পিচঢালা সড়কটি এখন ‘মেঠোপথ’

কাঞ্চননগর-মানিকপুর সড়ক

মোহাম্মদ জিপন উদ্দিন, ফটিকছড়ি | রবিবার , ১২ মে, ২০২৪ at ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ

সড়কজুড়ে পিচ উঠে সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। গাড়ি গেলে যেন ধুলার ঝড় ওঠে। আর বৃষ্টি হলে গর্তে জমে পানি। ফটিকছড়িকাঞ্চননগর মানিকপুর গ্রামে ২১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটির ৫ কিলোমিটার অংশের এই দশা কয়েক বছর ধরে। বিকল্প না থাকায় বাধ্য হয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ নিয়ে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয় জনসাধারণের। খানাখন্দে ভরা এ সড়কে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। দীর্ঘদিন সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় পিচঢালা সড়ক যেন গ্রামের মেঠোপথ হয়ে গেছে।

দীর্ঘদিন এ অবস্থা থাকায় এলাকাবাসীর মধ্যেও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তবে উপজেলা এলজিইডি অফিস বলছে, সড়কটির সংস্কারের জন্য কয়েকবার টেন্ডার হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সাথে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের খরচের টাকার মিল না হওয়াতে তা বারবার পিছিয়ে গেছে।

গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, কাঞ্চননগর ইউনিয়নের চৌমুহনী বাজারের পর থেকে একই ইউপির মানিকপুর গ্রামের ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ৫/৭ কিলোমটার সড়কের বেশিরভাগ স্থানে পিচ উঠে বেহাল দশা। অনেক ঝুঁকি নিয়ে ছোটবড় যানবাহন চলাচল করে।

ফটিকছড়ি উপজেলার সঙ্গে এই সড়ক দিয়েই মানিকপুর গ্রামের মানুষ এবং খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার যোগাযোগ। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বাজার, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা রয়েছে। কিন্তু সড়কের এমন বেহাল অবস্থা যে, হেঁটে চলাও দায়। খানাখন্দ আর সড়কের উপরে পাথরের খণ্ড থাকায় উল্টে পড়ে মোটরসাইকেল, রিকশা, ভ্যানের মত ছোট গাড়ি। রাস্তার জীর্ণ দশার কারণে যানবাহনের পেছনেও ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ। দ্রুত এ সড়ক সংস্কারের দাবি সাধারণের।

এ সড়ক দিয়ে চলার সময় দুর্ঘটনার শিকার ছেনুয়ারা বেগম বলেন, সন্ধ্যায় বাপের বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল করে ফিরছিলাম। সড়কের গর্তে থাকা ইটের কণা চাকায় পড়ে উল্টে যায় আমাদের মোটরসাইকেল। এ সময় আমি ছিটকে পড়ে আহত হই। মোটরসাইকেল চালক সেলিম উল্ল্যাহ বলেন, ভাঙাচোরা রাস্তায় রয়েছে অসংখ্য পাথরের টুকরো। তার উপর চাকা উঠলেই মোটরসাইকেল পিছলে যায়। সামনে তাকাবো নাকি নিচে দেখবো। এ নিয়ে ভাবতে ভাবতে পড়ি দুর্ঘটনায়। কয়েকজন টেক্সিচালক বলেন, আমরা গরীব মানুষ, দিনে আনি দিনে খাই। রাস্তার কারণে গাড়ির পেছনে যত খরচ হয় তাতে আমাদের পরিবার নিয়ে দুবেলা দুমুঠো খাওয়াই কঠিন। সরকারের কাছে দ্রুত এই সড়ক সংস্কারের দাবি আমাদের। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফৈরদৌস বলেন, বাড়ি থেকে বিদ্যালয় মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে হওয়ায় হেঁটেই যাতায়াত করি। কিন্তু রাস্তা দিয়ে ঠিকমত হাঁটা যায় না। গরমের দিনে গাড়ি চলার সময় বালির কারণে কাপড় নষ্ট হয় আর বর্ষার সময় তো পানি, কাঁদা মেখে বিদ্যালয়ে যেতে হয়। স্থানীয়রা কয়েকজন বলেন, কাঞ্চনপুর, ফটিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতের জন্য আমরা এই সড়কটি ব্যবহার করি। কিন্তু সারা বছর সড়কটির এমন বেহালদশা থাকে যে বাড়ি থেকে বের হতে গেলেই আঁতকে উঠি। বৃষ্টির মৌসুমে ৫৭ কিলোমিটারের সড়কের জায়গায় পানি জমে থাকে। শুকনো মৌসুমে ‘বালির বৃষ্টি’। এখন শুকনো মৌসুমে যদি রাস্তা সংস্কার না করা হয় তাহলে বৃষ্টির মৌসুম এলে সড়কটি আর সংস্কার সম্ভব হবে না। সে সময় জনভোগান্তি আরও বাড়বে। এ ব্যাপারে কাঞ্চননগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. দিদারুল আলম বলেন, বার বার টেন্ডার হচ্ছে, তবে বিভিন্ন সমস্যায় সড়কটি সংস্কার হচ্ছে না। প্রতিদিন মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সড়কের এ দশার পিছনে বাকু এবং গাছের গাড়িকে দায়ী করে তিনি বলেন, আমি অনেকবার সমন্বয় সভায় বিষয়টি জানিয়েছি। এখন কিছু গাড়ি প্রশাসন আটকাচ্ছে। সড়কের পাশাপাশি এ যাতায়াতে বালি এবং গাছের গাড়িগুলোকেও দমাতে হবে।

ফটিকছড়ি উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী তন্ময় নাথ বলেন, সড়কটির অবস্থা খুবই বাজে। এ সড়কটি আমি দুবার টেন্ডারে পাঠিয়েছি। কিন্ত সড়ক সংস্কারে মন্ত্রণালয়ের খরচের টাকার সাথে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মিলছে না। ফলে বার বার কাজটি পিছিয়ে যাচ্ছে। আশাকরি দ্রুত এ সড়ক সংস্কার হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবোরো চাষে নতুন জাত
পরবর্তী নিবন্ধমিল্টনের কেয়ার হোম থেকে উদ্ধার সেলিমের কিডনি ঠিক আছে : চিকিৎসক