প্রকৃতির এত আয়োজনেও কেন পিছিয়ে রাঙামাটি?

প্রান্ত রনি, রাঙামাটি | শুক্রবার , ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের এক দশমাংশ জুড়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম। পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘রাজধানী’ বলা হয়ে থাকে রাঙামাটি জেলাকে। দেশের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের এই পাহাড়ি জেলাটির পর্যটন শিল্প গড়ে উঠেছে বিশেষত পাহাড় ও কাপ্তাই হ্রদ কেন্দ্রিক। রাঙামাটি জেলার পর্যটনকে সমৃদ্ধ করেছে বিশালাকার জলাশয়ের কাপ্তাই হ্রদ। বিস্তীর্ণ জলাধার কাপ্তাই হ্রদকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে এই জেলার ছোটবড় পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র। মানুষের কাছে দেশের পর্যটনে আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র রাঙামাটির পর্যটন। ভৌগোলিক ও আয়তনের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় জেলা রাঙামাটির বাঘাইছড়িতেই অবস্থিত সাজেক ভ্যালি উপত্যকা। এছাড়া ‘সিম্বল অব রাঙামাটি’ হিসেবে সুখ্যাতি পাওয়া ঝুলন্ত সেতু রাঙামাটির অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। রয়েছে সুবলং জলপ্রপাত বা ঝর্ণা, বিলাইছড়ির ধুমপানিসহ নাম জানা নাজানা ছোটবড় অনেক গিরি নির্ঝর। তবুও এত কিছুর পরও পাহাড়ি এই জেলায় পর্যটকদের ‘আশানুরূপ’ আগমন না ঘটা নিয়ে হতাশা পর্যটন খাতসংশ্লিষ্টদের মনে। প্রকৃতি তার পুরো রূপলাবণ্য রাঙামাটিকে ছড়িয়ে দিলেও এখানকার পর্যটনে সরকারি বা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা নেই বললেই চলে।

এদিকে, ব্যক্তিগত উদ্যোগ নির্ভর হয়ে ছোট পরিসরে বাড়ছে রাঙামাটি জেলার পর্যটনশিল্পের পরিসর। সরকারি প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক কয়েকটি পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র গড়ে উঠলেও যা থেকে রাঙামাটির খাতসংশ্লিষ্টতার উদ্যোগ পিছিয়ে রয়েছে। মূলত পুঁজি সংকট, ব্যাংক ঋণ পেতে জটিলতাসহ বড় আর্থিক উৎসের অভাবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে পর্যটনের প্রসারে প্রধান প্রতিবন্ধকতা। এছাড়া পাহাড়ে ‘নিরাপত্তাজনিত’ কারণে বিদেশি পর্যটক আসার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার কারণে বিদেশি পর্যটক নেই বললেই চলে। বিদেশি পর্যটক টানতে এশিয়ার দেশ মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান, ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ আশপাশের দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে নিরাপত্তাজনিত বিষয় ছাড়াও চাহিদা উপযোগি ‘বিশেষ’ কোনো উদ্যোগ নেই। রাঙামাটির পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে নৌপথে ভ্রমণ। রাঙামাটি জেলা শহরে অবস্থিত পর্যটন করপোরেশনের ঝুলন্ত সেতু, পর্যটন মোটেল, নীলাঞ্জনা বোট ক্লাব, পলওয়েল পার্ক, ডিসি বাংলো পার্ক, বনরূপা সমতাঘাটের ভাসমান মৌসুমি ফলের বাগান, গাঙ সাবারাঙ, রঙ রাং, চাকমা রাজবাড়ি, রাজবন বিহার, রাঙাদ্বীপ, আরণ্যক, হিল তাজমহল, ভিভাইন লেক আইল্যান্ডসহ শহর এলাকায় অবস্থিত প্রায় সব পর্যটনকেন্দ্রে নৌপথে যাতায়াত করা সহজলভ্য। এছাড়া বরকল উপজেলায় অবস্থিত সুবলং ঝর্না, বিভিন্ন পাহাড়ি গ্রাম, সুবলং বাজার, কাপ্তাইআসামবস্তি সড়কে বিনোদনকেন্দ্র বার্গী লেকভ্যালি, বেরান্নে, বড়গাঙ, ইজোর, জুমকিং, রাইন্যা টুগুন ইকো রিসোর্টসহ কাপ্তাই হ্রদের মাঝে কিংবা ঘেঁষে গড়ে উঠা রেস্টুরেন্ট, রিসোর্টকটেজ, পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রে হ্রদ ভ্রমণ করে ঘুরে বেড়ানো যায় সহজেই। হ্রদকেন্দ্রিক ঘুরে বেড়ানোর রয়েছে প্রায় দুই শতাধিক ট্যুরিস্ট বোটও। এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নতুন করে যুক্ত হয়েছে হাউজবোট। রাঙামাটি শহরকেন্দ্রিক প্রায় ১৫২০টি হাউজবোট পর্যটকদের বুকে নিয়ে চষে বেড়ায় কাপ্তাই হ্রদে। সুবিধা আছে হ্রদের সবুজের হাউজবোটে রাত্রিযাপনেরও।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রান্তিকলেক বান্দরবানে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে
পরবর্তী নিবন্ধপাহাড়-সমুদ্রে নৈসর্গিক মুগ্ধতা দরকার আরেকটু উদ্যোগ