প্রথম ট্রেনের যাত্রী, ছড়াল উচ্ছ্বাস

কক্সবাজার থেকে ঢাকায় গেলেন ১০২০ জন

আহমদ গিয়াস, কক্সবাজার | শনিবার , ২ ডিসেম্বর, ২০২৩ at ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর শেষে অবশেষে কক্সবাজার থেকে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ১ হাজার ৩০ জন যাত্রী নিয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজার থেকে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়ে প্রথম ট্রেন। আর এর মাধ্যমে শুরু হলো বাণিজ্যিকভাবে রেল চলাচল।

গতকাল শুক্রবার বেলা ১২টা ৩১ মিনিটে কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন থেকে ১০২০ জন যাত্রী নিয়ে রাজধানীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ নামের প্রথম বাণিজ্যিক ট্রেনটি রাত ৯টা ৩৮ মিনিটের সময় কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছে। ট্রেনটি আরও ২৮ মিনিট আগে রাত ৯টা ১০ মিনিটের সময় কমলাপুরে পৌঁছানোর কথা ছিল। ট্রেনটি যাত্রাপথে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে প্রায় ২০ মিনিট যাত্রা বিরতি করে। পর্যটন শহর থেকে রাজধানী ঢাকা যেতে প্রথমদিনের ট্রেনটির সময় লেগেছে প্রায় ৮ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট। ট্রেনটির চালক ছিলেন আবদুল আওয়াল রানা।

অন্যদিকে ঢাকাকক্সবাজার রুটে প্রথম ট্রেনটি গতকাল শুক্রবার রাত ১০টা ৫৫ মিনিটের সময় একই সংখ্যক ১০২০ জন যাত্রী নিয়ে রাজধানীর কমলাপুর থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে এসেছে। ট্রেনটি আজ শনিবার ভোর সাড়ে ৬টায় কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছানোর কথা। এর আগে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটের সময় কমলাপুর স্টেশনে কক্সবাজার রুটের যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান।

ট্রেন পরিচালক আবদুর রশিদ জানান, প্রথম দিনের ট্রেনটি কক্সবাজার থেকে ঢাকা পৌঁছাতে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে প্রায় ২৫ মিনিট দেরী করেছে। ফলে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ট্রেনটিও দেরী করে ছেড়েছে।

কক্সবাজার শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে সরকারি কলেজের বিপরীতে চান্দের পাড়ায় গড়ে তোলা হয় দেশের প্রথম আইকনিক রেল স্টেশন। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকেই এ স্টেশনে প্রথম ট্রেনটি ছাড়ার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়। যাত্রীরা আগেভাগেই স্টেশনে এসে ভিড় জমায়। প্রথম ট্রেনের যাত্রী হিসেবে তাদের যেন উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। এ নিয়ে অনেকেই সেলফি তুলেছেন আর সেই ছবি ছড়িয়ে দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বেলা ১২ টায় এই স্টেশন থেকে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর। এরপর বেলা ১২টা ৩১ মিনিটে প্রথম বাণিজ্যিক ট্রেনটি রাজধানীর উদ্দেশ্যে কক্সবাজার ছেড়ে যায়।

কক্সবাজার এক্সপ্রেস’ ট্রেনটিতে শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৫ টাকা। এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৩২৫ টাকা। স্নিগ্ধা (এসি সিট) শ্রেণিতে ১ হাজার ৫৯০ টাকা এবং এসি বার্থের (ঘুমিয়ে যাওয়ার আসন) ভাড়া ২ হাজার ৩৮০ টাকা।

অন্যদিকে যেসব যাত্রী চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত যাবেন, তাদের শোভন চেয়ারের ভাড়া ২০৫ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণির ৩৮৬ টাকা, এসি সিট ৪৬৬ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া ৬৯৬ টাকা।

গত ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চলের) এসিওপিএস মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকাকক্সবাজার রুটের কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের নাম, যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ও ট্রেনের নম্বর জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়, ট্রেনটি ঢাকা থেকে সোমবার এবং কক্সবাজার থেকে মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে।

এর আগে ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেন। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত কক্সবাজার রেল লাইনের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জুলাইয়ে। এতে অর্থায়ন করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকার।

গত বৃহস্পতিবার ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয় অনলাইন ও কাউন্টারে। তবে টিকিট বিক্রি শুরুর মাত্র আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই সকল টিকেট শেষ হয়ে যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশাহজাহান ওমরের মনোনয়ন কৌশলগত : কাদের
পরবর্তী নিবন্ধক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত প্রধানমন্ত্রী