পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি : প্রশাসনের নজরদারি প্রয়োজন

| বুধবার , ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ at ৫:০৩ পূর্বাহ্ণ

হঠাৎ করে আবার পেঁয়াজের দাম বাড়া শুরু করেছে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজ আসা বন্ধ রয়েছে। দেশের কৃষকরা যাতে পেঁয়াজের মূল্য পায়, সে কারণে পেঁয়াজের আমদানি অনুমতিপত্র (আইপি) বন্ধ রেখেছে সরকার। ফলে বর্তমানে বাজার দেশীয় পেঁয়াজে সয়লাব রয়েছে। দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লেও মজুদদারির কারণে দাম বাড়ছে বলছেন নগরীর চাক্তাইখাতুনগঞ্জের পেঁয়াজের আড়তদাররা। গত ২১ এপ্রিল দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়। এতে আরো বলা হয়েছে, চাক্তাই খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে মেহেরপুরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৫ টাকায়। এছাড়া দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫২৫৫ টাকায়। পেঁয়াজের আড়তদাররা বলছেন, পেঁয়াজের বাজার চাহিদা ও যোগানের উপর নির্ভর। চাক্তাই খাতুনগঞ্জে গুটিকয়েক ব্যক্তি পেঁয়াজ আমদানি করেন। বাকিরা কমিশনের ভিত্তিতে বিক্রি করেন। অর্থাৎ পেঁয়াজ আমদানিকারক যে দাম নির্ধারণ করে দেন, সেই দামে বিক্রি করেন। এর বিনিময়ে কেজিপ্রতি তারা নির্ধারিত একটি কমিশন পেয়ে থাকেন। তাই আড়তদারদের পক্ষে দাম উঠানামা করার কোনো সুযোগ নেই। আড়তদারদের পক্ষে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের দেশে পেঁয়াজের দরবৃদ্ধির সাথে সাথে প্রশাসনের লোকজন আড়তে অভিযান পরিচালনা করেন। এতে আতঙ্ক তৈরি হয়। অথচ আড়তদাররা পেঁয়াজ আমদানি করেন না।

পেঁয়াজের হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যেও উঠে এসেছে। টিসিবির হিসাবে, গত সপ্তাহে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০ থেকে ৫০ টাকা। চলতি সপ্তাহে এই দাম বেড়ে ৪০ থেকে ৬৫ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ টিসিবির হিসাবেও কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

পেঁয়াজের খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদনস্থলেই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। পাইকারি এক পেঁয়াজ বিক্রেতা বলেন, ‘কৃষক ও আড়তদারের কাছ থেকে আমাদের বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। এ কারণে বাজারেও পণ্যটির দাম বাড়তি।’

পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে পেঁয়াজচাষি, ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরা প্রায় একই রকম তথ্য দিয়েছেন গণমাধ্যমে। তাঁরা জানান, জমিতে এখন আর কোনো পেঁয়াজ নেই। সব পেঁয়াজ কৃষকের ঘরে উঠে গেছে। এসব পেঁয়াজের বেশির ভাগই কৃষক নিজেরা ও মজুতদারেরা কিনে সংরক্ষণ করছেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতে দাম আরও বাড়বে, এমন আশায় তাঁরা বাজারে কম পরিমাণে পেঁয়াজ আনছেন। এসব কারণে পেঁয়াজের মৌসুম হওয়া সত্ত্বেও বাজারে পণ্যটির দাম বেড়ে গেছে।

এই পরিস্থিতিতে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ কমেছে ঠিকই, তবে যে হারে দাম বাড়ছে, তা অস্বাভাবিক। আবারও বাজার সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়েছে, যারা কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে মুনাফা লুটছে।

কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন পত্রিকান্তরে বলেছেন, পেঁয়াজের আকস্মিক দাম বৃদ্ধির বিষয়টি ব্যবসায়ীদের নেতিবাচক ব্যবসা চর্চার ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার এবং এ খাতে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজির অংশ। আগে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসতে বিলম্ব হলেই এখানে দাম বেড়ে যেতো। এখন পেঁয়াজের আড়তদার, কমিশন এজেন্টস, দাদন ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ কিনে মজুত করে রাখছেন। সে কারণে দাম বেড়েছে। অন্যদিকে পেঁয়াজের বাজারে কোনো তদারকি হয় না। ভোক্তা অধিদফতর বা জেলা প্রশাসন এখানে কোনো তদারকি করে না।

আজাদীর প্রতিবেদনে মধ্যম চাক্তাইয়ের কয়েকজন পেঁয়াজ ব্যবসায়ীর বক্তব্য এসছে। তাঁরা বলেন, পেঁয়াজের বাজার বাড়ার পেছনে মূল কারণটাই হচ্ছে একশ্রেণীর মধ্যস্বত্বভোগীর মজুদদারি। তখন কৃষকের কাছ থেকে কম দামে পেঁয়াজ কিনে বেশি দামে বিক্রির জন্য মজুদ করে রাখছে। তারপর ধীরে ধীরে সেগুলো বাজারে ছাড়ছে। এ বছর পেঁয়াজে ভালো ফলন হয়েছে। সে হিসেবে পেঁয়াজের দাম কমার কথা, কিন্তু এখন উল্টো দাম বাড়ছে। যা অস্বাভাবিক। এ অবস্থায় প্রশাসনের নজরদারি প্রয়োজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে