প্রত্যেক নাগরিককে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে

| সোমবার , ১৬ অক্টোবর, ২০২৩ at ৪:৪৭ পূর্বাহ্ণ

আমাদের বাংলাদেশে সরকারি হিসাবে বেকারত্ব কমেছে। কিন্তু এখনো বেকারত্ব বড় সমস্যা হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) আগস্ট মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে দেশের মোট বেকার এখন ২৫ লাখ, যা আগের বছরের চেয়ে কমেছে। কিন্তু এখানে একটা বড় ফাঁক আছে বলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন। বিবিএসের সংজ্ঞায় বলা হয়, বেকার জনগোষ্ঠী মূলত তাঁরাই, যাঁরা গত সাত দিনে কমপক্ষে এক ঘণ্টাও কোনো কাজ করেননি। কিন্তু গত ৭ দিনে কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন এবং গত ৩০ দিনে বেতন বা মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে কোনো না কোনো কাজ খুঁজেছেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গাইডলাইনে যিনি কাজ করছেন অথচ প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ পাচ্ছেন না (সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজ করছেন না) তাঁকে আন্ডার এমপ্লয়মেন্ট হিসেবে গণ্য করা হয়। তাই বাস্তবতার সঙ্গে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব ঠিক মেলে না। এদিকে বড় বড় মেগা প্রজেক্টের কাজ প্রায় শেষের দিকে। প্রকল্প শেষ হলে এসব জায়গা থেকে আরও অনেক বেকার বাড়বে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশে কর্মমুখী শিক্ষার অভাবে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কমছে না। কারিগরি ও বিশেষায়িত শিক্ষায় যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের চাকরির বাজারে ভালো চাহিদা আছে। কিন্তু চাহিদানুযায়ী দক্ষ জনবল সরবরাহে আমাদের বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা যথোপযুক্ত ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলে আমাদের দেশের শিক্ষিত বেকারগণ ব্যর্থতা ও হতাশায় আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক সময় চেষ্টা ও সংগ্রামে বিফল হয়ে ধ্বংসাত্মক কাজে আত্মনিয়োগ করছে, যা কেবল তার নিজের বা পরিবারের জন্য নয়, গোটা সমাজের জন্য হয়ে উঠছে ভয়ঙ্কর। এমতাবস্থায় করণীয় হচ্ছে, এ সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় বের করা।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পিপিআরসিএর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থার নিশ্চয়তায় এখন কী ধরনের শিক্ষা প্রয়োজন সেদিকে নজর দেয়ার সময় এসেছে। কর্মসংস্থানের চাহিদা ও শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে একটি জাতীয় সমন্বয় প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে সমন্বিত একটি নীতিমালার আলোকে শিক্ষালয় স্থাপনের অনুমোদন ও তা সমপ্রসারণ অব্যাহত রাখা জরুরি। সেই সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থায় গুণগতমান নিশ্চিত করতে হবে।’

দেশ ও জাতির প্রধান সম্পদ হল এর দক্ষ জনশক্তি। পরিকল্পনা ছাড়া জনসাধারণকে দক্ষ শক্তিতে গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তাত্ত্বিক জ্ঞানের সাথে ব্যবহারিক জ্ঞানের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমেই শিক্ষার যথার্থ রূপান্তর ঘটানো যেতে পারে এবং জনগণকে জনসম্পদে পরিণত করাও সম্ভব হয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে কর্মমুখী শিক্ষার ভূমিকা অনস্বীকার্য।

বাংলাদেশের অধিক জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করতে পারলে আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব। জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনডিপি) এশিয়াপ্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানব উন্নয়ন সূচক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বর্ধিত জনসংখ্যাকে সম্পদ হিসেবে অভিহিত করেছিল। সংস্থাটির মতে, ২০৩০ সালে বাংলাদেশে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ১২ কোটি ৯৮ লাখে পৌঁছাবেযা হবে জনগোষ্ঠীর ৭০ শতাংশ। কিন্তু জনমিতির এই সুফল কাজে লাগাতে হলে প্রত্যেক নাগরিককে যেমন দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, তেমনি তাদের উপযুক্ত কাজের সংস্থানও করতে হবে।

গবেষক ও প্রাবন্ধিক হীরেন পণ্ডিত তাঁর এক লেখায় লিখেছিলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ভিত ও মান শক্ত না করেই একের পর এক উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছেযা সনদ বিতরণ করলেও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। আর এ কারণে বাংলাদেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর বেকার থাকা সত্ত্বেও অনেক খাতে উচ্চ বেতন দিয়ে বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তাদের যুক্তি, দেশে দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে। এর অর্থ দাঁড়ায় আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সময়ের চাহিদা মেটাতে পারছে না। ফলে এ অবস্থার অবসানের দিকেই সংশ্লিষ্টদের জোর দিতে হবে। কমংসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড কাজে লাগাতে হবে।

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একতৃতীয়াংশই তরুণ। এ দেশের কর্মসংস্থানেও তারুণ্যের ভূমিকা রয়েছে অসামান্য। আজকের তরুণরাই আগামী দিনে দেশ পরিচালনা এবং বড় বড় কাজের নেতৃত্ব দেবে। এখন থেকে যদি তরুণদের দক্ষ করে গড়ে তোলা যায়, তবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আরো সুন্দর হবে। তাই দেশ গঠনে তরুণদের চাওয়াকে যেমন গুরুত্ব দিতে হবে, ঠিক তেমনি তাদের পর্যাপ্ত সুযোগও দিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে