পাহাড় কেটে বহুতল ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে নগরীর আসকার দীঘির পাড় এলাকায় একটি ভবন ভাঙা শুরু করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। সিডিএ’র নোটিশের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ আনেন ভবন মালিকেরা। ওই আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে যায় সিডিএ। আদালত উক্ত স্থগিতাদেশ বাতিল করার একদিনের মধ্যেই গতকাল ভবনটি ভাঙার অভিযান পরিচালনা করে সিডিএ। সিডিএ চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার নুরুল করিমের উপস্থিতিতে ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু হয়। এই সময় সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, ভবিষ্যতে এভাবে যেন পাহাড় কাটার সুযোগ কেউ না নিতে পারে সে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়গুলো রক্ষা করার প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগই নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।
সূত্র জানিয়েছে, নগরীর আসকার দীঘির পাড় এলাকায় গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকের পাহাড় বলে পরিচিত এলাকায় ‘স্বপ্নীল ফ্যামিলি ওনার্স’ নামে ৯২ জনের একটি দল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। তিনটি বেজমেন্ট ও ১৪ তলা ভবনের অনুমোদন নেয় ভবন মালিকরা। প্রায় ৩০ কাঠা জমির উপর ভবন নির্মাণে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কাছ থেকে নেয়া অনুমোদনে শর্ত ছিল ৪০ শতাংশ জমিতে ভবন নির্মাণের পাশাপাশি ৬০ শতাংশ খালি রাখতে হবে, অক্ষত রাখতে হবে পাহাড়। কিন্তু সেই শর্ত ভেঙে তারা পাহাড় কাটে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া অনুমোদনের চেয়ে বেশি জমিতে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে দেখা যায়, বড় আকারের টিনের শিট দিয়ে পুরো প্রকল্প এলাকা ঘেরা। সামনের দিকে ভবনের তিনতলার সমান কাঠামো উঠেছে। ভেতরের অংশে পাহাড় কেটে ঢালু করা হয়েছে। সেখানেও একাংশে ভিত্তি নির্মাণের কাজ চলছে। নগরীর আসকার দীঘির পাড়ের ওই পাহাড়ের ঢালের সর্বোচ্চ চূড়া ১২৭ ফুট উঁচু। বাস্তবে পাহাড় হলেও সরকারের রেকর্ডে জায়গাটি বাড়ি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অনুমোদন নেয়ার পর থেকে জায়গাটিতে পাহাড় কাটা হচ্ছিলো বলে অভিযোগ উঠে।
সিডিএ’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পাহাড় কাটার অভিযোগ উঠায় ‘স্বপ্নীল ফ্যামিলি’ নামের একটি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের বিপরীতে তারা উচ্চ আদালতে গিয়েছে। আদালত স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। আদালতের ওই স্থগিতাদের বিরুদ্ধে সিডিএ আপীল করে। চেম্বার জজের আদালত গত ২০ এপ্রিল স্বপ্নিল ফ্যামিলির পক্ষের যে আদেশ ছিল তা স্থগিত করে দেন। এই আদেশ পাওয়ার একদিনের মাথায় গতকাল অভিযানটি পরিচালনা করা হয়। সিডিএ’র পক্ষে অভিযান পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট নজরুল ইসলাম। সিডিএকে অভিযানে সহায়তা করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
সিডিএ’র অথরাইজেশন অফিসার তানজীব হোসেন বলেন, শুরুর দিকে কিন্তু এখানে স্থাপনা ছিল না, তখন পাইলিং ও বেসমেন্টের কাজ শুরু করেছিল। তখনই আমরা তাদের বাধা দিই। সেসময় বিচ্যুতি দেখে যখনই নোটিশ করি, তখন এর প্রেক্ষিতে কোর্টে গিয়ে ইনজাংশন নিয়ে আসে। আদালতের নির্দেশ থাকায় আমরা এগুতে পারছিলাম না। আজ সিডিএ চেয়ারম্যান মহোদয়ের নির্দেশে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছি। এখানে পাহাড়ের অবয়ব পরিবর্তন করেছে। পাহাড় কাটা হয়েছে। ৬০ শতাংশ জমি খালি রাখার কথা ছিল। তা না মেনে ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। অনুমোদনের বাইরে যে অংশে ভবনের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে সেটুকু ভেঙে দেয়া হবে বলেও জানান সিডিএ’র অথরাইজেশন অফিসার তানজীব হোসেন। মূলত পাহাড় কেটে এবং নকশার বিচ্যুতি ঘটিয়ে এই ভবনটি করা হচ্ছিল। পাহাড় কেটে কিছু করা পরিবেশ আইনের লঙ্ঘন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
উচ্ছেদ কার্যক্রম তদারকি করতে এসে পাহাড় কাটার মহোৎসব দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে পাহাড়ে আঁছড় দিতে কেউ যাতে দুইবার ভাবে আমরা সেই ব্যবস্থা করে যাবো। এর আগে গত বছরের জানুয়ারি মাসে একই এলাকায় অভিযান চালিয়েছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৈতি সর্ববিদ্যা। তিনি সেদিন জানিয়েছিলেন, পাহাড় কেটে সেখানে ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। পরিবেশ অধিদপ্তর চার বছর আগে একবার এই ভবন নির্মাণকারীদের জরিমানাও করেছিল বলেও সূত্র জানিয়েছে। সিডিএ’র অভিযানকালে স্বপ্নিল ফ্যামিলি অ্যাসোসিয়েশনের কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি।