সাতকানিয়ার দক্ষিণ ঢেমশা চৌমুহনী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১৯ বছরেও পায়নি কোনো ভবন। অথচ আশপাশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দৃষ্টিনন্দন ভবন নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু কোনো ধরনের উন্নয়ন স্পর্শ করতে পারেনি নীরবে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাওয়া দক্ষিণ ঢেমশা চৌমুহনী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়কে। বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়া জরাজীর্ণ সেমিপাকা শ্রেণিকক্ষে চলছে পাঠদান। বেঞ্চের অভাবে দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এমন পরিস্থিতিতে শ্রেণি কার্যক্রম চালিয়ে নিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষকদের। ফলে এ বিদ্যালয়ের জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি ভবন বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
জানা যায়, দক্ষিণ ঢেমশার চৌমুহনী ও আশপাশের গ্রামে কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় এলাকার ছেলেমেয়েরা শিক্ষা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি উপলব্ধি করার পর ২০০৪ সালে সাতকানিয়ার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নুরুল আমিন একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তখন এলাকার কিছু দানশীল ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তির সহায়তায় দক্ষিণ ঢেমশা চৌমুহনী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্থানীয় লোকজনের আর্থিক অনুদানের টাকায় সেমিপাকা ৪টি শ্রেণিকক্ষ ও ২শ ৫০ জন ছাত্র–ছাত্রী নিয়ে বিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করে। তখন এলাকার মানুষের টাকায় চলেছে শিক্ষকদের বেতন। এক পর্যায়ে বিদ্যালয়টি ২০০৮ সালে নিম্ন মাধ্যমিক ও ২০২২ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতি পায়। ২০২০ সালে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করে। ২০২৩ সালে দক্ষিণ ঢেমশা চৌমুহনী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে এমপিওভুক্ত হয়। সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, অনেক আগেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়া জরাজীর্ণ সেমিপাকা শ্রেণিকক্ষে চলছে পাঠদান। প্রত্যেকটি কক্ষের ইটের দেয়ালগুলোতে বড় বড় ফাটল ধরেছে। চালের প্রায় প্রত্যেকটি টিনে ফুটো। উপরের দিকে তাকালে সেই ফুটো দিয়ে আকাশ দেখা যায়। সেখান দিয়ে শ্রেণিকক্ষে ঢুকছে সূর্যের আলো। আবার বৃষ্টির সময় শ্রেণিকক্ষে গড়িয়ে পড়ছে বৃষ্টির পানি। ক্লাসে পর্যাপ্ত বেঞ্চও নাই। ফলে প্রত্যেকটি ক্লাসে গাদাগাদি করে বসছে ছাত্র–ছাত্রীরা। আবার বসার জায়গা না পেয়ে অনেকে দাঁড়িয়ে থেকে ক্লাস করছে। শ্রেণিকক্ষে বসার জায়গা না পেয়ে কয়েকজন ছাত্রকে বাইরে ঘোরাঘুরি করতেও দেখা গেছে। বর্তমানে শ্রেণি কার্যক্রম চালিয়ে নিতে অনেক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শিক্ষকরা।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী সিফাত আক্তার, তছলিমা আক্তার, সাইমা আক্তার ও অষ্টম শ্রেণির ছাত্র নাফিজ উদ্দিন জানায়, শ্রেণিকক্ষের দেয়ালগুলো এমনভাবে ফাটল ধরেছে সেখানে বসে ক্লাস করতে সত্যিই ভয় লাগে। চালের টিন ফুটো হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি গড়িয়ে বাইরে পড়ার আগে শ্রেণিকক্ষের ভেতর পড়ে। কক্ষের ভেতর বৃষ্টি পানিতে ভিজে একাকার হয়ে যেতে হয়। বর্ষার সময় প্রতিদিন স্কুল থেকে ঘরে গিয়ে ভেজা বই শুকাতে দিতে হয়। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমাদের বিদ্যালয়ের জন্য একটি নতুন ভবন বরাদ্দ চাই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহেদুল আনোয়ার চৌধুরী জানান, পুরাতন সেমিপাকা শ্রেণিকক্ষগুলো অনেক আগেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। তবুও ঝুঁকি নিয়ে সেখানে পাঠদান চালাতে হচ্ছে। নতুনভাবে সেমিপাকা কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে সংকুলান না হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করতে হচ্ছে। তিনি জানান, বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৪ শতাধিক ছাত্রছাত্রী রয়েছে। অতীতে আমাদের শিক্ষার্থীরা অন্য বিদ্যালয়ের নামে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতো। আগামী বছর থেকে আমাদের বিদ্যালয়ের নামে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। বর্তমানে শ্রেণিকক্ষ ও বেঞ্চ সংকটের কারণে ঠিকভাবে পাঠদান সম্ভব হচ্ছে না।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমদ লিটন জানান, পুরাতন শ্রেণিকক্ষগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম–১৫ আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী ও এলাকার বিত্তশালী কয়েকজন মানুষের সহায়তায় নতুনভাবে সেমিপাকা কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ তৈরি করেছি। কিন্তু সেখানে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে জরাজীর্ণ শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নিতে হচ্ছে। বেঞ্চ সংকট থাকায় অনেক ছাত্র–ছাত্রীকে দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দুঃখের বিষয় হলো প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১৯ বছর পরও বিদ্যালয়টি সরকারিভাবে কোনো ভবন বরাদ্দ পায়নি। বর্তমানে সেমিপাকা যে কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ তৈরি করেছি সেগুলো না করলে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হতো। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য বিদ্যালয়ে একটি ভবন খুবই প্রয়োজন। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়ে একটি ভবন বরাদ্দের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
চট্টগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার সরকার জানান, চট্টগ্রাম–১৫ আসনের এমপি মহোদয় দক্ষিণ ঢেমশা চৌমুহনী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের জন্য একটি ডিও লেটার দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের ভবনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বিবেচনা করে বরাদ্দের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম–১৫ আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী জানান, দক্ষিণ ঢেমশা চৌমুহনী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভবন বরাদ্দের জন্য ডিও লেটার দেয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি ভবন বরাদ্দ দেয়া হবে। এছাড়া বিদ্যালয়ের জন্য আমি ব্যক্তিগত তহবিল থেকেও সহযোগিতা করেছি।