পূর্বাঞ্চলে রেলের ৫শ একর জমি বছরের পর বছর অবৈধ দখলে

মন্ত্রণালয়ের বেধে দেয়া সময়ের ৪ মাস পরও দখল ছাড়েনি কেউ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আরএনবি সদস্যদের দখলেও বিপুল পরিমাণ জমি

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৯ এপ্রিল, ২০২৫ at ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ

বছরের পর বছর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের শত শত একর জমি প্রভাবশালীরা অবৈধ ভাবে দখল করে রাখলেও এসব জমি উদ্ধারে রেলওয়ের কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে দেখা যায় না। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ভূসম্পত্তি বিভাগ থেকে জানা গেছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে মোট জমির পরিমাণ ২৪ হাজার ৪০১ একর। এরমধ্যে প্রায় ৫শ’ একর জমি বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালীরা অবৈধ ভাবে দখল করে তারা রাজত্ব করছেন। বছরের পর বছর রেলের এই জমি অবৈধ দখলদারের দখলে রয়ে গেছে। এসব জমির বর্তমান বাজার দর ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা বলে জানা গেছে। অবৈধ দখলদারদের দখলে থাকা রেলের এসব জমিতে বস্তির পাশাপাশি দোকান ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এর ফলে বড় অঙ্কের রাজস্বও হারাচ্ছে সরকার। এছাড়াও রেললাইনের দুইপাশের একর একর জমি দখল করে ভাসমান বস্তিদোকান গড়ে তোলার কারণে রেললাইনে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা বেড়েছে।

সরেজমিনে এবং একাধিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, রেলের ভূসম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তাকর্মচারী, রাজস্ব বিভাগ এবং আরএনবির কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে রেলের বিপুল পরিমাণ জমি অবৈধ দখলদাররা রাতারাতি দখল করে তাদের রাজত্ব গড়ে তুলেছে। আবার রেলের এ কর্মকর্তাকর্মচারীদের দখলেও রয়েছে বিপুল পরিমাণ জমি। তারা সেখানে বস্তি ও দোকান করে ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছে। বিনিময়ে রেলওয়ে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ভূমি শাখা থেকে রেলের জমি অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে উচ্ছেদের জন্য ১০ দিনের একটি সময়সীমা বেধে দেয়া হয়েছিল। অবৈধ দখলদারদেরকে নিজ উদ্যোগে রেলের জমি থেকে তাদের অবৈধ স্থাপনা অপসারণের জন্য ভাবে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা দেয়া হয়েছিল। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ভূমি শাখার সহকারী সচিব মো. আলী আব্বাস স্বাক্ষরিত এই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল গত ডিসেম্বরে।

কিন্তু কোনো অবৈধ দখলদার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের অবৈধ স্থাপনা ছেড়ে দেয়নি এবং সরিয়ে নেয়নি তাদের অবৈধ স্থাপনা। এই সাড়ে ৪ মাসে রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগ এখনো পর্যন্ত বড় বড় প্রভাবশালীদের দখলে থাকা রেলের কোনো জমি উদ্ধারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

সম্প্রতি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল থেকে দুুটি উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। একটি হালিশহর রেলওয়ে গুডস্‌ পোর্ট ইয়ার্ড সংলগ্ন এবং অপরটি সিআরবিসহ পুরাতন রেল স্টেশনে। এর বাইরে বড় ধরনের লাগাতার কোনো উচ্ছেদ অভিযান নেই।

জানা গেছে, প্রয়োজনীয় সাপোর্ট না পাওয়ায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ভূমি থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রয়েছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে যখন মাহবুব উল করিম বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা ছিলেন তখন তিনি নিয়মিত অভিযানে রেলের বিপুল পরিমাণ জমি উদ্ধার করেছিলেন অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে। চট্টগ্রামে তিনি তখন রীতিমত অবৈধ দখলদারদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে ছিলেন। তিনি বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তার পদ থেকে চলে যাওয়ার পর আর কোনো বড় ধরনের উচ্ছেদ কার্যক্রম চোখে পড়েনি। সম্প্রতি তিনি রাঙামাটি থেকে এবার রেলওয়ের প্রধান ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করছেন। এখন আশা করা যাচ্ছেআবার তার নেতৃত্বে পূর্বাঞ্চলে অবৈধ দখলদারদের কাছে থাকা রেলের শত শত কোটি টাকার জমি উদ্ধারে তিনি মাঠে নামবেন।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ভূসম্পত্তি বিভাগ সূত্রমতে, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে সিলেটের জামালপুর, টাঙ্গাইল সেতুর পূর্বপাশ ও চাঁদপুর পর্যন্ত রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অধীন। এরমধ্যে শুধু চট্টগ্রাম জেলায় ২২৫ একর জমি অবৈধ দখলদারদের হাতে। বাকি ২৭৫ একর জমি অন্যান্য জায়গায় বেদখলে আছে। চট্টগ্রাম জেলায় ২২৫ একর জমির মধ্যে ১২৫ একর জমি আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাকি ১০০ একর জায়গা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান দখলে রেখেছে।

এছাড়া চট্টগ্রামের বাইরে ২৬৭ একর জমির মধ্যে প্রায় দেড়শ একর জমি সরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান, বাকি জমি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দখলে রেখেছে। এসব জমি অবৈধ দখলমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন বলে জানান রেলওয়ের কর্মকর্তারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে শিক্ষককে পদত্যাগে বাধ্য করানোর অভিযোগ, তদন্ত শুরু
পরবর্তী নিবন্ধগভীর রাতে ঘর থেকে বের করে নারীকে তাড়া করে কোপাল দুর্বৃত্ত