পাঁচ দপ্তরের প্রতিনিধি নিয়ে কমিটি

চমেকে রাসায়নিক গোডাউন অপসারণ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৯ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৫:৩২ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পুরনো ফার্মাকোলজি ভবনে দীর্ঘ সময় ধরে পড়ে থাকা এসিড ও রাসায়নিকের মতো দাহ্য পদার্থের গোডাউনটি (স্টোর রুম) অপসারণে ৫ দপ্তরের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে চমেক প্রশাসন। ৬ সদস্যের এ কমিটি গঠনের তথ্য নিশ্চিত করেছেন চমেক অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা উপাধ্যক্ষ ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ। চমেক, পুলিশ, বিস্ফোরক পরিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত এ কমিটি দীর্ঘ প্রায় ৬০ বছর ধরে তালাবদ্ধ গোডাউনে থাকা অব্যবহৃত রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থ অপসারণে কাজ করবে। চমেক প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে-চমেকের ফার্মাকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সেফা সারওয়াত আলমকে এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে।
কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সিএসবি শাখার সহকারী পুলিশ কমিশনার আতিক আহমেদ চৌধুরী, বিস্ফোরক পরিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের বিস্ফোরক পরিদর্শক মো. তফাজ্জল হোসেন, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স (চট্টগ্রাম জোন-২) এর উপসহকারী পরিচালক ফরিদ আহাম্মদ চৌধুরী। আর কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে আছেন চমেকের ফার্মাকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মাসুদ রানা।
গঠনের পর গত ৬ ডিসেম্বর প্রথম সভা করে ৬ সদস্যের এ কমিটি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের একজন শিক্ষককে কমিটিতে কো-অপ্ট করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় সভায়। এ তথ্য নিশ্চিত করে কমিটির আহ্বায়ক ও চমেক ফার্মাকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সেফা সারওয়াত আলম আজাদীকে বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে একজন প্রতিনিধির নাম চেয়ে চবির রসায়ন বিভাগে আমরা চিঠি দিয়েছিলাম। তারা (চবির রসায়ন বিভাগ) কয়েকদিন আগে ফিরতি চিঠির মাধ্যমে প্রতিনিধি হিসেবে একজন শিক্ষকের নাম পাঠিয়েছেন। প্রতিনিধির নাম পাওয়ায় আগামী ২৬ ডিসেম্বর আমরা আবার সভা ডেকেছি। সভায় করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান কমিটির আহবায়ক ডা. সেফা সারওয়াত আলম।
উল্লেখ্য, কলেজের নতুন দশতলা একাডেমিক ভবনটির সাথে লাগোয়া পুরনো দুতলা একটি ভবন রয়েছে। চমেক হাসপাতালের সম্মুখ অংশে এ ভবনটি ফার্মাকোলজি ভবন নামেই পরিচিত। যা এখন জরাজীর্ণ ও অকেজো প্রায়। ভবনটির দুতলায় ফার্মাকোলজি বিভাগের স্টোর রুমে এসব দাহ্য পদার্থ তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। অবশ্য, ফার্মাকোলজি বিভাগটি বেশ কয়বছর আগে সেখান থেকে নতুন একাডেমিক ভবনে স্থানান্তরিত হয়েছে। তবে স্টোর রুমটি আগের মতোই তালাবদ্ধ রয়েছে। এই স্টোর রুমেই বছরের পর বছর ধরে এসব দাহ্য পদার্থ মজুদ আছে। যার কারণে স্টোর রুমটিকে রাসায়নিকের ‘বিপজ্জনক’ গোডাউন হিসেবে অভিহিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সেখানে কি কি রাসায়নিক আছে এবং কি পরিমানে আছে, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। এ নিয়ে গত ২ নভেম্বর দৈনিক আজাদীর প্রথম পাতায় ‘হাসপাতালের সামনেই রাসায়নিকের গুদাম/চমেকের একটি ভবনে বিপজ্জনক দাহ্য পদার্থ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সুনির্দিষ্ট ভাবে বলতে না পারলেও স্টোর রুমটিতে এসিড, এলক্যালি ও রি-এজেন্টসহ বিভিন্ন রাসায়নিক (দাহ্য পদার্থ) থাকতে পারে বলে জানান চমেকের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর।
ওই প্রতিবেদনে ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, মেডিকেল কলেজের জন্মলগ্নে ফার্মাকোলজি বিভাগের ব্যবহারিক ও ল্যাবরেটরিতে ব্যবহারের জন্য এসব দাহ্য পদার্থ কেনা হয়ে থাকতে পারে। তখন কেনা হলেও এসব দাহ্য পদার্থ হয়তো ব্যবহার হয়নি। যার কারণে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে ছিল। এসব অব্যবহৃত রাসায়নিক বর্তমানে বিপজ্জনক অবস্থায় থাকতে পারে বলে মনে করছেন চমেক প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা। পরবর্তীতে এসব রাসায়নিক ও দাহ্য পদার্থ অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছে চমেক প্রশাসন। স্টোর রুমটিতে কি কি এবং কি ধরণের রাসায়নিক রয়েছে তার তালিকা চেয়ে ফার্মাকোলজি বিভাগে আগেই চিঠি দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে দীর্ঘ সময় ধরে তালাবদ্ধ থাকা রুমটিতে কি কি রয়েছে, তার সঠিক তথ্য দিতে পারেনি ফার্মকোলজি বিভাগ। প্রতিত্তোরে কলেজ অধ্যক্ষ বরাবর প্রদত্ত চিঠিতে ফার্মাকোলজি বিভাগ জানিয়েছে-স্টোর রুমটি ১৯৬০ সাল থেকে তালাবদ্ধ। পরবর্তীতে এ তালা আর কখনো খোলা হয়নি। আর ওই সময়ে (১৯৬০ সালের আগে) স্টোর রুমে কি কি ছিল, তার রেজিস্ট্রারেরও হদিস পাওয়া যায়নি। যার কারণে রুমটিতে কি কি রয়েছে, তার সঠিক তথ্য বিভাগে নেই। স্টোর রুমে মজুদ থাকা রাসায়নিক (ক্যামিকেল) সংক্রান্ত তথ্য না পাওয়ায় রুমটির তালা খোলাটাও এখন ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে কলেজ প্রশাসন। ফলে এ বিষয়ে করণীয় ও মতামত জানতে চেয়ে ৫টি দপ্তরে চিঠি দেয় চমেক কর্তৃপক্ষ। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিস্ফোরক পরিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর ও গণপূর্ত বিভাগকে এ চিঠি দেয়া হয়। একই সাথে একটি কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একজন করে প্রতিনিধির নাম পাঠাতে অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।
এসব দপ্তর থেকে ফিরতি চিঠিতে প্রতিনিধির নাম পাওয়ার পর অব্যবহৃত অবস্থায় থাকা এসব রাসায়নিক অপসারণে প্রাথমিক ভাবে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান চমেকের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ। কমিটি এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে বলেও জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুর্ঘটনায় শেষ স্বপ্ন
পরবর্তী নিবন্ধকরোনায় দেশে আরও ২৫ মৃত্যু