সীতাকুণ্ড উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জঙ্গল সলিমপুরে পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণ চলছে। চারদিকে দেয়াল তুলে ভেতরে চলছে পাহাড় কাটা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা পাহাড় কাটায় বাধা দিতে গেলে প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়ছেন বলে জানা গেছে।
গত বছর উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ অভিযানে একই স্থানে পাহাড় কেটে নির্মিত অবৈধ ঘর ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল। এ ঘটনার পর কিছুদিন পাহাড় কাটা ও ঘর নির্মাণ বন্ধ থাকলেও আবার সক্রিয় হয়েছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়াও গত বছর ২২ জনের বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগে মামলা করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। গতকাল ১৫ ফেরুয়ারি বিশাল পাহাড় কাটার স্থানে ঘর নির্মাণে বাধা দিতে গেলে পাহাড় খেকোদের রোষানলে পড়েছেন স্থানীয় সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আজিজ। জঙ্গল সলিমপুর গিয়ে দেখা যায়, ছিন্নমূল ১ নম্বর সমাজ অন্ধ কল্যাণ সমিতির জায়গার পাশে হাসেম নেতার বাড়ির পিছনে পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ করছেন আব্দুল হক। ইতিমধ্যে পাহাড়ের অংশ কেটে আরসিসি দেয়াল দেওয়া হয়েছে। আব্দুল হক ফোনে বলেন, ‘পাহাড় খাস শ্রেণিভুক্ত জায়গা। ওই পাহাড়গুলো স্থানীয় সরকারদলীয় লোকেরা দখল করে বেচাবিক্রি করে থাকে। অধিকাংশ বহিরাগত মানুষ পাহাড়ের দখল কিনে ঘর–বাড়ি করছে। আমিও দখল কিনে ঘর করেছি। এখন ঘরগুলো সংস্কার ও বাড়ানোর জন্য পাহাড়ের কিছু অংশ কাটা হয়েছে। এতে সমস্যা হওয়ার কিছু নেই।’ ওই পাহাড়ি এলাকায় ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার ঠিকাদারি নিয়েছে ফারুক ও হাসান মিস্ত্রি নামে দুই ব্যক্তি। হাসান মিস্ত্রি মোবাইলে বলেন, ‘পাহাড় কাটার পর আমরা চুক্তিভিত্তিক ঘর নির্মাণ করি। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা পাহাড় কাটছে। এতে আমাদের করার কিছু নাই। প্রশাসন সব জানে বলে জানান তিনি।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য আরিফুল আলম বলেন, ‘পাহাড়খেকোদের ম্যানেজ করতে পারলে পাহাড়ি এলাকায় সরকারি খাস প্লট মিলে অনায়াসে। প্রতি প্লট বেচাকেনা হয় ৮–১০ লক্ষ টাকায়।’
সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আজিজ বলেন, ‘গত শুক্রবার স্কুলের মিটিং শেষে স্থানীয় পাহাড়খেকোদের নেতৃত্বে একটি মিটিং হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয় পূর্বের ন্যায় পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ করা হবে। বিষয়টি ইউএনও ও এসি ল্যান্ড মহোদয় জানতে আমাদেরকে ঘটনাস্থলে পাঠান। এতে পাহাড় কাটার সত্যতা পাওয়া গেছে। আমি বাধা দিতে গেলে ঘর নির্মাণকারীদের রোষানলে পড়তে হয়েছে। সেখানে ২ ও ৩ নং সমাজ এলাকায় খাদিজাতুল কোবরা মাদরাসার হুজুর আব্দুল হক সরকারি জায়গা দখল করে আরসিসি পিলার দিয়ে ঘর নির্মাণ করছেন। এইভাবে সেখানে পাহাড় কাটা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, জঙ্গল সলিমপুর এলাকা সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের অভয়ারণ্য। কিছু প্রভাবশালী পাহাড়খেকো পাহাড় কাটছে। কয়েকদিনের মধ্যে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হবে। পাহাড়ি খাস জায়গা যারা বেচাকেনা করছে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।