পাহাড়ে ফুটবল স্বপ্নের কারিগর সুইহলামং

কাউখালীর মাঠে জন্ম নিচ্ছে জাতীয় দলের নতুন তারকা

রাঙামাটি প্রতিনিধি | শনিবার , ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ১২:৫০ অপরাহ্ণ

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে প্রতিভাবান খেলোয়াড় তৈরির কারিগরি রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার সুইহলামং মারমা। তিনি ২০১৮ সালে নিজের নামে গড়ে তুলেন একটি ফুটবল একাডেমি। যার নামও সুইহলামং ফুটবল একাডেমি। বর্তমানে একাডেমিতে রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি থেকে প্রায় ৫০ জনের অধিক খেলোয়াড় রয়েছেন। এসব খেলোয়াড়দের জন্য থাকাখাওয়া, পড়াশোনা ও খেলাধুলাসহ যাবতীয় খরচ নিজেই বহন করেন সুইহলামং।

সমপ্রতি রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলা সদরে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা পরিষদ মাঠে নিজেই খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ করাচ্ছেন সুইহলামং মারমা। এ সময় কথা হয় সুইহলামং মারমার সঙ্গে। তিনি বলেন, ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশ আনসার প্রতিরক্ষা বাহিনীর ফুটবল দলের কোচ হিসেবে তিনি কর্মরত রয়েছেন। তার স্বপ্ন ছিল নিজে প্রশিক্ষণ করিয়ে পার্বত্য অঞ্চল থেকে জাতীয় পর্যায়ে খেলোয়াড় তৈরি করবেন। সে লক্ষ্যে ২০১৮ সালে ১৪ জন নারী খেলোয়াড় নিয়ে নিজের নামে একটি ফুটবল একাডেমি তৈরি করেন তিনি। একাডেমিতে ভর্তি হওয়া খেলোয়াড়দের থাকাখাওয়া, পড়াশোনাসহ যাবতীয় খরচ নিজেই বহন করতেন। প্রথম দিকে নিজের পক্ষে একাডেমি কার্যক্রম চালানো অনেকটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। নিজের ও স্ত্রীর বেতন, বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে একাডেমি চালাতে হয় তার। তবে সমপ্রতি জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান তাকে সহযোগিতা করে পাশে দাঁড়িয়েছেন।

সুইহলামং মারমা আরও বলেন, বর্তমানে তার একাডেমিতে ৫০ জনের অধিক নারী খেলোয়াড় রয়েছেন। প্রতি মাসে খেলোয়াড়দের থাকাখাওয়াসহ অন্যান্য খরচ বাবদ সর্বনিম্ন প্রায় ৮০৯০ হাজার টাকা লাগে। একাডেমি শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তার একাডেমি থেকে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে ৮ জন নারী খেলোয়াড় জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছে। এছাড়া তার একাডেমি থেকে সেনাবাহিনীতে চাকরি পেয়েছেন ৪ জন খেলোয়াড়। বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন ৭ জন। ২০১১ সাল হতে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বর্তমান জাতীয় নারী ফুটবল দলের ঋতুপর্ণা, রুপনা, মনিকা, আনাই, আনুচিংদের কোচ হিসেবেও কাজ করেছিলেন তিনি।

একাডেমির খেলোয়াড় মাহালা সিং মারমা বলেন, ২০১৯ সালে কাউখালী সুইহলামং ফুটবল একাডেমিতে ভর্তি হয়েছি। আমি ২০২২ সালে অনুর্ধ্ব ১৫ জাতীয় নারী ফুটবল দলের চান্স পেয়েছি। এর পেছনে আমার একাডেমি ও কোচ সুইহলামং মারমার অবদান রয়েছে। আমি ভবিষ্যতে জাতীয় দলের একজন ভালো খেলোয়াড় হতে চাই।

মাসিনু মারমা নামে আরেকজন বলেন, আমি এই একাডেমিতে একজন খেলোয়াড় এবং এর পাশাপাশি সহকারী কোচ ও রেফারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। ২০১৮ সালে এই একাডেমিতে ভর্তি হয়েছি। আমরা এই একাডেমি থেকে লেখাপড়া, খেলাধুলা ও থাকাখাওয়ার সুবিধা পেয়ে থাকি। রাঙামাটির মেয়ে বাংলাদেশের প্রথম নারী ফিফা রেফারি জয়া চাকমার মতো আমিও রেফারি হবএটাই আমার স্বপ্ন।

বান্দরবানের মেয়ে মিউ প্রু মারমা বলেন, ছোটবেলা থেকে ফুটবল খেলার প্রতি আমার আগ্রহ ছিল। আমার বাবা ও ভাইয়ের মাধ্যমে ২০২৪ সালে রাঙামাটির কাউখালী উপজেলায় এই ফুটবল একাডেমিতে ভর্তি হয়েছি। আমি এই একাডেমির মাধ্যমে ফুটবলের পাশাপাশি বাংলাদেশ আনসার দলে সাইক্লিং করি। আনসার দলে আমাকে সাইক্লিংয়ে মাসিক ভাতাপ্রাপ্ত খেলোয়াড় করে দেয়া হয়েছে।

কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আতিকুর রহমান বলেন, এই একাডেমি শুধু কাউখালী বা রাঙামাটিতে ভূমিকা রাখছে না। এই একাডেমি থেকে বর্তমানে জাতীয় দলে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক যে দলগুলো আছে, সেখানে ৮ জন খেলোয়াড় রয়েছে। এছাড়া আনসার ও সেনাবাহিনীতে এই একাডেমি থেকে খেলোয়াড় রয়েছে। আমরা উপজেলা প্রশাসন এই একাডেমির সঙ্গে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত। খেলোয়াড়দের খাদ্য সহায়তা জেলা প্রশাসন দিয়ে থাকে আর উপজেলা প্রশাসন খেলোয়াড়দের খেলার সামগ্রীসহ আনুষাঙ্গিক সে সমস্যাগুলো রয়েছে, সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করে থাকি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডাকাত সন্দেহে মাছ ধরার ট্রলারে অন্য ট্রলারের ধাক্কা
পরবর্তী নিবন্ধবোয়ালখালীতে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু