পহেলা বৈশাখ। বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখের প্রথম দিন। এ দিনটিকে আমরা বছরের দিন বলতাম। এই বছরের দিনের জন্য এক সপ্তাহ আগে থেকে প্রস্তুতি চলতো। ঘরদোর পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে সব আবর্জনা ধুয়ে ফেলা। এমনকি রান্নাঘরের পিঁড়িও বাদ যেতো না। এ ধোয়ার মধ্য দিয়ে যেনো মনে হতো সব অশুভ ধুয়ে ফেলেছি। বছরের দিন আসবে আসবে এই খুশিতে আমরা নতুন জামা সেলাই করতাম। এই দিনে নতুন জামা পরে ভালো ভালো খাওয়া দাওয়া করতাম। মন্দ কাজ করতাম না। মিথ্যা কথা বলতাম না। কারণ, তখন আম্মা আমাদেরকে বলতেন, বছরের দিন যা করবো, সারাবছর আমাদের সেইভাবেই কাটবে। তখন আরেকটা কাজ আমরা করতাম। এটা কুসংস্কার কিনা জানি না। আমরা পুকুরে ডুব দিয়ে কাফিলা গাছের সবুজ রঙের একটি গোটা খেতাম। বছরের দিনে এই গোটা বা ফলটি খেলে নাকি সারা বছর কোনো খোস পাঁচড়া হবে না। আমরা অন্ধবিশ্বাসে তাই করতাম।
বছরের দিনের আরেকটি ঐতিহ্য ছিলো মেলা। আমরা বলতাম পরব। পরব তিনদিন হতো। এ পরব ছিলো অনেক উৎসবমুখর এবং আনন্দদায়ক। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই এ পরবে আনন্দ উপভোগ করতো। আমরা আব্বার কনিষ্ঠা আঙুল ধরে হেঁটে হেঁটে পরবে যেতাম। হরেক রকম জিনিষের সাথে পরিচিত হতাম। নাগরদোলায় চড়ে প্রথমে ভয় পেলেও, পরে আনন্দ পেতাম। পুতুল নাচ দেখতাম। মাটির তৈরি পুতুল, ঘোড়া এসব কিনতাম। মিষ্টি জাতীয় খেজুরি, জিলাপী, আঙুলি কিনে খেতে খেতে বাড়ি ফিরতাম। সত্যিই বাঙালির মনের উৎসব, প্রাণের উৎসব এই পহেলা বৈশাখ। চির জাগরুক থাকুক বাঙালির হৃদয়ে।