পাঁচ প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত

| রবিবার , ১৮ জুলাই, ২০২১ at ৬:৫৩ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য জারি করা হয়েছে লকডাউন। কয়েক দিন শিথিলতার পর আগামীতেও এই লকডাউন আসতে পারে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। বিধিনিষেধের মধ্যে কাজ হারিয়ে সংকটে পড়া নিম্ন আয়ের মানুষের সহায়তায় সম্প্রতি ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার পাঁচটি নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রণোদনাগুলোর মধ্যে রয়েছে, ১. নিম্ন আয়ের ১৭ লাখ ২৪ হাজার ৪৭০ জন শ্রমজীবী মানুষ এই প্যাকেজের আওতায় নগদ আড়াই হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা পাবেন। সেজন্য বরাদ্দ থাকছে মোট ৪৫০ কোটি টাকা। উপকারভোগীদের মধ্যে ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ৩৮৯ জন দিনমজুর, ২ লাখ ৩৫ হাজার ৩৩ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫০ হাজার ৪৪৫ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং ১ হাজার ৬০৩ জন নৌ পরিবহন শ্রমিক রয়েছেন। ২. শহর এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষের সহায়তায় ২৫ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত ১৪ দিন সারা দেশে ৮১৩টি কেন্দ্রে বিশেষ ওএমএস কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এর আওতায় দেওয়া হবে ২০ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ১৪ হাজার মেট্রিক টন আটা। সেজন্য এ প্যাকেজে বরাদ্দ করা হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। ৩. জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৩৩৩-এ ফোন করলে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার যে ব্যবস্থা চালু আছে, তা অব্যাহত রাখতে জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে ১০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৪. গ্রামীণ এলাকায় কর্মসৃজনমূলক কার্যক্রমে অর্থায়নের জন্য পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক ও পিকেএসএফের মাধ্যমে ঋণ সহায়তা দিতে এর আগে বরাদ্দ ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত হিসেবে আরও ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই ঋণের জন্য সুদের হার আগের মতোই ৪ শতাংশ হবে। ৫. পর্যটন খাতের হোটেল/মোটেল/থিম পার্কগুলো যাতে তাদের কর্মচারীদের বেতন/ভাতা পরিশোধ করতে পারে, সেজন্য ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে ৪ শতাংশ সুদে তাদের ‘ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল’ যোগাতে ঋণ দেওয়া হবে। সেজন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১ হাজার কোটি টাকা।
বিভিন্ন বেসরকারি জরিপের তথ্যানুযায়ী, কোভিডে ক্ষতিগ্রস্তসহ দেশে মোট দরিদ্র মানুষের সংখ্যা এখন ছয় কোটি ছাড়িয়ে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের এক হিসাব মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে আর্থিক দিক থেকে নাজুক অবস্থায় রয়েছে ৯ কোটি মানুষ। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নাজুক পরিস্থিতির শিকার। এই অবস্থায় মাত্র ১০ বা ২০ লাখ মানুষের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা আদৌ তেমন কাজে আসবে কি না ভেবে দেখা দরকার বলে কেউ কেউ অভিমত দিয়েছেন। তারপরও অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্যাকেজকে স্বাগত জানিয়েছেন একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবে। আমরাও মনে করি, শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য নতুন করে এ পাঁচ প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এর যথাযথ বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করি। কেননা আমরা জানি, করোনা মহামারির কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষরা। সরকারের পক্ষ থেকে যাবতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও এর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছুটা ঘাটতি দেখা দেয়। কারণ দেশে নাগরিকদের আয়ভিত্তিক সঠিক ডাটাবেজ না থাকায় নিম্ন আয়ের সব মানুষ সহায়তার আওতায় আসে না। গত বছর স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে তালিকা তৈরির চেষ্টা করা হয়। অভিযোগে প্রকাশ, সেসময় একটি অংশের অসততার কারণে যাদের সহায়তা পাওয়া উচিত, তাদের অনেকে সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়। তাই সরকারের জরুরি পদক্ষেপকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি বণ্টন ব্যবস্থার দিকেও দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন বলে মনে করি। তাহলে প্রকৃত দুস্থ ও দরিদ্ররা বাস্তবে কতটা সহায়তা পেলো, তার হিসাব নিরূপম সহজ হবে। এর বাইরেও কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সেটা হলো- সরকারি সহায়তা যাদের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে কার্যকর করা হয় তারা কতটা বিশ্বস্ত, কতটা আন্তরিক ও কতটা সৎ- তা বিবেচনায় রাখা দরকার। বিশেষজ্ঞরা সমপ্রতি প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি নিয়ে যে কেলেঙ্কারি ঘটেছে, তার উদাহরণ দিয়ে তেমনটা যেন প্রণোদনা বিতরণ নিয়ে না ঘটে, সে-ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেছেন, করোনায় দারিদ্র্য বেড়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতির কবে অবসান হবে, তাও অজানা। তাই দরিদ্রদের সহায়তার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা দরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে