পাহাড়ে অনেক উন্নয়ন, অনেক বদল

পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৬ বছর

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | শনিবার , ২ ডিসেম্বর, ২০২৩ at ৬:২১ পূর্বাহ্ণ

আজ পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২৬ বছর। চুক্তি পরবর্তী ২৬ বছরে বদলে গেছে পাহাড়ি জনপদ। সরকারিবেসরকারি নানা উন্নয়ন প্রকল্পে দৃশ্যমান অগ্রগতি এসেছে পর্যটন, কৃষি, সড়ক যোগাযোগ, শিক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে। কৃষি ও পর্যটনের উপর ভর করে অগ্রসর হচ্ছে পাহাড়ের অর্থনীতি। এত এত সাফল্যের পরও ভূমি সমস্যার সমাধান না হওয়ায় আক্ষেপ রয়েছে স্থানীয়দের।

পার্বত্য চট্টগ্রামের দুই দশকে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অবসান ঘটাতে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। শান্তি চুক্তি পরবর্তী সরকারিবেসরকারি নানা উদ্যোগে বদলে যেতে শুরু করে পার্বত্য জনপদ। পাহাড়ে পর্যটন, কৃষি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে। শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে পর্যটনের দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। বর্তমানের জেলার প্রায় ১ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। খাগড়াছড়ির সড়ক যোগাযোগে যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। এর সুফল পাচ্ছে পর্যটন, কৃষি খাত। নিরাপত্তার শঙ্কা না থাকায় পাহাড়ের পর্যটক সমাগম বেড়েছে। এতে বিকশিত হয়েছে স্থানীয় অর্থনীতি।

খাগড়াছড়ি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও হোটেল গাইরিং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, শান্তি চুক্তির পর পাহাড়ে নিরাপত্তার সংকট দূর হয়েছে। সাজেক, আলুটিলা, রিছাং ঝরনাসহ নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র উঠেছে। পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্র করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষাখাতের ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ২০১৭ সাল থেকে মাতৃভাষায় বই পাচ্ছে পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা। এটিকে পাহাড়ের শিক্ষা ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখছে সংশ্লিষ্টরা।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাহাব উদ্দিন বলেন, চুক্তি পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক শিক্ষায় প্রভূত উন্নতি হয়েছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য মাতৃভাষার বই সরবরাহ করা হয়েছে। প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিশুদের মাতৃভাষায় পাঠদান করানো হচ্ছে। নতুন বছরে শুরুতে ৩৮ হাজার শিক্ষার্থীকে নিজ মাতৃভাষার বই দেয়া হবে।

এদিকে চুক্তি পরবর্তী কৃষি খাতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। আম, মাল্টা, কলাসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের আবাদ বেড়েছে। কৃষিতে প্রণোদনার পরিমাণও বেড়েছে। খাদ্য শস্য উৎপাদনে স্বয়ংসর্ম্পূণ হয়েছে বলে জানান খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার। তিনি বলেন, পাহাড়ে ফলদ বাগান গড়ে উঠেছে। উন্নত জাতের ধানের চাষ হচ্ছে। সরকার এখানে প্রণোদনা কর্মসূচি এবং রাজস্ব খাতের মাধ্যমে কৃষকদের বীজ ও সার সহায়তা দিচ্ছে। ক্ষুদ্র চাষিরা চাষাবাদে আগ্রহী হয়েছে।

পার্বত্য শান্তি চুক্তিকে পাহাড়ে আশীর্বাদ হিসেবে উল্লেখ করেছেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান। তিনি বলেন, চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়িবাঙালির মাঝে সম্প্রীতি ও আস্থার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে পাহাড়ের উন্নয়ন আরো এগিয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, শিক্ষা, কৃষি, সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। পর্যটন শিল্পের খাত বিকশিত হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন সীমান্ত সড়ক নির্মিত হওয়ায় অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় সভাপতি বিমল চাকমা। তিনি বলেন, চুক্তির মৌলিক ধারাগুলো অবাস্তবায়িত রয়েছে গেছে। এখানে মূল সমস্যা হচ্ছে ভূমি সমস্যা। সরকার এখনো ভূমি সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। সরকার যদি ভূমি সমস্যা সমাধান করতে পারে বাকি সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারবে।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, পার্বত্য শান্তি চুক্তির ৭২টা ধারার মধ্যে ৪৮টি ধারা সম্পূর্ণ ও ১৫টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে। ৯টি ধারা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধক্লাইমেট মোবিলিটি চ্যাম্পিয়ন লিডার অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধসব ওসি ও ইউএনওকে বদলির নির্দেশ ইসির