খয়রা মাথা শুমচা দুর্লভ পাখি। কমই দেখা মিলে। তবে পরিযায়ী পাখিটির দেখা মিলল পার্বত্য চট্টগ্রামে। সমপ্রতি খাগড়াছড়ির দীঘিনালার পাহাড়ি বনে পাখিটি দেখা যায়। পাহাড়ি বনে এটি বংশ বৃদ্ধি করেছে। বাচ্চারা উড়তে শেখার পর শুমচারা এখানে স্থায়ী আবাস গড়ে না। অন্যত্র চলে যায়। পরিযায়ী পাখিটি পাহাড়ি বনে বাচ্চা ফুটিয়েছে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছানা মায়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ওড়ার চেষ্টা করছে। কখনও গাছের ডালে কখনও ঘন সবুজ ঘাসে বিচরণ করছে বাচ্চা জোড়া। মায়ের কাছ থেকে কিছু দূরে দূরে থাকতে ভালোবাসে এরা। একা একা ঘুরে বেড়ায় এক জোড়া শুমচার ছানা। ঝুম বৃষ্টির মধ্যে পুরুষ ও স্ত্রী খয়রা মাথা শুমচা ফুটফুটে ছানাদের জন্য খাবার সংগ্রহ করছে। স্যাঁতস্যাঁতে মাটি থেকে কেঁচো সংগ্রহ করে তারা। সেই খাবার তুলে দেয় বাচ্চাদের মুখে। দুই–তিন দিন বয়সি মায়ের মুখ থেকে খাবার নেয়।
খয়রা মাথা শুমচে শালিকের চেয়ে ছোট। এরা লম্বায় ১৯ সে.মি.। এদের দেহ সবুজ। মাথার চাঁদি খয়েরি। ঘাড় কালচে খয়েরি। গলা ও গাল কালো। চোখ কালচে বাদামি। এদের ঠোঁট কালো। ডানা উজ্জ্বল নীল। পা কালচে। শুমচার বাচ্চাদের রং অনেকটা বির্বণ। পেট বাদামি। খয়রামাথা শুমচার ইংরেজি নাম Hooded pitta এবং বৈজ্ঞানিক নাম Sorbida।
খয়রা শুমচা সাধারণত চিরসবুজ বনের তলদেশে পোকামাকড় খুঁজে বেড়ায়। এরা বনের মধ্যে বাসা বাঁধে। সর্বোচ্চ দুই থেকে পাঁচটি ডিম দেয়।
খাগড়াছড়ির শৌখিন আলোকচিত্রী সবুজ চাকমা বলেন ,‘ খয়রা মাথা শুমচা পরিযায়ী পাখি। তবে এবছর তাদের বিচরণ বেশ আশাজাগানিয়া, খাগড়াছড়ির বেশ কয়েকটি স্থানে দেখা গেছে।’
বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, ভুটান, মালেশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশে এদের আবাস। বাংলাদেশে এদের গ্রীষ্মে দেখা যায়।
২০০৯ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের উদ্ভিদ ও প্রাণীকোষ’ বইয়ে শুমচা পাখিকে বাংলাদেশে দুর্লভ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থা (আইইউসিএন) এটিকে সারা বিশ্বে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত প্রাণী হিসেবে উল্লেখ করেছে।
বাংলাদেশের ১৯৭৪ ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে শুমচা প্রজাতিটি সংরক্ষিত।