করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে পোশাক রপ্তানিতে ফের দেখা দিয়েছে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি। ইতোমধ্যে অনেক বিদেশী ক্রেতা পোশাকের রপ্তানির আদেশ বাতিল করে দিয়েছেন। আবার যারা বহাল রেখেছেন তারা রপ্তানির সময়সীমা পিছিয়ে দিয়েছেন। ফলে দেশের পোশাক শিল্প আরেক দফা সংকটের মুখে পড়েছে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। পোশাক কারখানা মালিকরা জানান, এমনিতে গত বছর থেকে পোশাক শিল্পে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এরমধ্যেই সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে করোনা ভাইরাসে। অনেক কারখানা মালিক রপ্তানি আদেশ সংকটে কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। কেউ আবার কোনো মতে সাব কন্ট্রাক্টে কাজ করে ঠিকে আছেন।
পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৯ সালের মে মাসের তুলনায় চলতি বছরের মে মাসে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৬২ দশমিক ৬ শতাংশ। এছাড়া জুনে ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ এবং জুলাইয়ে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমেছে। তবে চলতি আগস্ট মাসে গত বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে বেড়েছে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। এই দুই মাস প্রবৃদ্ধি বাড়লেও গত অক্টোবর ও নভেম্বরে প্রবৃদ্ধিতে আবারও ঋণাত্মক ধারায় প্রবাহিত হয়েছে। অক্টোবরে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং নভেম্বরে কমেছে ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এদিকে গত ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে রপ্তানিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩০ দশমিক ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্জিত হয়েছে ২৮ দশমিক ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ। এছাড়া গত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩০ দশমিক ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্জিত হয়েছে ৩০ দশমিক ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তখন প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অন্যদিকে গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্জিত হয় ৩৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ। গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্জিত হয়েছে ২৭ দশমিক ১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি কমেছে ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ। অপরদিকে চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রপ্তানিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। তবে অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ১২ দশমিক ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
বিজিএমইএ সূত্রে আরো জানা গেছে, গত ২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত এই ৫ বছরে পোশাক রপ্তানি মূল্য হারিয়েছে গড়ে প্রায় ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এছাড়া গত সেপ্টেম্বর মাসে সারা পৃথিবীতে আমাদের পোশাকের দরপতন হয় ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এই দরপতন ছিল ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। দরপতনের এই ঋণাত্মক ধারা অব্যাহত রেখে সারা বিশ্ব বাজারে দেশের পোশাকের দরপতন হয়েছে অক্টোবর মাসে ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং নভেম্বরে ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। বর্তমানে বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত ৪ হাজার ৬০০ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এক হাজার ৬০০ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি ৩ হাজার মধ্যে ২ হাজার প্রতিষ্ঠানে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চলমান আছে। করোনা পরিস্থিতিতে চলতি মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় ২৯০টি এবং চট্টগ্রামে ৩৫টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে শুধুমাত্র চট্টগ্রামে ৬৮৮টি পোশাক কারখানার মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ৩৯৪টি, বাকি ২৯৪টির মধ্যে বর্তমানে ১৭৮টি আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে নিয়োজিত আছে। অর্থাৎ চট্টগ্রামে চার তৃতীয়াংশ কারখানায় আমদানি-রপ্তানির কোনো অর্ডার নেই।
জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি এ এম চৌধুরী সেলিম দৈনিক আজাদীকে বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে ইতোমধ্যে আমাদের রপ্তানি আদেশ কমা শুরু হয়ে গেছে। সেই ধারায় গত দুই মাসে আমাদের রপ্তানিতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। করোনার প্রভাবে আমাদের কারখানার কাঁচামাল আমদানিও আগের চেয়ে স্লো হয়ে গেছে। অনেক ক্রেতা আমাদেরকে পণ্য বুঝে পাওয়ার ৩০দিনের মধ্যে পেমেন্ট দিয়ে দিতো। এখন সেটি ৬০ থেকে ১২০ দিনেও দিচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা দেশের পোশাক রপ্তানির পজিটিভ গ্রোথ রাখার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।