রাষ্ট্রায়ত্ত পূবালী ব্যাংকের গাড়ি থেকে চুরি যাওয়া টাকা গত পাঁচ বছরেও উদ্ধার করা যায়নি। এই ঘটনায় কয়েকজনকে আসামি করে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেয়া হলেও টাকা উদ্ধারে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
গত বছর ১৩ নভেম্বর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে ২০১৬ সালের বহুল আলোচিত এই মামলাটির সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত সংস্থা দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন)। দীর্ঘসময় পর চলতি মাসের ২৮ তারিখ মামলাটির শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু।
জানা গেছে, দুদকের চার্জশিটে মামলায় নতুন করে উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য যোগ হয়নি। পাঁচ বছর আগে ঘটনাটিতে মামলার এজাহারে যাদের আসামি করা হয়েছে দুদকের অভিযোগপত্রেও একই ব্যক্তিরাই আসামি। এছাড়া ব্যাংকটির খোয়া যাওয়া টাকা উদ্ধার কিংবা সেসব টাকার কোনো সন্ধান দিতে পারেনি সংস্থাটি। এর আগে টাকা চুরির ঘটনার পর পর পুলিশের পক্ষ থেকেও ওই সময় টাকাগুলো উদ্ধারে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। অথচ ব্যাংকের টাকা চুরির পরপরই অভিযুক্ত সব আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে থাকা দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের (২) সহকারী পরিচালক মো. হুমায়ন কবীর গতকাল শুক্রবার আজাদীকে বলেন, এই ঘটনায় জড়িত মোট পাঁচ আসামির মধ্যে চারজন আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। এরাই টাকাগুলো আত্মসাতের সাথে জড়িত ছিলেন বলে তদন্তে পাওয়া গেছে। তবে সেই টাকাগুলো উদ্ধার করা যায়নি। তিনি বলেন, ঘটনার সাথে আসামিরা জড়িত থাকলেও তাদের কাছ থেকে টাকার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের ঘটনাটির মামলার অনেক পর দুদক তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিল বলে জানান হুমায়ন কবীর।
মামলার এজাহারে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি একটি নোহা মাইক্রোবাসে পূবালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার টাকা কালেকশন ও ডেলিভারি দেয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন পূবালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা, তিনজন আমর্ড পুলিশ ও মাইক্রোবাসটির চালক। ওইদিন বেলা পৌনে ১১টায় ব্যাংকটির শেখ মুজিব রোডস্থ শাখা থেকে নগদ সাড়ে ৫০ লাখ টাকা গ্রহণ করে সীতাকুণ্ড শাখার উদ্দেশ্যে রওনা হন তারা। সেখান থেকে ৮১ লাখ টাকা গ্রহণ করে চট্টগ্রাম শহরের উদ্দেশ্যে রওয়ানার কিছুক্ষণ পর গাড়িটি পুনরায় সীতাকুণ্ড শাখায় ফিরে এসে কর্তৃপক্ষকে টাকার একটি বস্তা হারিয়ে যাওয়ার কথা বলে। ওই ঘটনায় ব্যাংকটির সিডিএ কর্পোরেট শাখার তৎকালীন সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. তৌফিকুর রহমান বাদী হয়ে সীতাকুণ্ড মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয়েছিল, ওইদিন টাকা বহনে নিয়োজিত ব্যাংক কর্মকর্তা, গার্ড, গাড়ি চালকসহ মোট পাঁচজনকে। প্রথমে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ তদন্ত করলেও পরে আদালতের নির্দেশে ২০১৭ সালে মামলাটি তদন্ত শুরু করে দুদক। ২০১৯ সালের নভেম্বরে দুদক মামলাটির সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে।
দুদকের চার্জশিটে পূবালী ব্যাংকের সিডিএ কর্পোরেট শাখার জুনিয়র অফিসার (সাময়িক বরখাস্ত) মো. রাজিবুর রহমান, আর্মড গার্ড সদস্য (সাময়িক বরখাস্ত) আশিকুর রহমান, আনজুর রহমান ও মাজহারুল ইসলাম এবং গাড়ি চালক বিজয় কুমার দাশকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪০৯/১০৯/১২০খ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের (৫)২ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। বর্তমানে তারা সবাই জামিনে আছেন।
তবে পুলিশের তদন্তে এজাহারের বাইরে আসামি করা রুপন কুমার নাথ ও বদন কুমার নাথ নামে দুই ভাইকে মামলা থেকে অব্যহতি প্রদানের আবেদন করেন দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই আসামিদের মধ্যে গাড়ি চালক বিজয় কুমার দাশ ছাড়া বাকি ৪ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলেছেন, জবানবন্দিতে আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে টাকাগুলো আত্মসাত করেছেন বলে উঠে এসেছে। তবে ঘটনার সাথে আসামিরা জড়িত থাকার কথা বলা হলেও গত পাঁচ বছরেও লুটের সেই টাকা রহস্যজনক কারণে অভিযুক্তদের কাছ থেকে উদ্ধার করা যায়নি। গত মে মাসে রাজধানী ঢাকায় একটি বেসরকারি ব্যাংকের একই ধরণের ঘটনা ঘটেছিল। ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের একটি গাড়ি পুরান ঢাকার বিভিন্ন শাখা ঘুরে টাকা সংগ্রহ করে মতিঝিলে প্রধান কার্যালয়ে পৌঁছার পর গাড়িতে থাকা
নিরাপত্তাকর্মীরা ৮০ লাখ টাকার একটি বস্তা পাওয়া যাচ্ছে না বলে কর্তৃপক্ষকে জানায়। ওই টাকার বস্তাটি বাংলাবাজার শাখা থেকে তোলা হয়েছিল। পরবর্তীতে পুলিশ খোয়া যাওয়া সেই টাকাটি উদ্ধার করে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকায় ঘটনার পরপরই উদ্ধার তৎপরতার কারণে পুলিশ লুট হওয়া টাকাগুলো উদ্ধার করতে পেরেছিল।