পাহাড়ি ঝর্ণা এলাকায় দুর্ঘটনা রোধে নেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা

মাহবুব পলাশ, মীরসরাই | মঙ্গলবার , ৪ জুন, ২০২৪ at ১১:১৯ পূর্বাহ্ণ

বছর ঘুরে আবার আসছে বৃষ্টির দিন। ইতিমধ্যে ঘূর্ণিঝড়সহ কয়েকদফা কাল বৈশাখী ঝড় বৃষ্টিও বয়ে গেছে। যে কোন সময় লাগাতার বৃষ্টির আশংকা রয়েছে। কারন চলতি জ্যেষ্ঠ মাস পেরুলেই সামনে আষাঢ় মাস। আর বর্ষা এলেই সৌন্দর্য্য বেড়ে যায় মীরসরাই উপজেলার ঝর্ণাগুলোর। বর্ষন মুখর দিন এলেই যেমন ঝর্ণার কলতান আর চঞ্চলতা বেড়ে যায়, আর তার সাথে ঝর্ণার রূপ উপভোগ করতে ভরা ঝর্ণায় দর্শনার্থীদের আগমন বাড়তে শুরু করে। দূর্গম গিরি কান্তা পেরিয়ে ঝর্ণার কলতান শুনতে যেন মাতোয়ারা হয়ে যায় কিছু সৌন্দর্য্য প্রেমিক। আর সেখানে যে আসতে বা সেখানকার কিছু সতর্কতা বিষয়ে সচেতন না থাকার দরুন প্রায়শ:ই ঘটছে প্রাণহাণি সহ বড় বড় দুর্ঘটনা।

ভরা বর্ষার জলের তোড়ে ঝর্ণাগুলো সামনে অনেক উচ্ছ্বল হয়ে উঠবে। কিন্তু এসব ঝর্ণায় যেতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত গাইড বৃদ্ধি করা, সতর্কতা ব্যবস্থা কঠোর ভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহন করা। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে আসা মেডিকেল শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আনাস খৈয়াছরা ঝর্ণা দেখতে গিয়ে পা পিছলে নিহত হয়। গত বছরের অক্টোবর মাসে চট্টগ্রামের আরিফ উদ্দিন ( ১৯ ) ও নুরুল আবছার ( ২০) দুই তরুণ রুপসী ঝর্ণার কূপে তলিয়ে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যবরণ করে। এভাবে বিগত কয়েক বছরের মৃত্যুর মিছিল বর্ষা এলে যেন সকলের মনে আরো আতংক ধরিয়ে দেয়। সচেতন মহল মনে করেন প্রয়োজনে আনসার টিম দ্বারা গাইড ব্যবস্থা জোরালো করা। গত কয়েক বছরে অন্ত:ত ২০ জনের মৃত্যু ও অগনিত দর্শনার্থী হতাহত হবার ঘটনা ঘটেছে। বর্ষা এলেই প্রতি সপ্তাহেই যেন কোন না কোন দুর্ঘটনার প্রহর গুনতে হয়। গত দুবছরে মেডিকেল শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পেশাজীবিসহ অনেক স্বজন হারিয়েছে দেশের অনেক পরিবার। গত দেড় দশকের বহুল জনপ্রিয় খৈয়াছরা ঝর্ণা, বোয়ালিয়া ঝর্ণা আর রুপসী ঝর্ণা এখানকার শেষ বর্ষার প্রধান আকর্ষন এখন। বিগত দিনে কয়েক বছরের মতো দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করা সহ বনবিভাগের সতর্কতামূলক প্রচারনার দরুন দুর্ঘটনা ও কমেছে। তবু কিছু মানুষকে ঝর্ণা এলাকায় নিয়ম নীতির নানা নির্দেশনা না মানার অভিযোগ উঠেছে। তাই বনকর্মীদের দ্বারা প্রহরি বা আনসার টিম দ্বারা রুটিন পাহারার পরামর্শ অনেকের। এতে অন্তঃত প্রাণহানি ঘটবেনা কোন দর্শনার্থীর। কারন বিগত বছরগুলোতে অনেক দর্শনার্থী হাত পা হারানো সহ মৃত্যুবরণ করেছে অনেক সম্ভাবনাময় যুুবক।

সম্প্রতি বর্ষায় এই ভরা সময়ে রেকর্ড পরিমান দর্শনার্থী ঝর্ণাগুলোতে দেখা গেছে। সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি মীরসরাই ও বড়তাকিয়া এলাকায় শত শত দর্শনার্থীদের ফিরে যেতে বাসের অপেক্ষারত দেখা যায়। খৈয়াছরা ঝর্ণা দেখতে আসা চট্টগ্রামের জনৈক প্রকৌশলী আলাউদ্দিন আলো ( ৩২) বলেন, খুব ভাল লাগছে বর্ষার এই অপরূপ সুন্দর দেখতে। চট্টগ্রাম থেকে এসে এতো সুন্দর দর্শনীয় প্রাকৃতিক লীলাভূমি দেখে আসলেই বিমোহিত। কুমিল্লা থেকে আসা শিক্ষিকা রুপনা পাল

( ২৮) বলেন, এখানকার ঝর্ণা আর ঝর্ণায় যেতে আসতে পাহাড়ি বৈচিত্র্যময় পথ ও অনেক নান্দনিক।

এই বিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম বলেন, ঝর্ণাগুলোতে যাবার সময় বিশেষ করে বৃষ্টিপাত বেড়ে গেলে পানি বেড়ে যাবে এই বিষয়ে কিছুটা সতর্ক থাকা এবং ঝর্ণার উপরের ঝুঁকিপূর্ণ পিচ্ছিল ধাপগুলোতে কোনভাবেই উঠার চেষ্টা না করা। যেতে আসতে খুবই সতর্কতার সাথে চলা, সাতার না জানলে কূপের পানিতে না নামা এসকল বিষয়ে সতর্ক থাকা খুবই জরুরী।

মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, ইতিমধ্যে অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে উঠে পিছলে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন। অথচ দুর্গম উঁচু স্থানে না উঠে ঝর্ণার জলে নিচে থেকে সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারছেন। সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে এসে যদি নিজের জীবনই না থাকে বিষয়টি কি আগে ভাবা উচিত। আবার অনেক তরুণ যুবক সাঁতার না জেনেই ঝর্ণার কূপে ডুব দিতে যাচ্ছে। এতে সে তলিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে স্ব স্ব পরিবার গুলো ও দর্শনার্থী ভাবা উচিত।

ইতিমধ্যে আমরা এসব বিষয়ে সচেতনতায় সতর্কতা নির্দেশনা দিয়েছি। এইসব নির্দেশনা সকলেই মেনে ঝর্ণা এলাকায় গেলে আশা করছি নিয়ন্ত্রন হবে অনাকাংখিত দুর্ঘটনা। বন বিভাগের খৈয়াছরা বিট কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, আমরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও সতর্কতার বিষয়ে আবারো প্রয়োজনীয় উদ্যোগের পুন: প্রস্তাবনা প্রদান করবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে লজ্জাবতী বানর অবমুক্ত
পরবর্তী নিবন্ধসাহিত্য-সাংস্কৃতিক ও বিতর্ক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ