সুদর্শন পাখি শুমচা। শরীরজুড়ে রঙের বাহার। বাংলাদেশে চার ধরনের শুমচা পাখি দেখা যায়। এর মধ্যে খয়রা মাথা অন্যতম। এটি দুর্লভ পরিযায়ী পাখি। বাংলাদেশে দেখা মেলে কমই। তবে পরিযায়ী পাখিটির দেখা মিলল পার্বত্য চট্টগ্রামে। সম্প্রতি খাগড়াছড়ির পাহাড়ি বনে দেখা মিলল পাখিটির। পাহাড়ি বনে বংশ বৃদ্ধি করেছে সেটি। বাচ্চারা উড়তে শেখার পর শুমচারা এখানে স্থায়ী আবাস গড়ে না। অন্যত্র চলে যায়।
সম্প্রতি দেখা যায়, খাগড়াছড়ির পাহাড়ি বনে বিচরণ করছে খয়রা মাথা শুমচা। এক জোড়া শুমচা ‘হুই-হুই’ ডাকে বনের নীরবতা ভাঙে। যেমন সুন্দর সুর, তেমন আকর্ষণীয় দেখতে। ঘন ঝোঁপের ভেতরে উড়ে বেড়াচ্ছে পাখিটি। পরিযায়ী পাখিটি পাহাড়ি বনে বাচ্চা ফুটিয়েছে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছানা মায়ের সাথে তাল মিলিয়ে উড়ার চেষ্টা করছে। কখনো গাছের ডালে, কখনো ঘন সবুজ ঘাসে বিচরণ করছে বাচ্চা জোড়া। মায়ের কাছ থেকে কিছু দূরে দূরে থাকতে ভালোবাসে এরা। একা একা ঘুরে বেড়ায় এক জোড়া শুমচার ছানা। একদিন দেখা গেল ঝুম বৃষ্টির মধ্যে পুরুষ ও স্ত্রী খয়রা মাথা শুমচা ফুটফুটে ছানাদের জন্য খাবার সংগ্রহ করছে। স্যাঁতস্যাঁতে মাটি থেকে কেঁচো সংগ্রহ করছে তারা। সেই খাবার তুলে দিচ্ছে বাচ্চাদের মুখে। দুই-তিন দিন বয়সী মায়ের মুখ থেকে খাবার নিচ্ছে।
খয়রা মাথা শুমচে শালিকের চেয়ে আকারে ছোট। এরা লম্বায় ১৯ সেমি। দেহ সবুজ। মাথার চাঁদি খয়েরী। ঘাড় কালচে খয়েরি। গলা ও গাল কালো। চোখ কালচে বাদামি। এদের চঞ্চু কালো। ডানা উজ্জ্বল নীল। পা কালচে। শুমচার বাচ্চাদের রঙ অনেকটা বিবর্ণ। পেট বাদামি। চোখের রং বাদামি। খয়রামাথা শুমচার ইংরেজি নাম Hooded pitta এবং বৈজ্ঞানিক নাম Pitta sordida। খয়রা শুমচা সাধারণত চিরসবুজ বনের তলদেশে পোকামাকড় খুঁজে বেড়ায়। এরা বনের মধ্যে বাসা বাঁধে। সর্বোচ্চ ২-৫টি ডিম দেয়। বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, ভুটান, মালেশিয়া, চীন, ভিয়েতমান, মিয়ানমারসহ পৃথিবীর ২১ লাখ বর্গকিলোমিটার জুড়ে এদের আবাস। বাংলাদেশে এদের গ্রীষ্মে দেখা যায়।
২০০৯ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশের উদ্ভিদ ও প্রাণিকোষ বইয়ে শুমচা পাখিকে বাংলাদেশে দুর্লভ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আর্ন্তজাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থা (আইইউসিএন) এটিকে সারা বিশ্বে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত প্রাণী হিসেবে উল্লেখ করেছে। বাংলাদেশের ১৯৭৪ ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে শুমচা প্রজাতিটি সংরক্ষিত।