পাহাড়ের বনের জন্য সুখবর নেই। ক্রমেই হারিয়ে যেতে বসেছে পাহাড়ের প্রাকৃতিক বন। নির্বিচারে বন ধ্বংস, বিদেশি প্রজাতির গাছের আগ্রাসন, বাণিজ্যিক বন সমপ্রসারণ ও বন বিভাগের উদাসীনতা প্রাকৃতিক বন ধ্বংসের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এতে বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ। বিনষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ। হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক জলধারা। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে হারিয়ে যাবে প্রাকৃতিক বন। আজ রোববার আন্তর্জাতিক বন দিবস। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘বন পুনরুদ্ধার : উত্তরণ ও কল্যাণের একটি পথ’। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক বন রক্ষায় এখনই উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি বনের আয়তন ৩ লাখ ২২ হাজার ৩৩১ হেক্টর। তবে বন ধ্বংসের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে শত প্রজাতির বৃক্ষ, লতা-গুল্ম। বিচরণ ক্ষেত্র কমে আসায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণী। অপরদিকে পাহাড়ি বনে পানির উৎস কমেছে প্রায় ৬১ শতাংশ। পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকাংশ বন ধ্বংসের অন্যতম কারণ বিদেশি জাতের গাছের আগ্রাসন। আকাশ মনি, ইউক্যালিপট্যাস, রাবার, সেগুনসহ বিদেশি গাছ সৃজনের কারণে কমে যাচ্ছে প্রাকৃতিক বনের পরিমাণ। খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বলেন, বিদেশি গাছ পরিবেশে ভারসাম্য রাখতে পারে না। এতে ব্যক্তি বিশেষ লাভবান হলেও প্রকৃতির অপরিমাণযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। পানির উৎসস্থল ধ্বংস ছাড়াও ইটভাটার জন্য নির্বিচারে অশ্রেণিভুক্ত বনের গাছ কাটার কথা উল্লেখ করেন তিনি। প্রদীপ চৌধুরী বলেন, অনুমতি ছাড়া অশ্রেণিভুক্ত বনের গাছ কাটার কোনো নিয়ম নেই। কিন্ত খাগড়াছড়িতে কোনো বাধা ছাড়া নির্বিচারে বন উজাড় হচ্ছে। ফলে বলা যায়, একসময় সবুজ পাহাড় বলতে আর কিছু থাকবে না।
অপরদিকে বন ধ্বংসের কারণে বিলুপ্তির পথে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকাংশ বন্যপ্রাণী। পাহাড়ে ভাল্লুক, বাঘ, সাম্বার হরিণসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি দেখা গেলেও আজ তা বিপন্ন। একসময় ৩৭৫ প্রজাতির পাখি দেখা যেত পাহাড়ি বনে, যা আজ হারিয়ে গেছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাবারাং এর নির্বাহী পরিচালক ও গবেষক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, শত শত বছরে সৃষ্ট প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বন বিভাগ সেগুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির বাণিজ্যিক বন সৃজনে ব্যস্ত। ফলে প্রতিবছর কমছে প্রাকৃতিক বনের পরিমাণ। বনের মূল্যবান কাঠ পাচার হয়ে যাচ্ছে। দুর্গম বনাঞ্চলেও এখন আর প্রাচীন বৃক্ষ দেখা যাচ্ছে না।
খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সরোয়ার জামান বলেন, অশ্রেণিভুক্ত বনাঞ্চল মূলত জেলা প্রশাসকের আওতাধীন। বিনা অনুমতিতে এসব বন থেকে গাছ কর্তনের সুযোগ নেই। তবে অবৈধভাবে কেউ বনজ দ্রব্য পরিবহন করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার বন বিভাগের রয়েছে। তিনি এ বিষয়ে অভিযান জোরদার করার কথা জানান।












