পুলিনবিহারী সরকার: অজৈব রসায়নের গোড়াপত্তনকারী

| রবিবার , ১৪ জুলাই, ২০২৪ at ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ

পুলিনবিহারী সরকার (১৮৯৪১৯৭১)। অজৈব যৌগ সাধারণত একটি রাসায়নিক যৌগ যাতে কার্বনহাইড্রোজেন বন্ধন থাকে না অর্থাৎ এটি একটি যৌগ যা কোনো জৈব যৌগ নয়। এমন জটিল বিষয় নিয়ে যিনি আমৃত্যু গবেষণা করে গেছেন, তিনি ভারতীয় বিজ্ঞানী পুলিনবিহারী সরকার। পুলিনবিহারী সরকার ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে নভেম্বর কলকাতার ঝামাপুকুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ছিলেন বিখ্যাত আইনজীবী বসন্তকুমার সরকার। পুলিনবিহারীর বাল্য ও কৈশোর কাটে তমলুকে। সেখানকার হ্যামিলটন স্কুল থেকে ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে বৃত্তিসহ এন্ট্রান্স পাস করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে আই.এসসি ক্লাসে ভর্তি হন। ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে বি.এসসি ও ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে রসায়নে এম.এসসি পাস করেন। ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দেই পুলিনবিহারী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে লেকচারার নিযুক্ত হন। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে ঘোষ ট্রাভেলিং ফেলোশিপ নিয়ে প্যারিসে অধ্যাপক উরবাঁর ল্যাবরেটরিতে গবেষণা করতে যান। সেখানে স্ক্যাডিয়াম, গ্যাডোলিনিয়াম এবং ইউরেনিয়াম নিয়ে অভূতপূর্ব কাজের উপর তাঁর ফরাসি ভাষায় লেখা গবেষণাকর্মের জন্য সেখানকার জ্ঞানবিজ্ঞান জগতের বিশেষ সম্মান ‘স্টেট ডক্টরেট অব ফ্রান্স’ লাভ করেন। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে দেশে ফিরে পুরানো পদে যোগ দেন এবং কলেজে এক ল্যাবরেটরি তৈরি করে গবেষক ছাত্রদের নিয়ে বর্ণালি বিশ্লেষণভিত্তিক রসায়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ শুরু করেন। এই বিষয়ে অসামান্য অবদানের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় স্বর্ণ পদক দেন। তিনিই প্রথম ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে বিহারের গয়া থেকে কলামবাইট (Columnbite ) নামের এক আকরিক পদার্থ আবিষ্কার করেন এবং এই আকরিক থেকেই তিনি ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে রেনিয়াম (Rhenium) নিষ্কাশন করেছিলেন। ভারতে খনিজ দ্রব্য থেকে তাঁর রেনিয়াম নিষ্কাশন এই প্রথম। তাছাড়া পান্নাজাতীয় ভারতীয় পাথরগুলি তিনি পর্যালোচনা করে তাদের বিচিত্র রঙের ব্যাখ্যা করেছেন। খনিজ পদার্থে দ্রুত ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের পরিমান নির্ণয়ের সহজ পন্থা আবিষ্কার করেন। এমনকি সাধারণ জিনিস যেমন চাল, মুসুর ডাল, উচ্ছে, করলা, পান ইত্যাদির মধ্যে কী কী ধাতু কত পরিমাণে আছে তাও তিনি গবেষণা করেছেন। চোখের জল, মাতৃদুগ্ধ নিয়েও তিনি নিরীক্ষামূলক বিশ্লেষণ করেন। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে অবসর নিলেও সি.এস.আই.আর. এর আর্থিক সহায়তায় ছাত্রদের নিয়ে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত গবেষণায় লিপ্ত থেকেছেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৪শে জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমানুষের শ্রেষ্ঠত্ব
পরবর্তী নিবন্ধসমকালের দর্পণ