অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের পোশাক প্রস্তুতকারকদেরকে জাতি পুনর্গঠনে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে একটি ভগ্ন অর্থনীতি পেয়েছে এবং তারা এখন দেশকে ঠিক করার এবং একে প্রবৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়ার কঠিন কাজের সম্মুখীন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নিজ কার্যালয়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) নেতাদের উদ্দেশে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সব প্রতিষ্ঠান ভেঙে গেছে। আমরা একটা বিশৃঙ্খল অবস্থায় পড়েছি। তারা আমাদেরকে অর্থনৈতিক সংকটে ফেলে গেছে। কিন্তু সবার সহযোগিতায় আমরা দেশকে পুনর্গঠন করতে পারব।
১৫ আগস্ট দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব কথা জানা যায়। এতে আরো জানা যায়, জাতির এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বকে পূর্ণ সমর্থন করেন। তাঁরা এ খাতের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠনের দাবি জানান। তাঁরা বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহায়তা কামনা করেন। তাঁরা শিথিল ঋণ পরিশোধ এবং ইউটিলিটি বিল পরিশোধসহ কয়েকটি দাবি উপস্থাপন করেন। অধ্যাপক ইউনূস ধৈর্য সহকারে তাঁদের কথা শোনেন এবং তাঁদের দাবিগুলো বিবেচনার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রফেসর ইউনূস বলেন, আমরা প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করব। বাংলাদেশের জনগণের অসীম প্রতিভা রয়েছে। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। আমরা চাই এটি আরো প্রসার লাভ করুক।
বলা জরুরি যে, আমাদের দেশের অর্থনীতিতে তৈরি পোশাক খাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই শিল্পে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল রয়েছে অন্তত পাঁচ কোটি মানুষ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক তথ্যে জানা যায়, এলডিসি তালিকা থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি হিসেবে পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা বা ভর্তুকি কমানোর প্রথম ধাপে গত সরকার বিভিন্ন পণ্যে ১০ শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা কমিয়েছিল। তৈরি পোশাক খাতের পাঁচটি পণ্যে প্রণোদনা বাদ দেওয়া হয়েছিল। খাতসংশ্লিষ্টরা বলেছিলেন, ‘তাদের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা না করে প্রণোদনা তুলে দেওয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। ছয় মাস আগে ক্রয়াদেশ নেওয়া হয়। অর্ডার নেওয়া হয়েছিল প্রণোদনার ওপর ভিত্তি করে। এখন প্রণোদনা তুলে নিলে অর্ডার মার খাবে। নতুন করে ক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষি করতে হবে। নতুন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে পুরো পোশাক খাত।’ চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়লেও প্রতিবছরই উঠে দাঁড়িয়েছে দেশের শীর্ষ রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্প। প্রতিবছর এই খাতে গড়ে ১৩৪টি নতুন কারখানা স্থাপিত হচ্ছে বলে জানা যায়। তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর উদ্ধৃতি দিয়ে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ‘২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে দেশে ৬০৩টি কারখানা সংগঠনটির অস্থায়ী সদস্যপদ নিয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী সদস্যপদ পেয়েছে ৫৬৫টি কারখানা (বছরে গড়ে ৯৪টি) স্থায়ী পদ পেয়েছে। এসব কারখানার মধ্যে অর্ধেকই হয়েছে ২০২২ ও ২০২৩ সালে। পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলেন, করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হওয়ায় পোশাক রপ্তানি বড় ধরনের হুমকির মধ্যে পড়ে। তখন অনেক উদ্যোক্তাই নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। সেই জায়গা থেকে ব্যবসা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। শুধু তা–ই নয়, নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের মধ্যে নতুন কারখানা গড়ে উঠেছে, যা পোশাকশিল্পের জন্য ইতিবাচক।’
এই সমস্ত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়েও বলতে দ্বিধা নেই, বর্তমানে তৈরি পোশাক খাত নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে রপ্তানি কমছে। মূল্যস্ফীতির কারণে বিশ্ববাজারে পোশাকের চাহিদা কমছে। ডলার সংকটের কারণে সরঞ্জামাদি আমদানি করা যাচ্ছে না। নতুন করে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে গ্যাস–বিদ্যুতের সমস্যা তো আছেই। সেই অবস্থায় নতুন বাজারের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, নতুন বাজারগুলোর মধ্যে একেক গন্তব্যের ভোক্তাদের চাহিদা একেক রকম, কমপ্লায়েন্স কিংবা শুল্ক কাঠামোও ভিন্ন। ফলে বাজারগুলোর সম্ভাবনা কাজে লাগাতে আলাদাভাবে পরিচর্যা করতে হবে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে পারে এই খাত। তাই পোশাকশিল্পের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে।