননি মাহিদুল। ফলে হাতছাড়া হয় সহজ একটি সুযোগ। জীবন পেয়ে ধীরে ধীরে জুটির শতরান পূর্ণ করেন দুই ব্যাটসম্যান। দ্বিতীয় সেশনের পুরোটা নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দেন ডি জর্জি ও স্টাবস। চা বিরতির পর তাদের নিয়ন্ত্রণ বাড়ে আরও। রানের গতি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেন স্টাবস। সুযোগ পেলেই বড় শট খেলতে থাকেন তিনি। দিনের শেষ ঘণ্টায় সেঞ্চুরি তুলে নেন স্টাভস। যা তার টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। ১৯৪ বলে ৫টি চার এবং ৩টি ছক্কার সাহায্যে সেঞ্চুরি তুলে নেন স্টাভস। এরপর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি স্টাভস। দিনের খেলা শেষ হওয়ার ৮ ওভার আগে তাইজুলের কিছুটা নিচু হওয়া বলে বোল্ড হন স্টাভস। ১৯৮ বলে ৬টি চার ও ৩টি ছক্কার সাহায্যে করেন ১০৬ রান। দিনের বাকি আধ ঘণ্টায় আর কোনো বিপদ ঘটতে দেননি ডি জর্জি ও ডেভিড বেডিংহ্যাম। ৩৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ড্রেসিং রুমে ফিরেন তারা। আর তাতে দলকে পৌঁছে দিয়েছেন ৩০৭ রানে। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিকে আরও বড় কিছুতে রূপ দেওয়ার আশা জাগিয়ে দেড়শ কাছে গিয়ে দিন শেষ করেন ডি জর্জি। তিনি অপরাজিত ২১১ বলে ১০টি চার এবং ৩টি ছক্কার সাহায্যে ১৪১ রান করে। ২৫ বলে ১৮ রান করে অপরাজিত বেডিংহ্যাম। বাংলাদেশের পক্ষে ২টি উইকেট নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম ১১০ রানে। বল করেছেন ৩০ ওভার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে খাদ্যশস্য পরিবহন
পরবর্তী নিবন্ধসড়ক পার হতে গিয়ে বাসের ধাক্কা, প্রাণ গেল কলেজ শিক্ষার্থীর