দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ নারী দল। টুর্নামেন্টের এবারের আসরের শুরুতেই সহজ প্রতিপক্ষ পেয়েছিল বাংলার নারীরা। কিন্তু সে সুযোগটাকে কাজে লাগাতে পারলনা সাবিনা–ঋতুপর্নারা। বরং প্রথম ম্যাচেই পয়েন্ট হারিয়ে হোঁচট খেল চ্যাম্পিয়নরা। নেপালের রাজধানী কাঠমন্ডুর রাজা দশরথ স্টেডিয়ামে পাকিস্তান নারী দলের সাথে ১–১ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ নারী দল। এই ম্যাচে হেরেই যেতে পারতো বাংলাদেশ। ভাগ্য ভাল ছিল বলেই ম্যাচের একেবারে ইনজুরি সময়ে শামসুন্নাহার জুনিয়রের গোলে এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারে বাংলাদেশ দল। অথচ গত আসরে এই পাকিস্তানকে ৬–০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল সাবিনারা। এবার তাদের বিপক্ষে কোনোমতে হার এড়াতে পেরেছে তারা। এই ম্যাচে ড্র করলেও সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের। কারণ পাকিস্তানকে হারিয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে শীর্ষে রয়েছে ভারত। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পয়েন্ট ১ করে। আগামী বুধবার ভারতের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচ ড্র করলে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হবে বাংলার মেয়েদের। পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতলেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত। তেমন সমীকরণ সামনে রেখে খেলতে নামা বাংলাদেশের মেয়েরা সমীকরণ মেলাতে পারেনি ফিনিশিংয়ের ব্যর্থতায়। শুরুর দিকে বাংলাদেশের রক্ষণে দুইবার হানা দেয় পাকিস্তান। কিন্তু ডিফেন্ডারদের দৃঢ়তায় সুবিধা করতে পারেননি নাহিদা খান। অষ্টম মিনিট প্রথম আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। ঋতুপর্নার ক্রসে শামসুন্নাহার জুনিয়র প্রথম হেড করলে বল উঁচুতে উঠে যায়। এরপর শামসুন্নাহারের হেডও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ২০ মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু বক্সের একটু ওপর থেকে শামসুন্নাহার জুনিয়রের শট চলে যায় ক্রসবার উচিয়ে। দুই মিনিট পর এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বল নিয়ে ছুটতে থাকা ঋতুপর্ণা ঠিক বক্সের ওপরে ফাউলের শিকার হন। সাবিনার ফ্রি কিক ডিফেন্ডারের মাথায় লেগে ক্রসবারের ওপর দিয়ে চলে যায়। ফলে আরো একবার হতাশ হতে হয় বাংলাদেশকে। ৩২ মিনিটে নিজেদের ভুলে গোল হজম করে বাংলাদেশ। রামিন ফারিদের লং পাসের পিছে ছুটছিলেন বাংলাদেশের ডিফেন্ডার শিউলি আজিম ও পাকিস্তানের জাহমিনা সামিন মালিক। বলের নাগাল পেলেও শিউলি গোলকিপারকে বাড়াতে গিয়ে দুর্বল টোকায় তুলে দেন জাহমিনার পায়ে। এই ফরোয়ার্ড নিখুঁত শটে অনায়াসে পরাস্ত করেন রূপনাকে। পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ সমতা ফেরাতে পারতো ৪৩ মিনিটে। কিন্তু ঋতুপর্ণার বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট ক্রসবারের লেগে প্রতিহত হলে হতাশা বাড়ে। ফলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বাংলাদেশের মেয়েরা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই চাপ সৃষ্টি করে খেলতে থাকে বাংলাদেশ। এ অর্ধের শুরুতেই ঋতুপর্ণার ক্রসে মাথা ছোঁয়ানোর মত কেউ ছিল না দূরের পোস্টে। ৫৯ মিনিটে এবারো ঋতুপর্নার ক্রস। কিন্তু তহুরা পাননি বলের নাগাল। ৭২ মিনিটে মনিকা চাকমার শট পাকিস্তান গোলরক্ষকের গ্লাভস গলে বেরিয়ে যাওয়ার পর ক্লিয়ার করেন জামিলা খান। এরপর সময় গড়ানোর সাথে সাথে আরও রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ে পাকিস্তান। ৭৭ মিনিটে উল্টো আবারও রক্ষণের ভুলে বিপদে পড়তে বসেছিল বাংলাদেশ। সে যাত্রায় দলকে বাঁচান রুপনা চাকমা। সময় যতই গড়াচ্ছিল ততই বাড়ছিল বাংলাদেশের আক্রমণ। কিন্তু গোল পাচ্ছিলনা। এক সময় পাকিস্তান যখন জয়ের আনন্দে মাতার প্রস্তুতি নিচ্ছিল ঠিক তখনই ছয় মিনিটের অতিরিক্ত সময়ে গোলের দেখা পায় বাংলাদেশ। বাঁ দিক থেকে ঋতুপর্নার ক্রসে গোলমুখে বল পান শামসুন্নাহার জুনিয়র। সেখান থেকে হেডে লক্ষ্যভেদ করেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। আর তাতেই সমতার স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ দল। এখন পরের ম্যাচে ভারতের কাছ থেকে একটি পয়েন্ট তুলে নিতে পারলেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যাবে বাংলাদেশের নারীদের।