পাউবোর নিলাম দরপত্র শিডিউল ক্রয়ে বাধা

অভিযোগ আমলে নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৮ জুলাই, ২০২২ at ৩:৪৫ পূর্বাহ্ণ

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর (যান্ত্রিক) থেকে বিভিন্ন স্ক্র্যাপ মালামাল ও যন্ত্রাংশ নিলামের জন্য গত ১৯ জুলাই দরপত্র (২য়) আহ্বান করা হয়। শিডিউল বিক্রি শুরুর পর থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ওই নিলামে অংশ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শিডিউল ক্রয় করতে গেলে তাদের ‘সন্ত্রাসীরা’ বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানাতে গেলেও তা আমলে না নেয়ার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একই মালামাল নিলামের জন্য গত জুন মাসেও দরপত্র আহ্বান করেছিল পাউবো। প্রথমবার কাঙ্ক্ষিত দর না পাওয়ায় পুনঃনিলাম দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। প্রথমবার শিডিউল বিক্রি করা হয়েছিল সোনালী ব্যাংক বহাদ্দারহাট শাখায়। তবে দ্বিতীয়বার অর্থাৎ বর্তমান দরপত্রের শিডিউল বিক্রি করা হচ্ছে অগ্রণী ব্যাংক মদুনাঘাট শাখা থেকে। বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন তুলেন নিলামে অংশ নিতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্ণধাররা। তাদের সন্দেহ, শিডিউল সংগ্রহে বাধা দেয়ার সঙ্গে এর যোগসূত্র থাকতে পারে। এদিকে শিডিউল ক্রয়ে বাধা দেয়ার বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করতে গতকাল বিকেলে একাধিক প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীরা সাগরিকাস্থ পাউবোর চট্টগ্রাম ড্রেজার পরিচালন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হোছাইনুদ্দিন ছিদ্দিকীর দপ্তরে উপস্থিত হন। যিনি নিলাম দরপত্র আহ্বান করেন। নিলামে অংশ নিতে ইচ্ছুক ব্যবসায়ীরা দৈনিক আজাদীকে জানিয়েছেন, তাদের অভিযোগপত্র নিতে অস্বীকার করেন নির্বাহী প্রকৌশলী। পরে তিনি গাড়িতে করে চলে যাওয়ার সময় অভিযোগের কপি নিলেও কোনো রিসিভ কপি দেননি।
এ সংক্রান্ত দৈনিক আজাদীর সংগ্রহে থাকা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, পাউবোর প্রকৌশলী গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার সময় অভিযোগ জানাতে নিলামে অংশ নিতে প্রতিষ্ঠানের লোকজন ঘিরে ধরেন। তারা অভিযোগের কপি গ্রহণ করে রিসিভ কপি দেয়ার আহ্বান জানান। এ সময় একজনকে বলতে দেখা গেছে, সন্ত্রাসীরা আমাদের মারছে। আমরা যেতে পারছি না। আমাদের অভিযোগের কপি দিচ্ছি, তিনি সেটা গ্রহণ করছেন না। মনে হচ্ছে তিনি এ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।’ এদিকে নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে জমা দিতে যাওয়া একাধিক অভিযোগের কপি দৈনিক আজাদীর কাছে রয়েছে। ‘রাইছা ফুড ফেয়ার’, ‘মা মরিয়ম এন্টারপ্রাইজ’ এবং মেসার্স মঈন উদ্দীন জাবেদ ট্রেডিং’ এর অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘নিলাম দরপত্র শিডিউল ক্রয়ের জন্য অগ্রণী ব্যাংক মদুনাঘাট শাখায় গেলে উক্ত স্থানে কিছু সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোকজন শিডিউল ক্রয় করতে বাধা প্রদান করে। ব্যাংক থেকে বের করে দেয়। এর মাধ্যমে নিলাম কাজটি অসৎ উপায়ে হাসিল করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের বঞ্চিত করার পাশাপাশি সরকারকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি সাধনের পায়তারা করা হচ্ছে বলেও এতে অভিযোগ করা হয়। এতে পুনরায় দরপত্র আহ্বান অথবা টেন্ডারের সময় বৃদ্ধি করা, নগরের সিএমপি কমিশনার, পুলিশ সুপার অথা বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তরে শিডিউল বিক্রির অনুরোধ করা হয়। ‘রাইছা ফুড ফেয়ার’ এর অভিযোগের অনুলিপি দেয়া হয় প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে।
এ বিষয়ে তাহি এন্টারপ্রাইজের মো. জামশেদ আলম চৌধুরী, মিশমা এন্টারপ্রাইজের আবদুল করিম বাবুল দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রতিদিনই আমাদের বাধা দেয়া হয়েছে। একজন মুরুব্বির গায়েও হাত তুলেছে। বিষয়টি নির্বাহী প্রকৌশলীকে মুঠোফোনে জানালেও কল রিসিভ করেন নি। তাকে গত কয়েকদিন মদুনাঘাটে আমরা পাইনি। আজ (গতকাল) সাগরিকায় পাউবোর ড্রেজার পরিচালন বিভাগে গেলেও তিনি অভিযোগ নিতে চাচ্ছেন না। পরে কাগজ নিলেও রিসিভ কপি দেননি।
মালিয়াত এন্ড তাসনিয়া এন্টারপ্রাইজের মো. আবু জাহেদ বলেন, বহদ্দার হাট থেকে মদুনাঘাট নিয়ে যাবে কেন। সেখানে সন্ত্রাসীরা বাধা দিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হোছাইনুদ্দিন ছিদ্দিকী দৈনিক আজাদীকে বলেন, বাধা দেয়ার বিষয়টি আজকে (গতকাল) জানতে পেরেছি। অভিযোগ পেয়েছি। কর্তৃপক্ষ যেভাবে সিদ্ধান্ত দিবেন সে আলোকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ প্রকৌশলী বলেন, নিয়ম হচ্ছে ব্যাংক থেকে শিডিউল সংগ্রহ করা। আমরা ব্যাংকে প্রচুর শিডিউল সরবরাহ করেছি। এখন পর্যন্ত ১৭৬ টি শিডিউল বিক্রি হয়েছে। এখন কেউ পথে বাধা দিলে সেটা তো আমরা জানতে পারবো না। পথে তো আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারবো না। তিনি বলেন, হতে পারে তাদের মধ্যে গ্রুপিংয়ের কারণে বা সমাঝোতা না হওয়ায় এমনটি হচ্ছে। তারপরও অভিযোগটি আমলে নিয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিডিউল বিক্রি কম হলে রাজস্ব কম আয় হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ জমা দিতে গিয়ে অশালীন আচরণ করেছেন দাবি করে তিনি বলেন, তারা আমার সঙ্গে অন্যায় করেছে। শালীনতা বাজায় রেখে কথা বলেনি। উল্টাপাল্টা কথা বলে ভিডিও করেছে। উল্লেখ্য, আজ বৃহস্পতিবার ওই দরপত্রের পৃথক ৮টি শিডিউল ক্রয়ের শেষ দিন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় লাইসেন্সবিহীন ৫ করাতকল সিলগালা
পরবর্তী নিবন্ধঅনুমতি ছাড়া ওয়াসার রাস্তা খননে মেয়রের ক্ষোভ