প্রকৃতিতে শামুকখোলের টিকে থাকা

পরিযায়ী থেকে দেশীয় পাখি

প্রান্ত রনি, রাঙামাটি | সোমবার , ৫ মে, ২০২৫ at ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

এক সময় ‘পরিযায়ী পাখি’ হিসেবে পরিচিতি থাকলেও এখন বাংলাদেশেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছে শামুকখোল বা ‘এশিয়ান ওপেনবিল’। যে কারণে শামুকখোল এখন দেশীয় পাখি হিসেবে বেশ পরিচিত। দেশের সমতল, উপকূলীয় ও হাওর অঞ্চল ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদসহ বিভিন্ন এলাকায় শামুকখোল দেখা যায়।

বন্যপ্রাণী ও পাখি গবেষকরা বলছেন, ফাঁদ দিয়ে শিকারসহ নানান কারণে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে এখন আর আগের মতো এশিয়ান শামুকখোল দেখা যাচ্ছে না। প্রকৃতিতে বন্যপ্রাণী কমে যাওয়ার প্রধান কারণগুলোই মনুষ্যসৃষ্ট। বন্যপ্রাণী ও পাখি প্রজাতিকে প্রকৃতিতে টিকিয়ে রাখতে হলে নিরাপদ আশ্রয়স্থল গড়ার পাশাপাশি শিকার বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। সমপ্রতি রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলার শলক নদ তীরবর্তী এলাকায় অবাধে বিচরণ করতে দেখা গেছে এশিয়ান শামুকখোলের কয়েকটি ঝাঁক। গ্রীষ্মে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকানোর সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠে জুরাছড়ির শলক নদ। নদের দুই পাশের বিস্তৃত তীরে ঝাঁকে ঝাঁকে খাদ্য সংগ্রহ করছে শামুকখোল। ওই এলাকা থেকে শামুকখোল পাখির ছবি তুলেছেন আলোকচিত্রী রূপায়ন চাকমা। জানতে চাইলে রূপায়ন চাকমা আজাদীকে বলেন, রাঙামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলায় যাওয়ার পথে শলক নদের পাড়ে শামুকখোল নিরাপদ আশ্রয়স্থল গড়ে তুলেছে। এই পাখিগুলোকে স্থানীয় ভাষায় বক পাখি বলা হয়। শলক নদের পাড়ে স্বাধীনভাবে চলাফেরা, আবাসস্থল নির্ধারণ করেছে শামুকখোল। পাখিগুলো যেন নিরাপদে চলাফেরা করতে পারে; তাই স্থানীয়দের কাছে আমাদের প্রত্যাশা কেউ যেন পাখি শিকার না করে।

জানা গেছে, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) ২০০০ সালে বাংলাদেশের বিপন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী নিয়ে একটি লাল তালিকা প্রকাশ করে। এরপর ২০১৫ সালে আরেকটি লাল তালিকা প্রকাশ করে সংস্থাটি। এরপর দেশে আর কোনো গবেষণা বা লাল তালিকা প্রকাশ হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের বন্যপ্রাণী ও পাখি নিয়েও নেই কোনো জরিপ বা পরিসংখ্যান। স্থানীয় গবেষক ও প্রকৃতিপ্রেমীরা মনে করেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবেশ প্রকৃতি নিয়ে জরিপ কার্যক্রম প্রয়োজন।

বায়োডাইভার্সিটি কনজারভেশন সোসাইটি অব সিএইচটির প্রধান সংগঠক প্রকৌশলী সবুজ চাকমা আজাদীকে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় আগে শামুকখোল পাখি প্রচুর দেখা যেতো। সামপ্রতিক বছরগুলোতে সেটি অনেক কমে গেছে। রাঙামাটির জুরাছড়ির উপজেলার নৌপথে যেভাবে শামুকখোল পাখির বিচরণ দেখা যাচ্ছে; এটা খুবই ইতিবাচক দিক। আমাদের এই পাখিগুলো শিকার বন্ধ ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল নিশ্চিতে ভূমিকা রাখতে হবে। যেন কেউ শিকার করতে না পারে। যারা বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদেরকেও আরও তৎপর হওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে এখানে স্থানীয় পর্যায়ে পাখি শুমারি করা দরকার। এতে করে আমরা বুঝব পারব পাখির প্রজাতির বেড়েছে নাকি কমেছে।

বন অধিদপ্তরের জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতি সংরক্ষণ কর্মকর্তা দ্বীপান্বিতা ভট্টাচার্য্য আজাদীকে বলেন, ২০১৫ সালে সর্বশেষ আইইউসিএন একটা জরিপ করেছিল বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে। এরপর আর কোনো জরিপ হয়নি গত এক দশকে। যে কোনো প্রাণীর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে তার পূর্বের তথ্যগুলোও জানা জরুরি। জরিপ হলে বোঝা যায় কোন কোন প্রাণী বিলুপ্তি বা বিপন্ন হতে চলেছে আবার কোন কোন প্রাণীর প্রকৃতিতে উপস্থিতি বাড়ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএলপি গ্যাসের দাম কমল ১৯ টাকা
পরবর্তী নিবন্ধএখনও ১০ হাজার হজযাত্রীর ভিসা আবেদন বাকি, সময় শেষ আজ