প্রত্যেক নাগরিকের মানবাধিকার নিশ্চিত করা জরুরি

| বুধবার , ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৮:০৯ পূর্বাহ্ণ

আজ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হচ্ছে। ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষা ও উন্নয়নের লক্ষে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গ্রহণ করে। এ ঘোষণার মাধ্যমে স্বীকৃত হয় মানবাধিকার সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। জন্মস্থান, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বিশ্বাস, অর্থনৈতিক অবস্থা কিংবা শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্বিশেষে মানবাধিকার সর্বজনীন ও সবার জন্য সমান। প্রতিটি মানুষ জন্মগতভাবেই এসব অধিকার লাভ করে। ঘোষণাপত্রের ৩০টি অনুচ্ছেদে প্রতিটি ব্যক্তির অধিকার ও রাষ্ট্রের দায়দায়িত্বের বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘোষণাপত্র গ্রহণের দিনটি প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোনো দেশ বা সমাজকে রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করার জন্য বা স্বার্থসিদ্ধির ক্ষেত্রে মানবাধিকারকে ভয়ঙ্কর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা সহজ এবং কার্যকরও বটে। মানবাধিকার নিয়ে বড় বড় বুলি আওড়ানো বিশ্বের কথিত ক্ষমতাধর ব্যক্তিনেতারা এর তোয়াক্কা করছে বলে মনে হচ্ছে না। বিভিন্ন পরিবেশে মানবাধিকার ব্যাখ্যার তারতম্যে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের অধিকার লঙ্ঘনের বিপুল উদাহরণে অধিকাংশক্ষেত্রে সমাজ পর্যুদস্ত। আন্তর্জাতিকভাবে কারা কীভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মানবাধিকার নিয়ে নোংরা রাজনীতি করছে তার স্বরূপ ইতিমধ্যে সর্বত্রই উন্মোচিত। সত্যবস্তুনিষ্ঠ মানদন্ডে মানবাধিকার বিষয়টি যথাযথ মূল্যায়ন করা না হলে দেশজাতিবিশ্ব প্রকৃত অর্থেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বিশ্বের ৩৮টি দেশ মানবাধিকার চূড়ান্তভাবে লঙ্ঘন করছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। সমপ্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেশগুলোর নাম তালিকাভুক্ত করেছে সংস্থাটি। জাতিসংঘের মহাসচিব বার্ষিক প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। এসব দেশ হত্যা, নির্যাতন ও নির্বিচারে গ্রেফতারের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযুক্ত করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ দেশগুলো চরমভাবে অধিকার কর্মীদের ওপর বলপ্রয়োগ করে। দেশগুলোকে দুটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। নতুন দমনপীড়নের ঘটনা লিপিবদ্ধ করার ক্যাটাগরিতে রয়েছে ২৯টি দেশ। আর পুরনো ঘটনার ধারাবাহিকতা বজায় থাকার ক্যাটাগরিতে রয়েছে ১৯ দেশ। দশটি দেশের নাম দুই ক্যাটাগরিতেই রয়েছে। জাতিসংঘ প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন করে ২৯ দেশ মানবাধিকার কর্মীদের ওপর দমনপীড়নে জড়িত হয়ে পড়েছে। চূড়ান্তভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় যেসব দেশে সেগুলো হলোবাহরাইন, ক্যামেরুন, চীন, কলম্বিয়া, কিউবা, কঙ্গো, জিবুতি, মিসর, গুয়াতেমালা, গায়ানা, হন্ডুরাস, হাঙ্গেরি, ভারত, ইসরায়েল, কিরগিজস্তান, মালদ্বীপ, মালি, মরক্কো, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, রাশিয়া, রুয়ান্ডা, সৌদি আরব, দক্ষিণ সুদান, থাইল্যান্ড, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, তুরস্ক, তুর্কমেনিস্তান এবং ভেনিজুয়েলা।

জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধানী মিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ১ হাজার ৪০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, যার মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে ১২১৩ শতাংশ ছিল শিশু। আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের বিগত সরকার এবং নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা বিচারবহির্ভূত হত্যা, সহিংসতা, নির্বিচার আটক ও নির্যাতনের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনে জড়িত ছিল। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানেই নয়, বছরের পর বছর ধরে দেশের শাসনব্যবস্থায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের হাতিয়ার হিসেবে আইনকে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন বিগত সময়ে কিছু কঠোর ও দমনমূলক আইন প্রণয়ন করেছিল, যা স্পষ্টভাবে মানবাধিকারের পরিপন্থী। এই আইনগুলো ভিন্নমত দমন, নির্যাতন এবং নিপীড়ন করে কর্তৃত্ববাদী শাসন টিকিয়ে রাখতে সহায়ক ছিল। বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) ছিল এমন একটি আইন (যা পূর্ববর্তী আইসিটি আইনের বিতর্কিত এবং দমনমূলক ৫৭ ধারার একটি পদচিহ্ন)। এ আইন বাংলাদেশে ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করেছিল, যার ভুক্তভোগী ছিলেন অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, এমনকি সাধারণ নাগরিকও।

গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদেও স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকারমূলক বিষয়গুলোর অন্যতম হলো, প্রত্যেক নাগরিকের মানবাধিকার নিশ্চিত করা এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করা।

বাংলাদেশের সংবিধানে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সব মানবাধিকার ও সুশাসনের নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে। সর্বস্তরে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন২০০৯ প্রণয়ন এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠন করা হয়েছে। দেশের সব নাগরিকের বিশেষ করে শিশু ও নারীর মানবাধিকার রক্ষায় সরকারিবেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি সর্বস্তরের জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬