প্রকোপ বাড়ছে ডেঙ্গু-করোনার

স্বাস্থ্যবিধি মানা ও জ্বর হলে অবহেলা না করার পরামর্শ চট্টগ্রামে গতকাল করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৯ জন এবং ডেঙ্গু ৫ জন

জাহেদুল কবির | সোমবার , ১৬ জুন, ২০২৫ at ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ

দেশে একইসাথে স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গু এবং করোনা। বছর দুয়েক ধরে বছরের মাঝামাঝি সময়টাতে ছড়ি ঘুরাচ্ছিল ডেঙ্গু। তাই ডেঙ্গু নিয়ে এবারও প্রস্তুতি ছিল স্বাস্থ্য বিভাগের। তবে হঠাৎ করে করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টে লোকজন আক্রান্ত হলে সবার মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে করোনা মোকাবেলায় বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে সেইসব নির্দেশনা নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা নেই। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে জনসমাগম এড়িয়ে চলা কিংবা ন্যূনতম মাস্ক ব্যবহারের দিকে কারো নজর নেই।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার এই ভ্যারিয়েন্টটি যেহেতু অতি সংক্রামক, তাই স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নাই। সামান্য অবহেলা বয়ে আনতে পারে বিপদ। অন্যদিকে একই সাথে ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রকোপও বাড়ছে। জ্বর হলে অবশ্যই ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। যদিও করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টে জ্বর নাও হতে পারে। তারপরেও করোনা এবং ডেঙ্গু পরীক্ষা একসাথে করাতে হবে। ইতোমধ্যে করোনা পরীক্ষার কিটের সমাধান হয়েছে। চট্টগ্রামে সরকারি পর্যায়ে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে করোনা পরীক্ষা।

এদিকে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৯ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে ৮ জন নগর ও একজন উপজেলার। করোনা পরীক্ষা কিট এবং জনবল সংকটের কারণে এখনো সরকারি পর্যায়ে করোনা পরীক্ষা শুরু করা সম্ভব হয়নি। গতকাল চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে ২৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় একজনের করোনা শনাক্ত হয়। এছাড়া এপিক হেলথ কেয়ারে ৪৯ জনের নমুনার মধ্যে ৪ জন, পার্কভিউ হাসপাতালে ৫৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ জন এবং এভার কেয়ার হাসপাতালে ১৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় দুইজনের করোনা শনাক্ত হয়। এ নিয়ে গত কয়েকদিনে চট্টগ্রামে জেলাউপজেলায় মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছে ১৮জন। অপরদিকে গতকাল নতুন করে আরো ৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ২জন পুরুষ, একজন নারী এবং ২জন শিশু রয়েছে। এই নিয়ে চলতি মাসে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৪৭ জন। তবে কেউ মারা যাননি। চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৩১৬ জন এবং মারা গেছে ২ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না। অনেক রোগী ডেঙ্গু পরীক্ষার (এনএসওয়ান) রিপোর্ট পজিটিভ হওয়ার সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন। এটির আসলে কোনো দরকার নেই। ডেঙ্গুর প্ল্যাটিলেট কাউন্ট ১০ হাজারের নিচে নেমে গেলে তখন কেবল রোগীর শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়। তখন জরুরি চিকিৎসা কিংবা নিবিড় পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন পড়ে। অন্যদিকে রক্তের প্ল্যাটিলেট কমা শুরু হয় জ্বর কমে যাওয়ার পর পর। তখন শারীরিক কিছু অসুবিধা দেখা দেয়। ওই সময় হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে প্ল্যাটিলেট নিয়ে আতঙ্ক লক্ষ্য করা যাচ্ছে, আসলে প্ল্যাটিলেট যখন বাড়া শুরু হয় তখন দ্রুতই বাড়ে। কাজেই ডেঙ্গু জ্বর হলেই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। অন্যদিকে কেউ করোনা আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে বাসায় চিকিৎসা নিতে পারবেন। তবে করোনা যেহেতু সংক্রামক রোগ, তাই রোগীকে আলাদা ঘরে থাকতে হবে। অন্তত ১৪দিন কোয়ারাইন্টাইনে থাকতে হবে। কেবল শ্বাসকষ্ট কিংবা অন্যান্য জটিলতা দেখা দিলে হাসপাতালে যেতে হবে। না হলে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, করোনা পরীক্ষার কিট এসেছে। তাই সরকারি পযায়ে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আজ (গতকাল) থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এছাড়া ডেঙ্গু পরিস্থিতি গতবারের তুলনায় ভালো আছে। তারপরেও আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। মশক নিধনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কাজ করছে। আমরা বারবার যে কথাটা বলিনাগরিকদের সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে ফুলের টব, ডাবের খোসা এবং বাড়ির ছাদে যাতে পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া বাড়ির আশপাশ পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সচেতনতা বাড়লে ডেঙ্গু প্রতিরোধ অনেক সহজ। আর করোনার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যেহেতু আমাদের করোনা মোকাবেলার অভিজ্ঞতা আছে, তাই নতুন করে কিছু বলার দরকার নাই। নিজে সুরক্ষিত থাকলে পরিবারের অন্যরা সুরক্ষিত থাকবে। বিশেষ করে সবাইকে অন্তত মাস্কটা পড়তে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজ্বালানি তেল নিয়ে বাংলাদেশেও নেতিবাচক প্রভাবের শংকা
পরবর্তী নিবন্ধআছেন জেলে, নিজেকে অসুস্থ দাবি করে ছুটির আবেদন