ঢাকার আদালত এলাকায় পুলিশকে স্প্রে মেরে ছিনতাই করা হয়েছে জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং লেখক অভিজিৎ রায় হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে। গতকাল দুপুরে পুরান ঢাকার আদালত পাড়ায় এ ঘটনার পর রেড অ্যালার্ট জারি করে দুই আসামিকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়াদেরও তথ্য মিলেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পালিয়ে যাওয়া দুই আসামি হলেন মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব। মইনুল হাসান শামীমের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মাধবপুর গ্রামে। আবু ছিদ্দিক সোহেলের বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেটেশ্বর গ্রামে। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) এ দুই সদস্য দীপন হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলাতেও আবু সিদ্দিক সোহেলের ফাঁসির রায় হয়েছে।
কোতোয়ালী থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, বেলা ১২টার দিকে তারা পুলিশ হেফাজত থেকে পালিয়ে যায়। আমরা তাদেরকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম আইনজীবী আজাদ রহমান জানান, মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় শুনানির জন্য আসামিদের আদালতে আনা হয়েছিল এদিন। মইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেলকে আনা হয়েছিল কাশিমপুর কারাগার থেকে। দুপুর ১২টার কিছুক্ষণ পর সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে শুনানি শেষে প্রিজন ভ্যানে তোলার আগে পুলিশের দিকে স্প্রে মেরে তাদেরকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
খবর পেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদসহ লালবাগ জোনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বিচারকের সামনে হাজিরা শেষে আবার যখন তাদের নির্দিষ্ট রুমে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের কেমিক্যাল ছুড়ে অজ্ঞান করে তাদের নিয়ে পালিয়ে যায় তাদেরই কয়েকজন সমর্থক।
ওই দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। ঢাকা মহানগর পুলিশ এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত গঠন করে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, পলাতক জঙ্গিরা যাতে দেশ ছাড়তে না পারে সেজন্য রেড অ্যালার্ট জারি করে সীমান্ত এলাকায় সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি দুঃখজনক। যদি কারো অবহেলা থাকে, গাফিলতি থাকে, যদি কেউ ইচ্ছা করে এই কাজটি করে থাকেন, তার উপযুক্ত ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করব। নিশ্চয় আমরা তদন্ত কমিটি করব, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। আমাদের পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে তাদের। শিগগির তাদের ধরতে পারব বলে আমরা বিশ্বাস করি।
পুলিশের হাত থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় প্রিজন ভ্যানে হামলা করে জেএমবির শুরা সদস্য রাকিবুল হাসান ও সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি এবং বোমা বিশেষজ্ঞ মিজানকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। নজিরবিহীন ওই ঘটনায় প্রিজন ভ্যানে থাকা এক কনস্টেবল নিহত হন।
পালানোর পথে ওইদিনই মির্জাপুরে গ্রেপ্তার হন মৃত্যুদণ্ডের আসামি রাকিবুল হাসান। পরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিনি নিহত হন। যাবজ্জীবন সাজার আসামি মিজান ২০১৮ সালের অগাস্ট মাসে ভারতে গ্রেপ্তার হন। বর্ধমান বিস্ফোরণের মামলায় ২০২১ সালে তাকে ২৯ বছরের কারাদণ্ড দেয় ভারতীয় আদালত। তবে সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানির কোনো খোঁজ আর মেলেনি।
দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়াদেরও তথ্য মিলেছে : মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ২০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিতে আসা অপর সঙ্গীদের বিষয়েও তথ্য মিলেছে।
গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে এ কথা জানান। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে যারা পালিয়ে গেছে তাদের গ্রেপ্তার ও শনাক্তের জন্য কাজ শুরু হয়ে গেছে। যারা জঙ্গিদের ছিনিয়ে নিতে এসেছিল, তাদের সম্পর্কে তথ্য পেয়েছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হব। পালাতে অক্ষম সবুর ও আরাফাত এই পরিকল্পনার অংশ ছিল। তাদেরসহ ২০ জন ও অজ্ঞাত ৭/৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।