পাইকারি বাজারে পানির দর, খুচরাতে কয়েকগুণ

শীতকালীন সবজি

চন্দনাইশ প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ

চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলাবাসীর জন্য আশীর্বাদ শঙ্খনদী। নদীর চর ও তীরবর্তী অঞ্চলে পুরো বছর জুড়েই চাষ হয় নানা প্রজাতির সবজি। এসব বিক্রি হয় দোহাজারী পৌরসভার রেলওয়ে স্টেশন ময়দানে বসা দক্ষিণ চট্টগ্রামের বৃহত্তম সবজির পাইকারি বাজারে। শঙ্খনদী তীরবর্তী ইউনিয়নগুলোর কয়েক হাজার কৃষক প্রতিদিন তাদের ক্ষেতে উৎপাদিত সবজি এই পাইকারি বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। কিন্তু উৎপাদিত সবজির ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না এখানকার কৃষকরা। পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, এখানে মধ্যস্বত্বভোগী ফাঁড়িয়াদের বেধে দেয়া দামেই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এখানে সবজি সংরক্ষণে কোনো হিমাগার না থাকায় ক্ষেত থেকে তোলা সবজি দিনেরটা দিনেই বিক্রি করে দিতে হয়। আর কৃষকদের অসহায়ত্বের এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ফাঁড়িয়ারা ঠিক করে কোন দিন কোন দামে সবজি ক্রয় করবে। এতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদনকারী কৃষক বঞ্চিত হয় ন্যায্যমূল্য থেকে। মাঝখানে মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা হাতিয়ে নেয় বিশাল অংকের অর্থ। পাইকারি বাজারে সবজির দাম যেনতেন হলেও এখান থেকে মাত্র ঢিল ছোঁড়া দূরত্বের কাঁচাবাজার দোহাজারী হাজারী বাজারে সবজির দাম হয়ে যায় অনেকটা নাগালের বাইরে। সরকারের পক্ষ থেকে পাইকারি ও খুচরা বাজারের মধ্যে মূল্য নিয়ন্ত্রণের তদারকি না থাকার সুযোগে খুচরা বিক্রেতারা নিজেদের ইচ্ছেমতো দামে এসব সবজি বিক্রি করছে ভোক্তাদের কাছে। পাইকারি বাজারে উৎপাদিত সবজির যথাযথ দাম না পেয়ে কৃষকরা যখন হতাশার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে ঠিক সে সময় খুচরা বিক্রেতারা ভোক্তাদের কাছ থেকে আদায় করছে দ্বিগুণেরও বেশি দাম। পাইকারি বাজার ঘুরে এবং কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল বুধবার পাইকারি বাজারে সবজির মধ্যে ভাল মানের প্রতি কেজি বেগুন ২০ থেকে ২২ টাকা, মুলা ১৫ থেকে ২০ টাকা, শিম ২০ থেকে ২৫ টাকা, ফুলকপি ৩০ থেকে ৩২ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি পিস ১৮ থেকে ২০ টাকা, মিষ্টি লাউ প্রতি পিস ২৫ থেকে ৩০ টাকা, বাংলা লাউ ২০ থেকে ২৫ টাকা, ধনেপাতা ৫ থেকে ১০ টাকা কেজি, কাঁচা মরিচ ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করতে পেরেছেন। কিন্তু একইদিন দোহাজারী সদরের হাজারী বাজারে খুচরা বিক্রেতারা এ সবজিগুলো বিক্রি করেছে প্রতি কেজি বেগুন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, মুলা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, ফুলকপি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি পিস ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, মিষ্টি লাউ প্রতি পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বাংলা লাউ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ধনেপাতা ২০ থেকে ২৫ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪০ টাকা। একইভাবে যত দূরের বাজারে এসব সবজি নেয়া হয় সেখানে দামের পার্থক্যও সেভাবে বেড়ে যায়।
দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশন ময়দানের পাইকারি বাজারে ভোর ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত বেচাকেনা চললেও খুচরা বাজারে সারাদিনই বেচাকেনা চলে। সরকারি বিধি মোতাবেক প্রতিটি পণ্যের দৈনিক বিক্রয়মূল্য নোটিশ বোর্ডে টানিয়ে দেয়ার নিয়ম থাকলেও কোনো বাজারেই তা দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনো নজরদারিও নেই বলে জানান ভোক্তারা।
রেলওয়ে স্টেশন ময়দানের পাইকারি বাজারে সবজি বিক্রি করতে আসা কৃষক মো. কামাল উদ্দিন, কালু মিয়া, আহমদ নবী, মোস্তফা জামান, মোজাম্মেল হকসহ আরো অনেকেই অভিযোগ করেন- পাইকাররা সকালে এসে আগে নিজেরাই ঠিক করে নেয় কোন সবজি কোন দামে কিনবে। তারপর তাদের নির্ধারণ করা দামেই তারা সবজি কিনে নেয়। সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরাও পাইকারদের বেধে দেয়া দামে উৎপাদিত সবজি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম জানান, প্রতিটি হাটবাজারে পণ্যের মূল্য তালিকা টানানো ব্যাপারে ইতিমধ্যে বাজার সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে এবং তদারকি জোরদারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচাকরি পাচ্ছেন ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাওয়া সেই যুবক
পরবর্তী নিবন্ধগাড়ি চালকের বেশে মাদক ব্যবসা