খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় পুকুর ছাড়াই ঘাটলা নির্মাণ করা হয়েছে। উপজেলার আমতলী ইউনিয়নে এমন ২টি ঘাটলা নির্মাণ করা হয়েছে পাহাড়ের ওপর। এতে সরকারি বিপুল অর্থের গচ্চা গেলেও তা মানুষের কোন কাজেই আসছে না। অনুসন্ধানে জানা যায়, সারাদেশে পুকুর ও খাল উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে জিওবি‘র অর্থায়নে ২০২০–২১ অর্থ বছরে মাটিরাঙ্গা উপজেলার আমতলী ইউনিয়নে ৪টি পুকুর খনন ও ঘাটলা নির্মাণ করে এলজিইডি। এর মধ্যে আমতলী উচ্চ বিদ্যালয় ও গড়গড়িয়ায় নির্মিত দুটি ঘাটলা কিছুটা ব্যবহৃত হলেও আব্বাস সর্দারপাড়া জামে মসজিদ ও আমতলী আদর্শপাড়া মসজিদের নামীয় ঘাটলা দুটি কোনই কাজে আসছে না।
আব্বাস সর্দারপাড়া জামে মসজিদের নামে যে ঘাটলা নির্মাণ করা হয়, সেখানে মানুষ যাওয়ার রাস্তা নেই। ঘাটলাটি করা হয়েছে পাহাড়ের ওপর। যেখানে স্থানীয় একটি কবরস্থান রয়েছে। এখানে নেই পুকুরের অস্তিত্ব। মূলত দুই পাহাড়ের মাঝখানের জায়গাকে পুকুর দেখিয়ে এখানে ঘাটলা করা হয়। এছাড়া আমতলী আদর্শপাড়া মসজিদের নামীয় ঘাটলাটিরও একই অবস্থা। ঘাটলায় উঠার পথই নেই। ঘাটলার সামনে পুকুর বলতে কিছুই নেই। তবে প্রায় ৫০ মিটার দূরে হাঁটু পানি দেখা যায়। যদিও মসজিদ থেকে ঘাটলার দূরত্ব প্রায় আধা কিলোমিটার।
আমতলী আদর্শপাড়া মসজিদের সভাপতি মো. শাহ এমরান জানান, মসজিদের নামে ঘাটলা নির্মাণ করা হলেও বাস্তবে মুসল্লিদের কাজে আসছে না। এমনকি জনসাধারণেরও ব্যবহারের সুযোগ নেই। কারণ, কাগজে পুকুর খনন বলা হলেও প্রকৃত অর্থে নামে মাত্র পাহাড়ি মাটি ছাটাই করা হয়েছে। অন্যদিকে আব্বাস সর্দারপাড়া জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. রুহুল আমিন বলেন, মসজিদের নামে ঘাটলা তৈরি হলেও এটি মুসল্লিদের কাজে আসছে না। কর্তৃপক্ষ দায়সারাভাবে এটি নির্মাণ করে চলে গেছে। ঘাটলায় যাওয়ার পথ পর্যন্ত নেই। স্থানীয় বাসিন্দারাও একই অভিযোগ করেন।
দরপত্র অনুযায়ী কাজটির নির্মাণ কাজ পায় মেসার্স রুবেল এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিদাকারী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। উপ–ঠিকাদার হিসেবে ঘাটলা নির্মাণ করেন মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আলী। তিনি জানান, এলজিইডি যেখানে দেখিয়ে দিয়েছে সেখানেই ঘাটলা নির্মাণ করেছি। এগুলো ২০১৯ সালে ডিজিটাল সার্ভে হয়। পরে প্রকল্প অনুমোদনের পর টেন্ডার হয়েছে। এতে তার কোন দোষ নেই বলে তিনি দাবি করেন। এদিকে ঘাটলা নির্মাণে আদৌ সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাহজাহান। তিনি এ বিষয়ে কোন ধরণের তথ্যই দেননি। কত টাকা ব্যয় হয়েছে তাও জানা সম্ভব হয়নি। ক্যামেরার সামনে কথা বলতে অনুরোধ করায় ক্ষেপে উঠেন এবং ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন উপজেলা প্রকৌশলী।
এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এমন ঘটনা সত্য হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারের অর্থ ব্যয়ে অপ্রয়োজনীয় স্থানে কেন ঘাটলা তৈরি করা হলো তা খতিয়ে দেখা হবে।