প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পাচ্ছেন মেয়র শাহাদাত

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২১ এপ্রিল, ২০২৫ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেতে যাচ্ছেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণে গতকাল রোববার স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারি হলে ডা. শাহাদাত হবেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ইতিহাসে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পাওয়া পঞ্চম মেয়র।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজাদীকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী প্রতিমন্ত্রী মর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে সামারি আকারে ফাইল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করা হবে। প্রধান উপদেষ্টা অনুমোদন দিলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। যেহেতু প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি পূর্ব থেকে অবগত, তাই ধারণা করছি কালপরশু বা এ সপ্তাহের মধ্যেই ডা. শাহাদাত হোসেনকে প্রতিন্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।

জানা গেছে, নগরের সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় নিশ্চিতে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা চেয়ে গত বছরের (২০২৪) ৩ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি ডিও দেন মেয়র শাহাদাত। গতকাল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে দেওয়া চিঠির সঙ্গে ডিওটি সংযুক্ত করা হয়।

মন্ত্রণালয়ে দেওয়া উপানুষ্ঠানিক পত্রটিতে ডা. শাহাদাত হোসেন দাবি করেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন চট্টগ্রাম নগরীর উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব যে সকল সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার উপর অর্পিত হয়েছে সেগুলোর প্রত্যেকটি পৃথক আইন দ্বারা পরিচালিত। জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বন্দর কর্তৃপক্ষ, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের সাথে নগরের উন্নয়ন কাজে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত। এই সকল সরকারি দপ্তরের সাথে সমন্বয়ের লক্ষ্যে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত মেয়রকে প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা প্রদান করা হলে সিটি কর্পোরেশনের সার্বিক কার্যক্রম অধিকতর বেগবান হবে’।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় চসিকের ষষ্ঠ পরিষদের নির্বাচন। এ নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। নির্বাচনে ভোট পড়ে ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ। নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ডা. শাহাদাত। তিনি ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট পান। তবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরীকে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৪৮ ভোট দেখিয়ে নির্বাচিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। একই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন রেজাউল করিম। তাকে ২০২২ সালের ২২ আগস্ট প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

এর আগে ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ডা. শাহাদাত ৯ জনকে বিবাদী করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন। ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর চট্টগ্রামের প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক খাইরুল আমিন ডা. শাহাদাতকে মেয়র ঘোষণা করে এ মামলার রায় দেন। রেজাউল করিম চৌধুরীর মেয়র নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করেন। পাশাপাশি ১০ দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবকে নির্দেশ দেন। এরপর ৮ অক্টোবর ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। সর্বশেষ একই বছরের ৩ নভেম্বর শপথবাক্য পাঠ করেন তিনি। এর আগে সরকার পতনের পর ১৯ আগস্ট চট্টগ্রামসহ দেশের ১২ সিটি কর্পোরশনে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে ১৭ অক্টোবর চসিক থেকে প্রশাসক বাদ দেওয়া হয়।

চসিকের ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রামের প্রথম মেয়র হিসেবে শপথ নেন জাতীয় পার্টির মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি ছিলেন চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় অভিষিক্ত প্রথম ব্যক্তি। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত মেয়র ছিলেন বিএনপির মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। তিনিও প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পান। ১৯৯৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত টানা তিন বছর মেয়র ছিলেন প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র হওয়ার পর ২০০২ সালের ১৪ অক্টোবর তাকে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা ও সুযোগসুবিধা প্রদান করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরপর ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপির মোহাম্মদ মনজুর আলম এবং ২০১৫ সালের আগস্ট থেকে ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগের আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করেন। এদের কাউকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৫,৩৩২ কোটি টাকার বড় দুটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন
পরবর্তী নিবন্ধনগরে ফুটপাতে হকার বসবে বিকাল ৩টা থেকে রাত ১১টা