গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সরানোর উদ্যোগ নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেবে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। পুতুলের দুর্নীতির বিষয়ে একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করেছে দুদক। সেই বিষয়বস্তু উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুয়েকদিনের মধ্যে দুই মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে বলে দুদকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। খবর বিডিনিউজের।
হাসিনাকন্যা পুতুল এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে। তার মেয়ে পুতুলের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা হয়েছে, যার মধ্যে দুদক একটি মামলা দায়ের করেছে ‘তথ্য গোপন ও ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে পূর্বাচলে পুতুলের নামে প্লট বরাদ্দের অভিযোগে।
পুতুলের বিষয়ে দুদকের পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, প্লট দুর্নীতিতে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবেন।
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগ পাইয়ে দিয়েছেন কিনা, তাও খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। এ প্রসঙ্গে আক্তার হোসেন বলেন, পুতুলের বিশ্ব স্বাস্থ্য নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধান দল তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। অভিযোগ প্রমাণে যে সমস্ত দালিলিক প্রমাণাদি প্রয়োজন সে সমস্ত তথ্যের জন্য তারা কার্যক্রম চালাবেন। যেসব দপ্তর থেকে তথ্য পাওয়া যাবে সেসব দপ্তরে তদন্ত দল যোগাযোগ করবেন। অভিযোগ প্রমাণে সহায়ক সবার বক্তব্য নেবেন।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে লেখাপড়া করা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল যুক্তরাষ্ট্রে স্কুল সাইকোলজিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন। তার মা শেখ হাসিনা তাকে অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার বিষয়ক বাংলাদেশ জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব দেন। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা প্যানেলেরও তাকে সদস্য করা হয়।
২০২৩ সালের নভেম্বরে ভারতের নয়া দিল্লিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক কমিটির ৭৬তম অধিবেশনে সংস্থাটির দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক নির্বাচিত হন সায়মা ওয়াজেদ। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সেই দায়িত্ব নেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দপ্তর ভারতের দিল্লিতে। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে পুতুল সেখানেই আছেন। আর ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে শেখ হাসিনাও আছেন দিল্লিতে।
পুতুলের দুর্নীতির বিষয়ে সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, যোগ্যতা না থাকলেও মেয়ে পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে নিয়োগে তার ক্ষমতাকে অনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছিলেন শেখ হাসিনা। কোনো কারণ ছাড়াই মেয়েকে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সফরেও সফরসঙ্গী করেছেন তিনি। সায়মা ওয়াজেদের ক্ষেত্রে প্রার্থীর যোগ্যতা হিসেবে যেসব অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা উল্লেখ করা হয়েছে, তা কেবলই কাগুজে ও ফরমায়েশি।
দুদকের নথিতে বলা হয়েছে, পুতুলের অযোগ্যতাকে ধামাচাপা দিতে ২০২৩ সালে জি–২০ শীর্ষ সম্মেলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সাথে করে ভারত নিয়ে যান। একইভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৭৬তম সম্মেলন উপলক্ষে ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় করে শতাধিক কর্মকর্তা ও প্রতিনিধি দল দিল্লিতে অবস্থান করেন।
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে এবং তার মায়ের রাজনৈতিক প্রভাবের অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমে লিপ্ত হয়েছিলেন বলেও দুদকের নথিতে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, তিনি বেআইনিভাবে ঢাকার পূর্বাচলে নিউটাউন প্রকল্পের ডিপ্লোমেটিক জোনে দশ কাঠা প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন।
দুদক বলছে, পুতুল সূচনা ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে জোরপূর্বক উপঢৌকনের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেন। তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উপর অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে ফাউন্ডেশনের নামে পাওয়া অর্থ করমুক্ত করিয়ে নেন, যাতে সরকারের বিপুল অর্থের ক্ষতি হয়েছে। নথিতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় অটিস্টিক সেলকে ব্যবহার করে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে পুতুল রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করে নিজে লাভবান হয়েছেন।