প্যারাবন নিধন, হুমকির মুখে সোনাদিয়ার জীববৈচিত্র্য

ফরিদুল আলম দেওয়ান, মহেশখালী | শনিবার , ৮ জুন, ২০২৪ at ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজার শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের বাঁকখালীর মোহনায় প্রায় ৯ হাজার একর আয়তনের ছোট্ট দ্বীপের নাম ‘সোনাদিয়া’। নৃবিজ্ঞানীদের মতে, একসময় দ্বীপটিতে মুক্তার চাষ হতো এবং তা সোনার দামে বেচাবিক্রি হতো বলে দ্বীপের নামকরণ হয়েছে সোনাদিয়া। প্রাণ প্রকৃতির বৈচিত্র্যে ভরপুর ৭ কিমি দৈর্ঘ্যের এই দ্বীপের উত্তরপূর্ব দিকে প্যারাবন এবং পশ্চিম, দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে সমুদ্র সৈকত। এক সময় সৈকতজুড়ে লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ ছিল চোখে পড়ার মতো। গভীর সমুদ্র থেকে ডিম পাড়তে আসা মা কচ্ছপের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। প্যারাবনে বসতো বিলুপ্ত প্রজাতির পাখিসহ শত প্রজাতির পাখির মেলা। কিন্তু এখন আর আগের সেই জৌলুস নেই। প্যারাবন নিধনসহ মনুষ্য সৃষ্ট বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মযজ্ঞের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, দ্বীপের পূর্ব পাড়া থেকে পশ্চিম পাড়া পর্যন্ত সাত কিলোমিটার সৈকত প্লাস্টিক বর্জ্যে ভরপুর। জোয়ারে ভেসে আসা বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক পণ্য, বোতল, প্লাস্টিকের ক্যান, স্যান্ডেল, পলিথিন ব্যাগ, মাছ ধরার জাল, মেডিকেল বর্জ্যসহ বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তবে এসব বর্জ্য কোন জায়গা থেকে আসে তার উৎস জানা নেই স্থানীয়দের।

বেসরকারি সংস্থা নেচার কনজার্ভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) এর জেলা ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম বলেন, সোনাদিয়ায় প্রতিদিন কোনো না কোনো স্থানে অবৈধভাবে এঙকাভেটর দিয়ে পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে দখলদারেরা। ধ্বংস করছে প্যারাবন। যার কারণে পরিবেশ সংকটাপন্ন। এ অবস্থায় কমে যাচ্ছে ‘চামচটুটো বাটান’ পাখি। শীতকালে সাইবেরীয় অঞ্চল থেকে যে পাখিগুলো আসতো এগুলো কমতে শুরু করেছে। এছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে বেশকিছু অমেরুদন্ডী প্রাণী, বিভিন্ন মাছ ও কাঁকড়া।

তিনি বলেন, এখানে ২০ থেকে ৩০০ প্রজাতির শামুক ঝিনুক এবং ২৫০ থেকে ৩০০ প্রজাতির মাছ এবং ৭০ প্রজাতির পাখি আছে। এই প্রাণীগুলোর নার্সারি গ্রাউন্ড হলো ম্যানগ্রোভ। তিনি বলেন, মারা যাওয়া কচ্ছপ এবং বেশকিছু পাখির পেটে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। প্লাস্টিকের কারণে সোনাদিয়ায় সামুদ্রিক প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। বর্তমানে সোনাদিয়া দ্বীপে ৪৫ প্রজাতির পাখি দেখা যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং পরিবেশ বিনষ্টের কারণে প্রাণ প্রকৃতির অনেক কিছুর বিলুপ্তি ঘটেছে। আর পৃথিবীতে যে ৩০০এর মতো চামচঠুঁটো কাদাখোঁচা (স্যান্ডপাইপার) পাখি আছে, তার উল্লেখযোগ্য অংশ দেখা যায় সোনাদিয়ার প্যারাবনে। প্যারাবন উজাড় করে চিংড়িঘের নির্মাণ করায় চামচঠুঁটো বাটানসহ অন্যান্য পাখির বিচরণ চোখে পড়ে না। এমতাবস্থায় সোনাদিয়ার জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে সরকারি বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকেও সচেতন হতে হবে।

মহেশখালী উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীন গত বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেন, মহেশখালীর পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় প্যারাবন ধ্বংসকারীদের চিহ্নিত করে তা রোধ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনাসিরাবাদে কোল্ড স্টোরেজ থেকে ১ মেট্রিক টন জাটকা জব্দ
পরবর্তী নিবন্ধফুটবল খেলতে গিয়ে বজ্রপাতে মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যু