পেটে ডিম নিয়ে সৈকতে ভেসে এলো আরও ৪টি মৃত মা কাছিম

কক্সবাজার প্রতিনিধি | সোমবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:০৯ পূর্বাহ্ণ

পেটে ডিম নিয়ে কক্সবাজার সৈকতে গত দুইদিনে ভেসে এলো আর ৪টি মা কাছিমের মৃতদেহ। এনিয়ে গত ৫ দিনে ৯টি এবং চলতি মৌসুমে অন্তত ২৮টি কাছিমের মৃতদেহ ভেসে আসে বলে জানান সমুদ্রবিজ্ঞানীরা। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, রোববার সকালে কক্সবাজার শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে সোনারপাড়া সমুদ্র সৈকত ও রেজু নদী মোহনায় জোয়ারের সাথে ভেসে আসে অলিভ রিডলি জাতের মা কচ্ছপ দুটি। এর আগে শনিবার সন্ধ্যায়ও একই সৈকতে এবং দুপুরে হিমছড়ি সৈকতে দুটি মা কচ্ছপের মৃতদেহ পাওয়া যায়।

আরিবদা বা একযোগে ডিম পাড়তে আসার জন্য বিখ্যাত অলিভ রিডলি বা জলপাই রঙা প্রজাতির এই সামুদ্রিক কচ্ছপ সৈকতের বালিয়াড়িতে ডিম পাড়তে আসার পথে জেলেদের জালে আটকা পড়ে অথবা অন্য কোনভাবে আহত হয়ে মারা গেছে বলে ধারণা করছেন সমুদ্রবিজ্ঞানীরা। গত শুক্রবার বিকেলে কক্সবাজার শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে রেজুখাল মোহনা ও পেঁচারদ্বীপ সৈকতে আরও তিনটি একই প্রজাতির মা কচ্ছপের মৃতদেহ ভেসে আসে। এর আগের দিন সোনারপাড়া ও পেঁচারদ্বীপ সৈকতেও দুটি মা কচ্ছপের মৃতদেহ ভেসে আসে। এ কচ্ছপগুলোর পেটেও ডিম ছিল বলে জানিয়েছেন তরিকুল ইসলাম।

তিনি জানান, রোববার সকালে সোনারপাড়া সৈকতে ও রেজু নদীর মোহনায় দুটি কচ্ছপের মৃতদেহ ভেসে আসার খবর পেয়ে সেগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করা হয়। অলিভ রিডলি প্রজাতির এই মা কচ্ছপ দুটির পেটে যথাক্রমে ১০০টি ও ১১০টি করে ডিম পাওয়া যায়। কয়েকদিন আগে কচ্ছপ দুটি মারা পড়েছে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এর আগে শনিবার উদ্ধার মা কচ্ছপ দুটির পেটেও ৯০ ও ৯৫টি করে ডিম পাওয়া যায়।

এনিয়ে গত পাঁচ দিনে তিনটি ডলফিন ও একটি পরপইসসহ চারটি স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং নয়টি অলিভ রিডলি জাতের সামুদ্রিক কাছিমের মরদেহ ভেসে এসেছে কক্সবাজার সৈকতে। ২০১২ সালের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে স্তন্যপায়ী ডলফিন, পরপইস ও সামুদ্রিক কচ্ছপ সংরক্ষিত প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত। এগুলো শিকার করা, খাওয়া, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পরিবহন ও ক্রয়বিক্রয় দণ্ডনীয় অপরাধ।

সাগরে ডলফিন, পরপইস ও তিমিসহ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বিশাল পরিবেশগত সেবার কারণে এদেরকে ইকোসিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ার বা বাস্তুসংস্থানের প্রকৌশলী বলা হয়। আর একটি স্বাস্থ্যকর সমুদ্রের প্রয়োজনীয় অঙ্গ হিসাবে বিবেচিত সিটার্টল বা সামুদ্রিক কচ্ছপ। সমুদ্রের পচে যাওয়া খাবার খেয়ে এরা দূষণ পরিষ্কার করে।

বোরি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ বলেন, নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত রিডলি প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রজনন মৌসুম। এ সময়ে এরা দলে দলে সৈকতের বালিয়াড়িতে ডিম পাড়তে আসে। পথে জেলেদের জালে আটকা পড়ে বা অন্য কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মা কচ্ছপ মারা পড়ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় টায়ার পোড়ানো ধোঁয়ার গন্ধে নাকাল মানুষ
পরবর্তী নিবন্ধ২শ ফুটের ব্রিজ পার হতে লাগে দুই ঘণ্টা!