কেমন সাড়া পাচ্ছেন? উত্তরে বললেন, দর্শনাথী বেশি পাঠক কম। প্রশ্নটি ছিল নগরের সিআরবি শিরীষতলায় চলমান বইমেলায় অংশ নেয়া প্রকাশনা সংস্থা তৃতীয় চোখের ব্যবস্থাপক সীমান্ত হেলালের কাছে। তার উত্তর সংক্ষিপ্ত, তবে ব্যাপকতা অনেক। অল্প কথায় যেন পুরো বইমেলার বাণিজ্যিক দিকটি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। অবশ্য কেবল বাণিজ্যিক নয়, এর সঙ্গে মেলায় প্রকৃত পাঠকের আনাগোনা কতটা রয়েছে তারও একটা ধারণা দিয়েছেন তিনি।
অবশ্য বইমেলায় দর্শনার্থীর সরব উপস্থিতিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ‘স্মৃতি বিস্মৃতির কানুনগোপাড়া’ গ্রন্থের লেখক মুস্তফা নঈম। তার মতে, বইমেলায় যারা আসবেন তারা সবাই বই কিনবেন তা ভাবার সুযোগ নেই। হয়তো বইমেলায় আসা ১০০ জনের মধ্যে ২০ জন বই কিনবেন বা বই কেনার ইচ্ছে নিয়েই আসবেন। বাকি যারা আসবেন তারা ঘুরে ঘুরে দেখবেন। ঘুরতে ঘুরতে কোনো একটা বই পছন্দ হলে কিনবেন। এর মধ্য দিয়ে হয়তো নতুন পাঠক তৈরি হবে। তাছাড়া মেলার মাত্র কয়েকদিন গেল। এত তাড়াতাড়ি পাঠক কম বা বিক্রি কমও বলা যাবে না। যারা প্রকৃত পাঠক তারাও ঘুরবেন, দেখবেন এবং পছন্দের বইয়ের তালিকা করবেন। তারপর কোনো একদিন এসে কিনবেন।
গতকাল রোববার ছিল বইমেলার তৃতীয় দিন। প্রথম দুদিনের চেয়ে পাঠক, লেখক ও দর্শনার্থীর ভিড় একটু কম ছিল এদিন। বেচাকেনাও প্রথম দুদিনের চেয়ে কম হয়েছে বলে জানালেন প্রকাশকরা। অবশ্য প্রথম দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় উপস্থিতি বেশি থাকার কথা স্বীকার করেছেন প্রকাশকরা। একইসঙ্গে শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশা পূরণ হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
তৃতীয় দিনের বেচাকেনা নিয়ে বেশিরভাগ প্রকাশককে অতৃপ্ত মনে হলেও মেলা ঘুরে দেখা গেছে, মেলায় আসা দর্শনার্থীর হাতে হাতে শোভা পাচ্ছে নতুন বইয়ের প্যাকেট। কাব্য, গল্প, উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনি কিংবা প্রবন্ধ। পছন্দ হলেই কিনছেন মেলায় আসা লোকজন। শওকত নামে এক পাঠক আজাদীকে বলেন, একটা প্রবন্ধের বই কিনেছি প্রথমা থেকে। হুমায়রা নামে আরেক পাঠক বলেন, বাতিঘর থেকে একটা উপন্যাস কিনেছি।
মেলার বিভিন্ন স্টলে দেখা গেছে লেখক আড্ডা দিচ্ছেন পাঠক ও তার ভক্তের সঙ্গে। অনেক স্টলে ছিল নতুন বইয়ের পাঠ উন্মোচনের আয়োজন। সন্ধ্যায় শৈলী প্রকাশন স্টলে সৈয়দা করিমুননেসার কাব্যগ্রন্থ ‘শব্দে আঁকি’ এর পাঠ উন্মোচন করেন কবি রাশেদ রউফ। এ সময় লেখকসহ অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রকাশকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত সবগুলো বই এখনো আসেনি। তৃতীয় চোখের ব্যবস্থাপক সীমান্ত হেলাল বলেন, বইমেলা উপলক্ষে ৫৩টা বই বের হবে। ২৩টা চলে আসছে। বাকিগুলো ধীরে ধীরে আসবে। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর জিমনেশিয়াম মাঠে যে বইমেলা হয়েছিল সেখানে ক্রেতা বেশি, দর্শনার্থী ছিল কম। এখানে উল্টো। তবে ধীরে ধীরে পরিচিতি বাড়লে শিরীষতলায়ও মেলা বেশি জমজমাট হবে। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ বইমেলার সঙ্গে মানানসই।
পার্ল পাবলিকেশন্সের বিক্রয়কর্মী সালাহ উদ্দিন আজাদীকে বলেন, জিমনেশিয়াম মাঠে অনুষ্ঠত প্রতিটি বইমেলায় অংশ নিয়েছি। সেখানে যেভাবে বেচাকেনা হয় সেভাবে এখানে (শিরীষতলা) এখনো হয়নি। এখানে প্রচুর মানুষ আছেন, সবাই তো আর পাঠক না। তিনি মেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।
গাজী প্রকাশনের এক বিক্রয়কর্মী আজাদীকে বলেন, জিমনেশিয়ামের তুলনায় এখানে বেচাকেনা অনেক কম।
এমেলিয়া প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী আবছার উদ্দিন লিটন আজাদীকে বলেন, প্রথম দুদিন বেচাকেনা ভালো ছিল। আজ একটু কম। উপন্যাস, কবিতা ও অনুবাদ গ্রন্থের চাহিদা বেশি।
এদিকে এবার প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে রাশেদ রউফের কাব্যগ্রন্থ ‘আমি সূর্য তুমি সূর্যমুখী’, হাসান আকবরের ভ্রমণকাহিনি ‘দেশে দেশে ভ্রমণ শেষে’, রোমেনা আফরোজের ‘পুঁজিবাদ আমাদের বন্দিদশা’, জাহেদ মোতালেবের ‘জয়নালের ইতালিযাত্রা’, সাজিয়া আফরিনের ‘মেঘালয়ের হাওয়া’সহ বেশ কয়েকটি গ্রন্থ পাঠপ্রিয়তা পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, মেলার আয়োজক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। তবে চট্টগ্রামের সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, নাগরিক সমাজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য শিল্প–সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরা সম্মিলিতভাবে এ মেলা বাস্তবায়ন করছেন। মেলা চলবে ২ মার্চ পর্যন্ত। মেলা প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা ও ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
রবীন্দ্র উৎসব : গতকাল বইমেলা মঞ্চে আয়োজন করা হয় রবীন্দ্র উৎসবের। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ শুধু বাংলা সাহিত্যের নয়, বিশ্ব সাহিত্যেরও সম্পদ। তাঁর কলমে আমাদের সমাজ এবং সংস্কৃতি নির্মিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ। সংকীর্ণতার পথ থেকে মানুষকে মুক্তির দিকে আহ্বান করেছেন তিনি। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মোকাবিলার জন্য রবীন্দ্রনাথ আজকে আরও প্রাসঙ্গিক।
শিক্ষাবিদ ড. আনোয়ারা আলমের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বই মেলা কমিটির আহ্বায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু। বিশেষ অতিথি ছিলেন বীর চট্টগ্রাম মঞ্চের সম্পাদক সৈয়দ ওমর ফারুক ও কাউন্সিলর মোহাম্মদ শহীদুল আলম। সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন অভ্যুদয় সঙ্গীত অঙ্গন, ঘুংঘুর নিত্যকলা একাডেমি, স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ডান্স, শিল্পী রূপসী হোড়, এনড্রিল ভিনসেন্ট ক্রাউলী ও অনন্দিতা মুৎসুদ্দি।