নগরীর পাঁচলাইশ থানার কসমোপলিটন এলাকার বাসিন্দা আলোক বিকাশ বড়ুয়ার পুলিশের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ শোনার মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজের প্রথম ওপেন হাউড ডে শুরু হয়। আলোক বিকাশ ওপেন হাউজ ডে’তে উপস্থিত হয়ে জানান, নগরী পাঁচলাইশ থানার কসমোপলিটন এলাকার ৫ নং সড়কের ৩৮ নং বাড়ির পাঁচটি ফ্ল্যাট নিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন পুলিশ দেবরকে সাথে নিয়ে তার ভাবী। উক্ত পুলিশ সদস্য সিআইডির কর্মকর্তা। তার নাম জাহাঙ্গীর উদ্দিন আহমেদ। ভাবীর নাম শামীমা নার্গিস। পুলিশের বড় ভাই মোহাম্মদ মফিজ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী শামীমা নার্গিস ওই ফ্ল্যাটগুলো পালাক্রমে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে বন্ধক দেন। টাকা দিয়ে ফ্ল্যাটে ওঠার দুই মাস যাওয়ার পর সেখানে হাজির হন শামীমা নার্গিসের দেবর সিআইডি অফিসার জাহাঙ্গীর উদ্দিন আহমেদ। জাহাঙ্গীর নিজেকে ফ্ল্যাটের মালিক দাবি করে বন্ধক নিয়ে সেখানে বসবাসকারীদের বের করে দেন। এরপর দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেও কোনো প্রতিকার পান না ভুক্তভোগীরা। সবকিছুতে নিজের ক্ষমতা খাটান সিআইডির জাহাঙ্গীর উদ্দিন। মামলায় জড়ানো, তদন্ত প্রতিবেদন উলট পালট করে দেওয়াসহ নানাভাবে ‘ক্ষমতা’র অপব্যবহার করে তিনি তাদেরকে নাজেহাল করেন।
আলোক বিকাশ বড়ুয়া পুলিশ কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমরা যারা তার দ্বারা প্রতারিত হয়েছি তারা সবাই জিডিসহ চেকের মামলা করেছি। আমরা আইনগত যত ব্যবস্থাতেই যাই, সিআইডির জাহাঙ্গীর প্রভাব খাটিয়ে তার ভাই এবং তার নাম বাদ দেন। কারো ২৫ লাখ, কারো ১২ লাখ, আমার ১৫ লাখ টাকাসহ অনেকেরই বহু টাকা তারা এই প্রক্রিয়ায় আত্মসাৎ করেছেন। পুলিশের দাপটে তারা কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে কমিশনারের নিকট হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আপনি দয়া করে এমন একটি ব্যবস্থা করে দিন, যাতে জাহাঙ্গীর সাহেব কোনো প্রভাব খাটাতে না পারেন।
অভিযোগ শুনে সিএমপি কমিশনার এ বিষয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) স্পেশাল সুপারিনটেনডেন্টের (এসএস) কাছে লিখিতভাবে রিপোর্ট পাঠানোর আশ্বাস দেন।
নগরীর চান্দগাঁওয়ের বাসিন্দা সত্তর বছর বয়সী মোহাম্মদ ইদ্রিস কষ্ট করে হাজির হন পুলিশ কমিশনারের দপ্তরে। জানালেন তার মেয়ের স্বামীর সাথে ডিভোর্স হয়েছে পাঁচ বছর পেরিয়েছে। এখন পর্যন্ত তার মেয়ে কাবিননামার প্রাপ্য টাকা বুঝে পাননি। এ নিয়ে তিনি মামলা করলেও তার মেয়ের স্বামী প্রভাবশালী হওয়ায় কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।
সিএমপি কমিশনার তার অভিযোগ শুনে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করেন চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আফতাব উদ্দিনকে। কাবিননামার টাকা বুঝে পেতে মোহাম্মদ ইদ্রিসকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
খুশি মনে কমিশনারের কার্যালয় থেকে বের হন ইদ্রিস। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি আশাবাদী, এবার অবশ্যই আমার মেয়ের হক বুঝে পাব।
ইপিজেড থানা এলাকার মোহাম্মদ কামাল হোসেনের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে কিশোর গ্যাং লিডার আজম ও রাকিবের কারণে। হতাশার চরম মুহূর্তে এসে গতকাল তিনি হাজির হন সিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে। তার সমস্যারও সমাধান হয়ে যাবে বলে আশাবাদী হন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জড়িত থাকায় বাড়িওয়ালা ঘর ছাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন তানজিম শাহরিয়ারকে। খুলশী এলাকার এই ঘটনায় যাতে কোনো অন্যায় না ঘটে তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
এভাবে গতকাল সিএমপি কমিশনারের কার্যালয় সাধারণ মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছিল। বিভিন্ন ধরনের অভিযোগের তাৎক্ষণিক সমাধান পেয়ে খুশি মনে ফিরে যান মানুষ। গতকাল বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নগরীর দামপাড়া সিএমপির সম্মেলন কক্ষে পূর্বঘোষিত ‘ওপেন হাউজ ডে’ অনুষ্ঠিত হয়। তিন ঘণ্টায় ৮৪ জন সেবাপ্রত্যাশী বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ জানান। তাদের অভিযোগগুলো শুনে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ তাৎক্ষণিক সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ফোন করে সমস্যা সমাধান করে তাকে অবহিত করার নির্দেশ দেন। ৮৪ জন সেবাপ্রার্থীর মধ্যে ৩২ জন বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে সমাধানের আশ্বাস পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এর মধ্যে দখল–বেদখল, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ নানা ধরনের অভিযোগ ছিল। সেবাপ্রত্যাশীদের মধ্যে অন্যরা বিভিন্ন বিষয়ে প্রস্তাব উপস্থাপন করেন ও এমন একটি উদ্যোগের জন্য পুলিশ কমিশনারকে ধন্যবাদ জানান।
ওপেন হাউজ ডে’তে সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) আ স ম মাহাতাব উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) আবদুল মান্নান মিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ আহাম্মদ, উপ–পুলিশ কমিশনার (সদর) এস এম মোস্তাইন হোসেন (অতিরিক্ত ডিআইজি), উপ–পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) রইছ উদ্দিনসহ সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, পুলিশ কমিশনার প্রতি মঙ্গলবার এবং ক্রাইম ডিভিশন ও ট্রাফিক ডিভিশনের উপ–পুলিশ কমিশনারগণ প্রতি রোববার একই প্রক্রিয়ায় নগরবাসীর বক্তব্য শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।