পুলিশকে তিন বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ

পুলিশে আলাদা মেডিকেল ইউনিট প্রয়োজন : প্রধানমন্ত্রী

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ৪ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:৫৩ পূর্বাহ্ণ

পেশাগত দায়িত্ব পালনে পুলিশ সদস্যদের জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রোববার ৩৭তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে এ নির্দেশনা দেন তিনি। রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন তিনি।
পুলিশ বাহিনীর আলাদা একটি মেডিকেল ইউনিট গঠন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাসের মহামারী মোকাবেলায় পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের সাহসী ভূমিকার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার জন্য রাজারবাগের পুলিশ হাসপাতাল ছাড়াও আলাদা একটি বেসরকারি হাসপাতাল ভাড়া করে দেওয়ার কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। খবর বাংলানিউজ ও বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, সেখানে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এবং আমি ধন্যবাদ জানাই, পুলিশ বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তাদের হাসপাতালে এই চিকিৎসাসেবা দিতে পেরেছে। এজন্য আমি চিন্তা করি, আমাদের পুলিশে বোধ হয় আলাদা একটা মেডিকেল ইউনিট গঠন করা একান্তভাবে দরকার। তাদের নিজস্ব একটা ইউনিট থাকুক। যারা অন্তত এই চিকিৎসা সেবাটা দেখবে।
ঢাকার বাইরে পুলিশ হাসপাতালগুলোকে আরো উন্নত ও আধুনিক করার উদ্যোগ নেওয়া এবং থানাগুলোর সংস্কারের পাশাপাশি কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ানোর কথা প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন অনুষ্ঠানে। মহামারীর মধ্যে পুলিশের বিশেষ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ যে জনগণের কাছে খাবার পৌঁছে দিয়েছে, সেই ভূমিকার কথাও তিনি স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি শতবর্ষের পুরনো একটি প্রতিষ্ঠান। কাজেই আমরা সেন্টার অব এক্সেলেন্স হিসেবে এটাকে গড়ে তুলতে চাই। এর সার্বিক সংস্কারের জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। আমাদের পুলিশ বাহিনীকে আমরা সব ধরনের আধুনিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে চাই।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধের ধরন যে পাল্টেছে এবং সাইবার অপরাধ যে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে এই অপরাধ দমনে সক্রিয় হতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা দেন সরকারপ্রধান।
জরুরি সেবার হটলাইন ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ যে তাৎক্ষণিকভাবে সাহায্য করে যাচ্ছে এবং মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে, সে কথাও তিনি বলেন। কয়েকদিন আগে কক্সবাজারের হিমছড়িতে কয়েকজন ছাত্র আটকা পড়ে পথ হারিয়ে ফেললে ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশের সহযোগিতা চায় এবং পুলিশ বিমান বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে হেলিকপ্টার পাঠিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয় বলে জানান শেখ হাসিনা।
পাশাপাশি মানি লন্ডারিং,সাইবার ক্রাইম, মানবপাচার, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ, মাদকের কারবার, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতাসহ নানা সামাজিক অপরাধ দমনে পুলিশ ‘অনবদ্য’ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটাকে আরো দক্ষতার সাথে দমন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, মানুষের সেবা দেওয়া, মানুষের জীবন মান উন্নত করা-এটাই হচ্ছে আমাদের সব থেকে বেশি প্রয়োজন। এবং সেদিকে আমাদের পুলিশ বাহিনী যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করেছে এবং আমাদের প্রশিক্ষণ… শুধু দেশে না, আমরা বিদেশে পাঠিয়েও এখন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ দমনের নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে বা এই যে এখন ফেইসবুক আছে বা বিভিন্ন ধরনের যে অ্যাপ আছে, সেগুলোর মাধ্যমে অনেক ধরনের অপরাধ… বিশেষ করে কিশোর বা উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা এই সমস্ত অপরাধের সাথে জড়িত হচ্ছে। সেখান থেকে তাদের বের হরে নিয়ে এসে সুস্থ জীবনে যাতে ফেরানো যায়, তার ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণভাবে গুজব রাটানো বা এই ধরনের কাজ যেন করতে না পারে, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। ৭৫-এর পর গণতন্ত্র ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ছিল মন্তব্য করে সরকার প্রধান বলেন, দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি।
পুলিশ বাহিনীর আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন সরকার প্রধান। প্রশিক্ষণে বিভিন্ন বিষয়ে কৃতিত্ব দেখানো পুলিশ সদস্যদের এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পদক তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজার মহাসড়কের ৪ সেতু উন্মুক্ত হচ্ছে মে মাসেই
পরবর্তী নিবন্ধঅনন্যা আবাসিকের দ্বিতীয় প্রকল্পে আবার সংশয়