পার্ক উট ও ইমুর ঘরে নতুন অতিথি

চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া | শনিবার , ১১ মে, ২০২৪ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের উট পাখি ও ইমু পাখির ঘরে এসেছে বেশ কয়েকটি নতুন অতিথি। এরা আলোকিত করেছে বিরল প্রজাতির এই দুই পাখির বেষ্টনী। এর আগে এই দুই পাখির দেওয়া ডিম থেকে বেশ কয়েকটি বাচ্চা ফুটে। এসব বাচ্চাকে পার্কের বন্যপ্রাণী হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন শেডে রেখে বেশ যত্নআত্তির মাধ্যমে বড় করে তোলা হয়।

পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, সম্প্রতি পার্কের উট পাখির বেষ্টনীতে থাকাবস্থায় বেশ কয়েকটি ডিম দেয়। সেই ডিম সংগ্রহের পর মাসহ নিয়ে রাখা হয় বন্যপ্রাণী হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন শেডে। সেখানে বেশ কয়েকদিন পর ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে তিনটি। বর্তমানে এই তিন বাচ্চা মায়ের সঙ্গে রয়েছে এবং হাসপাতালের শেডে বিচরণ করছে। একইসাথে চারটি বাচ্চা ফুটে ইমু পাখির ঘরে। সেই চার বাচ্চাকে রাখা হয় আলাদা কোয়ারেন্টাইন শেডে।

পার্ক কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, বিরল প্রজাতির উট পাখি ও ইমু পাখির ডিম থেকে ফোটা সাতটি বাচ্চাকে বড় করে তোলার জন্য দুইজন পরিচর্যাকারী নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা প্রতিদিন এসব বাচ্চার দেখভাল করাসহ বড় করে তোলায় যাবতীয় কাজ করছেন।

সম্প্রতি পার্কের বন্যপ্রাণী হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন শেডে গিয়ে দেখা যায়, মায়ের সঙ্গে ফুটফুটে তিনটি উট পাখির বাচ্চা বেষ্টনীর চারপাশে ঘুরছে। মায়ের সঙ্গে নিয়মিত খাবারও খাচ্ছে। অপরদিকে ইমু পাখির চার বাচ্চাকে আলাদা করে রেখে সেখানে প্রয়োজনীয় খাবার দেওয়া হয়েছে। এসব বাচ্চা সেই খাবার খেয়ে চারপাশে বিচরণ করছে। পরিচর্যাকারী এরশাদ আলী ও সাজেদুর রহমান বলেন, প্রতিদিন নিয়ম করে এসব বাচ্চাকে পরিমাণ মতো খাবার হিসেবে দেওয়া হয় কলমি শাক, পোল্ট্রি ফিড, বাঁধাকপি। এতে দিন দিন এসব বাচ্চা বড় হচ্ছে দেখে নিজেদেরও ভাল লাগছে। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে জানান, গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে দুই জোড়া উট পাখি সরবরাহ দেওয়া হয় চকরিয়ার ডুলাহাজারার চিরহরিৎ সংরক্ষিত বনের প্রাকৃতিক পরিবেশপ্রতিবেশে গড়ে তোলা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। এর পর ২০২৩ সালে উট পাখির ডিম থেকে একটি বাচ্চা পাওয়া যায়। তবে এবার (চলতি বছর) একসঙ্গে তিনটি বাচ্চা ফুটিয়েছে উট পাখি। তিনি আরও জানান, একই সময়ে বিরল প্রজাতির ইমু পাখির ঘরেও এসেছে চারটি ফুটফুটে বাচ্চা। উট এবং ইমু পাখির এসব বাচ্চাকে বড় করে তোলার জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব বাচ্চার বয়স দেড় মাস পেরিয়েছে। আরও মাসাধিক পর এসব বাচ্চাকে পার্কের বন্য প্রাণী হাসপাতালের কোয়ারেন্টাইন শেড থেকে দর্শনার্থীদের জন্য উম্মুক্ত নির্দিষ্ট বেষ্টনীতে নিয়ে যাওয়া হবে।

সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম পাখি হচ্ছে ইমু। বন্য পরিবেশে দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও এদের বসবাস অস্ট্রেলিয়াতেও। সমতল তৃণভূমি বা খোলামেলা বন জঙ্গলে এরা বাস করে। এরা যাযাবর শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। ইমু পাখি হলেও এরা উড়তে পারে না, তবে ঘণ্টায় ৪০ মাইল বেগে দৌঁড়াতে পারে। এরা দক্ষ সাতারুও বটে। ইমু খুব শান্তশিষ্ট ও উৎসুক পাখি। এরা সাধারণত ছয় ফুট পর্যন্ত উঁচু হয় এবং সর্বোচ্চ ওজন হয় ৬০৬৫ কেজি। ডিম দেওয়ার সময় হলে এরা বাসা বাঁধে। মা ইমু ডিম দেয়ার পর পুরুষ ইমু ডিমে তা দেয়। এই সময় তারা ডিম ছেড়ে অন্য কোথাও যায় না, এমনকি খাওয়াদাওয়াও করে না। এদের প্রধান খাবার গাছপালা, ফলমূল ও পোকা মাকড়। অপরদিকে উট পাখি সবচেয়ে বৃহৎ এবং উড্ডয়নে অক্ষম পাখি। আফ্রিকার সাহারা মরুভূমির দক্ষিণের তৃণভূমি এদের বিরচণস্থল। এক বিশাল তথা প্রায় ৯৯ লাখ ৮০ হাজার বর্গ কিলোমিটারজুড়ে এদের আবাস। বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। তবে আশঙ্কাজন পর্যায়ে পৌঁছেনি। সেই কারণে আইইউসিএন এই উট পাখিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউপজেলা নির্বাচন নিয়েও আওয়ামী লীগের তৃণমূলে দ্বন্দ্ব বাড়ছে
পরবর্তী নিবন্ধকেএনএফকে শান্তির পথে ফেরার আহ্বান বম কাউন্সিলের