সাড়ে ১৫ বছর আগে ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা পুনঃতদন্ত করতে কেন কমিশন গঠন করা হবে না, তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। একইসঙ্গে এ ঘটনার পুনঃতদন্ত চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করা আবেদন নিষ্পত্তিরও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এ সংক্রান্ত একটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চ রুলসহ এ নির্দেশনা দেয়। রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ।
তিনি বলেন, এ ঘটনার পুনঃতদন্ত কেন করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন এবং আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যে রিপ্রেজেন্টেশন দিয়েছি তা ১০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেছেন। খবর বিডিনিউজের।
গত ২০ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদসহ দুই আইনজীবী রিট আবেদনটি করেন। এতে স্বরাষ্ট্র সচিব; মন্ত্রিপরিষদ সচিব; আইন সচিব; পুলিশের আইজিপি ও র্যাবের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়। রিট মামলার আগে তারা এ ঘটনার পুনঃতদন্ত চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেছিলেন। তাতে সাড়া না পেয়ে মামলাটি করেন।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা। সেই বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।
বিদ্রোহের বিচার বিজিবির আদালতে হলেও হত্যাকাণ্ডের মামলা বিচারের জন্য আসে প্রচলিত আদালতে। এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজা ভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে মুক্তি আটকে আছেন ৪৬৮ বিডিআর সদস্যের।
হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।
হাই কোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়। অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনের মামলায় ৮৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। কিন্তু মাঝপথে বিস্ফোরক মামলার কার্যক্রম এক প্রকার স্থগিত রেখে কেবল হত্যা মামলার সাক্ষ্য উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ কারণে এই মামলার বিচার ঝুলে যায়।
ক্ষমতার পালাবদলের অন্তর্র্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা পুনঃতদন্তের দাবি জোরালো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও বলেছেন, বিডিআর বিদ্রোহের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত কার্যক্রম শিগগিরই শুরু হবে।
সোমবার সকালে পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তর পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত হবে এবং অবশ্যই হতে হবে। দ্রুতই তদন্ত টিম করা হবে। যেহেতু অন্যান্য অনেকগুলো হচ্ছে, এটাও হয়ে যাবে।