পেঁয়াজের ঝাঁজ ক্রমেই কমছে। পাইকারীতে অতিরিক্ত সরবরাহের জেরে সব ধরনের আমদানি পেঁয়াজের দাম এখন প্রতি কেজি ৪০ টাকার নিচে। আমদানি পেঁয়াজের দাম কমলেও আবার দেশী পেঁয়াজের উল্টো চিত্র। গত দুদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজের দাম ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা জানান, এবার পেঁয়াজের আমদানিকারকরা বড়সড় ধরা খেয়েছেন। আমদানিমূল্যের প্রায় অর্ধেক দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে শত শত বস্তা পেঁয়াজ পচে গেছে। পচা পেঁয়াজ নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এসব পচা পেঁয়াজ ফেরিওয়ালারা কিনে নিয়ে রোদে শুকিয়ে বিক্রি করছেন। বেশিরভাগ হোটেল রেস্তোরাঁ এসব পেঁয়াজ কিনে নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কয়েকজন ফেরিওয়ালা।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে মিয়ানমারের পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকায়, চীনা পেঁয়াজ ৩০-৩৫ টাকা, তুরস্কের পেঁয়াজ ২৫-৩০ টাকা এবং পাকিস্তানী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা। অন্যদিকে দেশী পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়। ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে দেশে তাহেরপুরী, বারি-১ (তাহেরপুরী), বারি-২ (রবি মৌসুম), বারি-৩ (খরিপ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরী পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। ফলে বছরজুড়েই কোনো না কোনো জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। আর আমদানি করা হয় বাকি চার লাখ টন। মূলত এই আমদানিকৃত চার লাখ টন পেঁয়াজ বাজারের ওপর খুব বড় প্রভাব ফেলে।
হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস দৈনিক আজাদীকে বলেন, পেঁয়াজের বাজারে বলতে গেলে ধস হয়েছে। বেশিরভাগ ব্যবসায়ীরা পুুঁজি হারানোর অবস্থা। শত শত টন পেঁয়াজ ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হয়েছে। অনেক দেশ নিম্নমানের পেঁয়াজ পাঠিয়েছে। অনেক পেঁয়াজ অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় গেজ উঠে গেছে। অতিরিক্ত আমদানি হওয়ায় পেঁয়াজের বাজারে এমন ধস হয়েছে। এদিকে পাইকারীতে কমলেও তার কোনো প্রভাব নেই খুচরা বাজারে। নগরীর কাজীর দেউরি এলাকার বিক্রেতা মো. মিজানুর রহমান জানান, বর্তমানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। তবে বিভিন্ন জায়গায় খারাপ মানের পেঁয়াজ আরো কম দামেও বিক্রি হতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ১৪ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করেই ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। রপ্তানি বন্ধের জেরে দেশের বাজারে হু হু বেড়ে যায় পেঁয়াজের বাজার। এর আগে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর দেশের বাজারে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত। সেই সময় দুই দফায় পেঁয়াজের দাম দ্বি-শতক পেরিয়ে যায়। পরবর্তীতে পেঁয়াজ আমদানিকারকরা মিয়ানমার, চীন, মিশর, পাকিস্তান, তুরস্কের মতো দেশগুলোতে পেঁয়াজ এনে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন। এবারও একইভাবে আমদানিকারকরা শত শত টন পেঁয়াজ এনেছেন। তবে গতবার মিয়ানমার থেকে স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হলেও এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েই আসছে মিয়ানমারের পেঁয়াজ।