প্রথমবারের মতো জলহস্তী পেল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা

মাস দেড়েকের মধ্যে আসবে তিনটি জিরাপও

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় প্রথমবারের মতো যুক্ত হয়েছে জলহস্তী। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে একটি জলহস্তী চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় পৌঁছেছে। আগামী সপ্তাহে আরো একটি জলহস্তী এই চিড়িয়াখানায় ঠাঁই পাবে। মাস দেড়েকের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসছে তিনটি জিরাপ। পাঁচশরও বেশি প্রাণী নিয়ে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা এখন বেশ সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে।

জানা যায়, প্রাণী বিনিময় চুক্তির আওতায় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা থেকে দুই বছর বয়সী দুইটি বাঘ রংপুর চিড়িয়াখানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এর বিনিময়ে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে দশ বছর বয়সী দুইটি জলহস্তী দেয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানাকে। বুধবার বাঘ দুইটি রংপুর চিড়িয়াখানায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার প্রতিনিধিদল রংপুর থেকে ফেরার পথে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে একটি জলহস্তী নিয়ে আসে। গতকাল সকালে জলহস্তীটি চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ঠাঁই নিয়েছে। ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে আরো একটি জলহস্তী আগামী সপ্তাহে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার প্রাণী বহরে যুক্ত হবে। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় জলহস্তীর অভাব ঘুচে যাওয়ার সাথে জিরাপের অভাবও ঘোচানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে তিনটি জিরাপ আনার জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। জিরাপের চালানটি এসে পৌঁছালে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. শাহাদাৎ হোসেন শুভ গতকাল দৈনিক আজাদীকে জানিয়েছেন, রংপুর চিড়িয়াখানাকে এক জোড়া বাঘ দেওয়ার বিপরীতে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে দুটি জলহস্তী পেয়েছি। প্রথম দফায় একটি পুরুষ জলহস্তী কাভার্ডভ্যানে করে আনা হয়েছে। এগুলোর ওজন অনেক বেশি। তাই দুইটিকে একই ভ্যানে আনা সম্ভব হয়নি। অপর একটি মহিলা জলহস্তী আগামী সপ্তাহখানেকের মধ্যে পৌঁছাবে বলেও ডা. শুভ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আগে যেখানে কুমির রাখা হতো সেখানে নতুন অতিথি জলহস্তীর জন্য বাসস্থান তৈরি করা হয়েছে। এখান থেকে সরিয়ে কুমিরের খাঁচা বানানো হয়েছে পাহাড়ের পশ্চিম পাশে লেকের মধ্যে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে। জলহস্তী স্তন্যপায়ী তৃণভোজী প্রাণী। একটি প্রাপ্তবয়স্ক জলহস্তীর ওজন গড়ে ১ থেকে দেড় টন হয়ে থাকে। জলহস্তী ঘাসপাতা ও বিভিন্ন ধরনের ফলমূল খেয়ে জীবনধারণ করে। একটি জলহস্তী বেঁচে থাকে ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ১৬টি বাঘ ছিল। এরমধ্যে দুটি রংপুর পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন রয়েছে ১৪টি। চিড়িয়াখানায় নতুন জলহস্তীসহ বর্তমানে প্রাণীর সংখ্যা ৫২০টি। আগামী মাস দেড়েকের মধ্যে তিনটি জিরাপ এসে পৌঁছালে এই সংখ্যা ৫২৩ এ উন্নীত হবে। চিড়িয়াখানায় সর্বমোট ৬৯ প্রজাতির পশুপাখি রয়েছে। এর মধ্যে ৩০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৪ প্রজাতির পাখি ও চার প্রজাতির সরীসৃপ। এর আগে চলতি বছর ১৬ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা হয় এক জোড়া সিংহ। একই সময় আনা হয় চার জোড়া ওয়াইল্ড বিস্ট। দরপত্রের মাধ্যমে ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকায় সিংহ, ম্যাকাও, ওয়াইল্ড বিস্ট, ক্যাঙ্গারু, লামা আমদানি করা হয়। ফ্যালকন ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রাণীগুলো আমদানি করে বলেও সূত্র জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ৬ একর পাহাড়ি জমির ওপর গড়ে তোলা চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় নতুন অতিথি জলহস্তীসহ বাঘ, সিংহ, বানর, হরিণ, গয়াল, জেব্রা, কুমির, বানর, উল্লুক, ভালুক, শকুন, উঠপাখি, মেছোবাঘ, অজগর, টার্কিসহ নানা প্রজাতির পশুপাখি রয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার জমির পরিমাণ ১০ দশমিক ২ একর বলেও জানিয়েছেন কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানাকে একটি সমৃদ্ধ চিড়িয়াখানা বলেও অভিহিত করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅজ্ঞাতনামা আসামি নিয়ে প্রতারক চক্রের ফাঁদ
পরবর্তী নিবন্ধআরও ৬ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি